বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও মর্যাদা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও মর্যাদা !

জীবনের স্রোতোধারার অনিবার্য সঙ্গী হলো মানবজাতি ৷ 'নর' এবং 'নারী' মানবজাতির এই জীবনধারাকে প্রবাহমান গতি দিয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মানব আদমের যুগ থেকে ৷ বর্তমান বিশ্বের ৬১০ কোটি মানুষ যুগ-যুগান্তের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এখন ৷ মানুষ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ একটি বক্তব্য প্রায় সবারই জানা, তাহলো-‘মানুষ হলো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী' ৷ সত্যিই এই বিচারবোধই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলেছে ৷ সেজন্যে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত জীবন যাপন না করে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ৷ যুগে যুগে আল্লাহ প্রেরিত রাসূলগণই এই পরিবার গঠনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ৷ সুশৃঙ্খল এই পারিবারিক কাঠামো থেকেই মানুষ পেয়েছে সভ্যতার আলো ৷ পরিবার কাঠামোর সাথে সভ্যতা যেন নিত্যসঙ্গী ৷ যেখানে পরিবার কাঠামো নেই, সেখানে সভ্যতা বলতে যা বোঝায়, তার সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাপন পদ্ধতির খুব বেশী পার্থক্য নেই ৷ নারী এবং পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে পরিবার ৷ এই 'সম্মিলিত' শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক অবদান এবং অধিকারের সূক্ষ্ম বিষয়৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী-পুরুষের অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগত মতবাদ বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছে ৷ সেসব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একমাত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদই নারীকে কখনো ভোগ্যপণ্যে কিংবা কখনো পুরুষ দেবতার সেবাদাসীতে পরিণত করেছে৷ সভ্যতার এই স্বর্ণযুগেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার নিয়ে এখনো চলছে বিচিত্র কৌণিক মতামত ৷     পশ্চিমা সমাজে পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত লিভিং টুগেদার বা নারী-পুরুষের একত্রবাস প্রথা চালু রয়েছে ৷ এছাড়া বিয়ের প্রচলন সেখানে যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার প্রশ্নে মতবিরোধের জের ধরে ডিভোর্সের মাত্রাই ব্যাপক ৷ যে সমাজে লিভ-টুগেদারের জন্যে বিয়েরই প্রয়োজন নেই, সে সমাজে ডিভোর্স বা তালাক প্রদানের মাত্রা যে কতো মামুলি ও ভয়াবহ, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায় ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মানদন্ডে পশ্চিমা জগত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার হলেও ক্ষয়িষ্ণু পরিবার কাঠামোর ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্বব্যাপী অকল্যাণই বয়ে এনেছে ৷ তাদের ঐ কু-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে মুসলিম জাতির মধ্যেও তা এখন সংক্রমিত হচ্ছে ৷ এরফলে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ব্যাপক বেড়ে গেছে ৷ অথচ পরিবারের প্রধান যে দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রী-তাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক কর্তব্যবোধ স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকতো, তাহলে এই সমস্যা হয়তো দেখাই দিত না ৷ বহু শিক্ষিত পরিবারেও যথার্থ ইসলামী শিক্ষার অভাবে এ ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে ৷ শিক্ষিত এইসব পরিবার তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করে থাকে পাশ্চাত্যের মানদন্ডে, যেখানে নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে যাপন করছে পশুর মত জীবন ৷ তাই মুসলিম দম্পতিদের উচিৎ তাদের নিজস্ব ধর্মাদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারস্পরিক কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং যথাযথভাবে তা মেনে চলা ৷ তাহলেই দেখা যাবে সংসার হয়ে উঠেছে শান্তির সোনালী নীড়।     একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন এবং পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ স্থাপন করেছে ৷ ইসলাম পূর্বকালে নারীকে মানুষই মনে করা হতো না ৷ গ্রীকরা তাদেরকে মনে করতো শয়তানের চর ৷ জৈবিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই তাদের ব্যবহার করা হতো ৷ রোমানদের অবস্থাও ছিল তাই ৷ সেখানে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করা হতো ৷ জাহেলিয়াতের যুগে আরবে কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ইতিহাস সর্বজনবিদিত ৷ পারস্য সভ্যতায়ও কন্যাসন্তানকে ভীষণরকম অকল্যাণকর বলে মনে করা হতো ৷ চীনের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দুঃখ ও সহানুভূতি জানাতো ৷ অর্থাৎ নারী ছিল একটা ভোগ্যপণ্য ৷ তাদের ব্যক্তিগত কোন মানবিক সত্ত্বাই স্বীকার হতো না ৷ আর হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মৃত ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়ে মারতো ৷ এরকম করুণ একটা ঘটনাকে তারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও ত্যাগের নিদর্শন বলে মনে করতো ৷ কী আশ্চর্য, বিধবাকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, দিয়েছিল চিতার আগুনে জীবন্ত পোড়াবার নির্দেশ ! এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিচিত্র উপায়ে নারীদের সত্ত্বাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল ৷ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ফলে নারী পেল তার মৌলিক মানবিক অধিকার । নবী করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের উপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে ৷" আল্লাহ রাববুল আলামীন বললেন, নারীরা তোমাদের পোষাক এবং পুরুষরাও নারীদের পোষাকস্বরূপ ৷ যুগান্তকারী এইসব ঘোষণার মাধ্যমে নারী ফিরে পেল তাদের অধিকার, ফিরে পেল মানুষ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাও হয়ে উঠলো সভ্যতা সৃষ্টির প্রশংসিত স্রষ্টাদের গর্বিত অংশীদার ৷ কবি নজরুলের ভাষায়-
পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর