গরু মূল্যবান সম্পদ। মানুষের পোষা জীবজন্তুর মধ্যে গরু সবচেয়ে উপকারী। দুধ, গোশত ও চামড়াজাত পণ্য ছাড়াও চাষাবাদ, গাড়িটানা ও অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে এখনও গরুর বিকল্প মেলা ভার।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গুজরাট রাজ্য সরকার মুসলমানদের গরুর মাংস খেতে নিরুৎসাহিত করে বিলবোর্ড টাঙিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ক্ষমতাসীন। এ রাজ্যের আহমেদাবাদে ওই বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
সেখানে লেখা হয়েছে, গরুর মাংস খেলে রোগ হতে পারে।
লেখা হয়েছে, গরুর মাংস খেলে রোগ হতে পারে |
কোনো কোনো বিলবোর্ডে আবার দাবি করা হয়েছে-
‘কোরআন বলছে গরুর মাংস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’
তবে মুসলিম নেতারা বলছেন, পবিত্র কোরআনে এ ধরনের কোনো আয়াত নেই।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম বোর্ডের সদস্য মুফতি আহমেদ দেভালভি বলেন,
ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো গরু জবাই নিষিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে। তবে গত বছরের মে মাসে বিজেপি কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরু রক্ষা আন্দোলন আরো জোরদার হয়েছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত ভারতের কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাই বন্ধ এবং মাংস বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ বিলবোর্ডের কঠোর সমালোচনা করে আহমেদাবাদের প্রধান মসজিদের ইমাম সাব্বির আলম বলেছেন, ‘এতে দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে।’
‘পবিত্র কোরআনে আমি এ ধরনের কোনো আয়াত পাইনি।’
পবিত্র কোরআন অনুসারে কোরবানীর ইতিহাস :
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে অনেকবার পরীক্ষা করেছেন। সকল পরীক্ষায় তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। একরাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহপাক তাকে ইঙ্গিত করেছেন প্রাণধিক পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করতে। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর অপেক্ষা অধিকতর প্রিয় আর কি হতে পারে। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করবেন। তখন তিনি হযরত ইসমাঈল (আঃ) বললেন, যা পবিত্র কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?” সে (হযরত ইসমাঈল (আঃ)) বলল, “হে পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা সফফাত আয়াত-১০২)। ছেলের সাহসিকতাপূর্ণ জবাব পেয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) অত্যন্ত খুশি হলেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ছেলের গলায় ছুরি চালান। তখন হযরত জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত হতে একটা দুম্বা নিয়ে রওয়ানা হলেন। তার মনে সংশয় ছিল পৃথিবীতে পদার্পণের পূর্বেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যবেহ কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলবেন। তাই জিবরাইল (আঃ) আকাশ হতে উচ্চৈস্বরে ধ্বনি দিতে থাকেন “আল্লাহু আকবার”। আওয়াজ শুনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার”। পিতার মুখে তাওহীদের বাণী শুনতে পেয়ে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেন আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিলহামদ”। আল্লাহর প্রিয় দুই নবী এবং হযরত জিবরাইল (আঃ)-এর কালামগুলো আল্লাহর দরবারে এতই পছন্দনীয় হলো যে, কিয়ামত পর্যন্ত এই কথাগুলো ৯ই জিলহজ্ব ফজর থেকে আসর পর্যন্ত বিশেষ করে ঈদুল আযহার দিনে বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকবে।
আল্লাহপাকের অসীম কুদরতে হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে কোরবানী হয়ে গেল একটি বেহেস্তী দুম্বা। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কালামে ঘোষণা করেনঃ “তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার (ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে দিলাম জবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু।” (সূরা সাফফাত আয়াত-১০৪-১০৭)। বর্ণিত আছে যে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) উপরোক্ত গায়েবী আওয়াজ শুনে হযরত জিবরাইল (আঃ)কে একটি বেহেস্তী দুম্বাসহ দেখতে পান। এ জান্নাতী দুম্বা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে দেয়া হলে তিনি আল্লাহর নির্দেশে পুত্রের পরিবর্তে সেটি কোরবানী করলেন। আর তখন থেকেই শুরু হলো কোরবানীর মহান বিস্ময়কর ইতিহাস। যা অনন্তকাল ধরে সুন্নতে ইব্রাহীম হিসেবে বিশ্বের সকল মুসলমানের কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
বনি ইসরাইল হজরত মুসা (আ.) এর উম্মত। তারাই আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি করুণা পেয়েছেন। এমনকি তাদের জন্য আল্লাহ বেহেশত থেকে খাবারও পাঠিয়েছেন। তাদের হেদায়েতের জন্য সবচেয়ে বেশি নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। কিন্তু মুষ্ঠিমেয় লোক ছাড়া বেশিরভাগই অবিশ্বাসী ছিল। সেই অবাধ্য বনি ইসরাইলদেরই যখন আল্লাহ আদেশ করলেন একটি গরু কোরবানি করতে, তখন মুখে ‘না’ শব্দটি না বললেও অযথা নানা প্রশ্ন ছুঁড়তে শুরু করে যাতে কোরবানি না করতে হয়। কেমন গরু, রঙ কী, বয়স কত? ইত্যাদি সব প্রশ্ন। মহান আল্লাহও তাদের প্রশ্নের বিপরীতে বলেছেন, গরু অবশ্যই মধ্যবয়সী ষাঁড় হতে হবে। যে গরু কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়নি, রোগমুক্ত ও নিখুঁত। বুড়ো বা বাছুর চলবে না। গরুর রঙ হবে গাঢ় পীতবর্ণের, যা সবার কাছে পছন্দনীয়। সূরা বাকারার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াতে এর বিস্তর বিবরণ রয়েছে।
কোরবানির পশু হিসেবে গরু : পবিত্র কোরআন ও হাদিসে গরুকে উটের সঙ্গে
তুলনা করে কোরবানির উট ও গরুতে সাত শরিক হওয়ার কথা প্রমাণিত রয়েছে। জাবের (রা.) বলেন,
‘আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে বের হলাম। তিনি আমাদের আদেশ করলেন
যেন আমরা প্রতিটি উট ও গরুতে সাতজন করে শরিক হয়ে কোরবানি করি।’ (মুসলিম)। হজরত আয়েশা
(রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কোরবানি করেছেন।’
(বোখারি, মুসলিম)।
বাংলাদেশে কোরবানির
পশু হিসেবে গরুই সহজ ও সুলভ। ষাঁড়, বলদ, গাভি সবকিছুই কোরবানির উপযুক্ত। দুই বছর বয়স
হলেই গরু কোরবানি করা যায়। ষাঁড় অত্যন্ত দামি পশু। বিপুল দামে কৃষক তা বিক্রি
করে এবং ক্রেতারা ক্রয় করে তা আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানি করেন।
সনাতন শাস্র সামবেদের একটি উদৃতি :
সামবেদে মুহাম্মদের (দঃ) পরিচয় বর্ণনা করে বলা হয়েছে - যার নামের প্রথম অক্ষর 'ম' এবং শেষ অক্ষর 'দ' হবে এবং গো মাংস খাওয়ার আদেশ দিবেন, সেই দেবতাই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় দেবতা।
"মদৌ বর্তিতা দেবা দকারান্তেপ্রকৃত্তিতা।
বৃষানাং বক্ষয়েত্ সদা মেদাশাস্ত্রেচস্মৃতা \\"
অর্থঃ "যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর"ম" ও শেষ অক্ষর "দ" এবং
যিনি বৃষমাংস (গরুর মাংস) ভক্ষণ সর্বকালের জন্য পুনঃ বৈধ করিবেন,
তিনিই হইবেন বেদানুযায়ী ঋষি।"
গরুর মাংসের বিষয়ে বিজ্ঞান :
আমাদের শরীরের
জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে।এগুলো হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন
বি১২, সেলেনিয়াম,ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন। প্রোটিন শরীরের
পেশী গঠনে ভূমিকা রাখে, জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফসফরাস দাত ও হাড়ের শক্তি
বাড়ায়, আয়রন শরীরের পেষি গুলোতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়ত করে এবং ভিটামিন বি১২ খাদ্য
থেকে শক্তি যোগান দেয়।
বর্ধনশীল বাচ্চা
বা টিনএজার দের সমর্থ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে গরুর মাংসের তুলনা নেই।তবে বয়স্কদের
যারা কায়িক পরিশ্রম করেন না,যাদের ডায়বেটিশ ও হার্টের সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ
মতে খেতে পারেন।অর্থাত বয়স্কদের খেতে হবে বুঝে শুনে ।
1 টি মন্তব্য:
এক মত হতে পারলাম না
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন