বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কাবা শরীফ ও কাবার দূর্লভ ছবি

কাবা শরীফ
(আরবি: الكعبة al-Ka‘bah;আরও যে নামে পরিচিত al-Kaʿbatu l-Mušarrafah (الكعبة المشرًّفة), al-Baytu l-ʿAtīq (البيت العتيق "The Primordial House"), অথবা al-Baytu l-arām (البيت الحرام "The Sacred House"), একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। আসলে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি।
কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি
প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতগাহ রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ওই ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, চতুর্থ আকাশে বা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আকরিক পাথর দ্বারা নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে যার নাম বাইতুল-ইজ্জত  যাকে বাইতুল মামুরও বলা হয়। এটি কাবা শরীফের বরাবরে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতগাহ। ফেরেশতারা এখানে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মগ্ন থাকে। মুসলিম তথা মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তখন আল্লাহ্ পাকের হুকুমে ফেরেশতারা বাইতুল মামুরের  নকশা পৃথিবীর মধ্যস্থলে ফেলে দেন। হজরত আদম (আ.)-এর ছেলে হজরত শীষ (আ.) ওই নকশার উপর ভিত্তি করে ওই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই আমাদের বাইতুল্লাহ  বা আল্লাহর ঘর।

ইসলাম ধর্ম মতে কাবা কে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পরে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ পরেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করেন।

অবস্থান এবং বাস্তবিক কাঠামো

কাবা একটি বড় পাথরের কাজ করা কাঠামো যার আকৃতি প্রায় একটি ঘনক এর মত। কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকা'আব অর্থ ঘন থেকে। এটি কাছের পাহাড়ের গ্রানাইট দ্বারা তৈরি যা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫সেঃমিঃ (১০ ইঞ্চি) মার্বেল পাথরের ভিত্তির উপর যা বাইরের দিকে ৩০সেঃমিঃ (১ ফুট) বাড়িয়ে আছে। কাঠামোতে জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৩.১০ মিঃ (৪৩ ফুট) উচ্চতা, পাশাপাশি ১১.০৩ মিঃ X ১২.৬২ মিঃ চারটি কোন কম্পাসের প্রায় চার বিন্দু বরাবর মুখ করা। কাবার পূর্ব কোনা হচ্ছে রুকন-আল- আসওয়াদ" (কাল পাথর অথবা "আল-হাজারুল-আসওয়াদ"), একটি উল্কাপিন্ডের অবশেষ; উত্তর কোনা হল "রুকন-আল-ইরাকী" (ইরাকী কোণ); পশ্চিমে রয়েছে "রুকন-আল-সামী" (পূর্ব-ভূমধ্য সাগরীয় কোণ) এবং দক্ষিণে "রুকন-আল-ইয়ামানী" ('ইয়েমেনী কোণ')।

অজানা সালের কাবা শরীফের নকশা
কাবা শরীফের গিলাফ একটি বস্ত্রখণ্ড যদ্দ্বারা কাবাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমী কাপড় নির্মিত, যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ", "আল্লাহু জাল্লে জালালুহু", "সুবহানাল্লাহু ওয়া বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম" এবং "ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান"। ১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১ খণ্ড বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। চার কোণায় সুরা ইখলাস স্বর্ণসূত্রে বৃত্তাকারে উৎকীর্ণ করা হয়। রেশমী কাপড়টির নিচে মোটা সাধারণ কাপড়রের লাইনিং থকে।[ একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমী কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম এবং স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম। বর্তমানে এটি তৈরীতে ১৭ মিলিয়ন সৌদী রিয়াল ব্যয় হয়।
কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্রানুযায়ী নবী হযরত ইসমাঈল (আ.) প্রথম পবিত্র কারা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করেন। ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে যে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ব পুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবা শরীফকে প্রথম গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই সম্ভবতঃ পবিত্র কাবা শরীফ গিলাফ আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।

 প্রাচীণ কাবার ছবি
ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইয়াসরিব শহরে (অর্থাৎ, মদীনা শহর) হিজরতের ২২০ বৎসর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ এই শহরটিতে (ইয়াসরিব) আক্রমণ করেছিলেন।তুব্বা আবু কবর আসাদ ইয়াসরিব ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করত: মাথা মুণ্ডন করেন। অত:পর তিনি এই শহরে কয়েকদিন অবস্থান করেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ঘুমের মধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি কাবা শরীফ গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করছেন। এ স্বপ্ন দ্বারা প্রাণিত হয়ে অবিলম্বে "খাসাপ" দ্বারা কাবাঘরটি আচ্ছাদিত করেন। "খাসাপ" হচ্ছে তালগাছ জাতীয় গাছের পাতা ও আঁশের তৈরি এক ধরনের মোটা কাপড়। অনন্তর তিনি আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি আরো উন্নতমানের কাপড় দ্বারা কাবা শরীফ আচ্ছাদন করছেন। অত:পর তিনি খাসাপের পরিবর্তে মামিজিয়ান, পাপিরাস (মিশর দেশীয় নলখাগড়া বিশেষ পাতা) দ্বারা কাবা ঘর আচ্ছাদন করেন। ইয়েমেনের মামিজ নামক একটি উপজাতীয় গোত্র এই কাপড় তৈরি করতো। এরপরও তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বপ্নে আরো উন্নত মানের কাপড় দ্বারা কাবা আচ্ছাদনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তৃতীয় দফা স্বপ্নটির পর তিনি ইয়েমেনের লাল ডোরাকাটা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবা ঢেকে দিয়েছিলেন।
অজানা সালের কাবা শরীফ

সুন্দর কাপড়ের গিলাফ

তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আচ্ছাদন করতে থাকেন এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীব আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টি কিসওয়াহ নামে আখ্যায়িত। আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদী ১৬০ হিজরীতে পবিত্র হজ্ব পালনকালে পবিত্র কাবা থেকে একটি গিলাফ ছাড়া সবগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনো এই ধারাই অব্যাহত রয়েছে। ৭ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের আগে মুহম্মদ (সা:) গিলাফ পরানো শুরু করেননি। মক্কা বিজয়ের পর গিলাফ পরানোর সংস্কৃতি অব্যবাহত থাকে। বাদশাহ বাইবার্স হচ্ছেন পবিত্র কাবায় গিলাফ পরিয়ে দেয়া প্রথম মিশরীয় শাসক। তারপর ইয়েমেনের বাদশা আল মুদাফ্ফার ৬৫৯ হিঃ কাবা শরীফে গিলাফ পরান। পরবর্তীতে মিসরের শাসকরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ অব্যাহত রাখেন। বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। একই বৎসর মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে তা সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত করে কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরী পর্যন্ত এই কারখানাটি গিলাফ বা "কিসওয়াহ" তৈরি অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে ১৩৮১ হিজরীতে সৌদি হজ্জ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগর দ্বারা রেশমী ও সোনালী সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৩৮২ হিজরীতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ নতুন ডিক্রিজারির মাধ্যমে নতুন করে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমী রং এর সাথে কালো রং-এর কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালী আভায় উদ্ভাসিত।


গিলাফ পরিবর্তন

প্রতি বৎসর হজ্জের ঠিক আগে কাবা শরীফের গিলাফ সরিয়ে তা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। হাজীদের ইহরামের শ্বেতশুভ্রতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সাদা গিলাফ পরানো হয়। হজ্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ্জ তারিখে নতুন গিলাফ পরানো হয়। প্রতিস্থাপতি গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিলিয়ে দেয়া হয়।
হযরত নূহ (আঃ) এর সময় কা'বা শরীফের কিছূ অংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় । অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও উনার ছেলে হযরত ইসমাঈল (আঃ) আল্লাহর হুকুমে কাবা শরীফ পুনঃনির্মান করেন এবং এই জনহীন বিরান ভূমি আবাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করেন । এই কা'বা শরীফ পৃথিবীর প্রথম মসজিদ । আল-কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, -মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ নির্মিত হয়, তা মক্কায় অবস্হিত এবং এ গৃহ বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত ও বরকতের উৎস ।


১৭০০ সালের কাবা শরীফের ছবি

এ পবিত্র কাবা ঘরখানা মানব কল্যাণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ সর্বোত্তম বরকতময় অর্থাৎ সব বরকতের আঁধার। এখানে আল্লাহ তাআলার অনেক প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী রয়েছে যেমন মাকামে ইবরাহিম, সাফা পাহাড়, মারওয়া পাহাড়, জমজম কূপ ইত্যাদি। ডা. মুজ্জামিল সিদ্দিকি, প্রেসিডেন্ট, ইসলামিক সোসাইটি, উত্তর আমেরিকা (আইএসএনএ) সৌভাগ্যক্রমে তিনি ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে এ পবিত্র ঘরখানার ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পান। তিনি সাউন্ড ভিশনের সাক্ষাতকালে কাবাঘরের ভেতরের বর্ণনায় যা বলেন, তার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হলো- ১. কাবা ঘরের ভেতরে কোনো ইলেকট্রিক লাইট নাই। ২. এ ঘরের মেঝে এবং ওয়াল মার্বেল পাথর দ্বারা নির্মিত। ৩. এ ঘরের কোনো জানালা নাই। ৪. কাবা ঘরের ১টি মাত্র দরজা। আল্লাহ পাকের পবিত্র কাবা ঘরটির দরজা হাজরে আসওয়াদের পাশে কাবা ঘরের পূর্ব পাশে অবস্থিত। হাজরে আসওয়াদঃ হাজরে আসওয়াদ শব্দের অর্থ কালো পাথর। কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নারে সিনা বরাবর উঁচুতে দেওয়ালের কোনো রূপার বৃত্তে গাঁথা কালো পাথরকে হাজরে আসওয়াদ পাথর বলে এটি বেহেশতের একটি পাথর। বেহেশত হতে আসার সময় এটি দুধের মতো সাদা ছিল। কিন্তু বনি আদমের গোনাহ্ এটিকে কালো বানিয়ে ফেলেছে। এটি চুম্বন করা সুন্নত কিন্তু চুম্বন করতে গিয়ে কাউকে কষ্ট দেওয়া গুণাহ। বর্তমানে এখানে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে দূরে থেকে হাত দ্বারা ইশরায় চুম্বন করা বাঞ্ছনীয়। হাজরে আসওয়াদ এবং চৌকাঠ ছাড়া বাইতুল্লাহ শরীফের অন্য কোনো জায়গায় চুমু খাওয়া জায়েজ নয়। মুলতাজামঃ কাবাঘরের দরজা ও হাজরে আসওয়াদ পাথরের মধ্যবর্তী স্থান। এটি দোয়া কবুলের স্থান। তাওয়াফ সমাপনের পর সম্ভব হলে বুক, চেহারা দেওয়ালে লাগাবেন এবং আঁকড়ে ধরবেন (যদি সুগন্ধি ব্যবহার না করে থাকেন)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি এ স্থানে যে দোয়াই করেছি তা কবুল হয়েছে। আপনি যেহেতু ইহরাম অবস্থায় আছেন সেহেতু কাবা শরীফে মোড়ানো চাদর যেন আপনার মাথা বা চুলকে স্পর্শ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। রোকনে ইয়ামেনীঃ কাবাঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এটি অবস্থিত। যেহেতু এটি ইয়ামিনের দিকে অবস্থিত তাই একে রোকনে ইয়ামেনী বলা হয়। তাওয়াফের সময় এটিকে ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হয়, তবে না পারলে কোনো ইশারা করার প্রয়োজন নেই। রোকনে শামীঃ কাবাঘরের উত্তর-পশ্চিম কোণ, যা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত। হাতিমঃ কাবাঘরের উত্তর দিকে অবস্থিত অর্ধ বৃত্তাকারের কাঁধ পর্যন্ত উঁচু দেওয়াল ঘেরা স্থানকে হাতিম বলে। এটি কাবাঘরের অংশবিশেষ। নবী করিম (সা.) নবুয়াত লাভের কিছুকাল পূর্বে কুরাইশরা কাবাঘরকে নতুন করে নির্মাণের ইচ্ছাপোষণ করেন। তখন সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, নির্মাণ কাজে শুধু হালাল উপায়ে রোজগার করা টাকাই খরচ করা হবে। কিন্তু তাদের পুঁজি কম থাকায় উত্তরদিকে সাবেক বাইতুল্লাহ্ থেকে কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ স্থানকে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ দেওয়াল ঘেরা অংশকেই হাতিম বলে। তওয়াফের সময় এর বাইর দিয়ে তওয়াফ করতে হয়। মাকামে ইবরাহীমঃ কাবাঘরের দরজা বরাবর আনুমানিক ১০/১২ হাত পূর্বদিকে গম্বুজ আকৃতির একটি স্বচ্ছ ঘরকে মাকামে ইবরাহীম বলে। এ গম্বুজ আকৃতির ছোট ঘরটির মধ্যে সংরক্ষিত পাথরে হজরত ইবরাহীম (আ.) এ পাথরে দাঁড়িয়ে কাজ করতেন। আল্লাহর কুদরতে পাথরখানা প্রয়োজনমতো উপরে এবং নিচে উঠানামা করত। প্রত্যেক তাওয়াফের পরে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত  ওয়াজিবুত তাওয়াফ  নামাজ পড়তে হয়। ভিড়ের কারণে যদি এখানে নামাজ পড়া সম্ভব না হয় তাহলে এর আশপাশে যে কোনো স্থানে পড়লে চলবে। মাতাফ বা চত্বরঃ কাবাঘরের চারপাশের তাওয়াফের স্থানকে মাতাফ বা চত্বর বলে। মিজাবে রহমতঃ বায়তুল্লাহর উত্তর দিকের ছাদে (হাতিমের মাঝ বরাবর) যে নালা বসানো আছে তাকে মিজাবে রহমত বলে। এ নালা দিয়ে ছাদের বৃষ্টির পানি নিচে পড়ে। জমজম কূপঃ মসজিদুল হারামের ভেতরে বায়তুল্লাহ্ শরীফের নিকট একটি প্রসিদ্ধ ফোয়ারার নাম জমজম কূপ। সর্বোত্তম ত্যাগের বিনিময়ে হজরত হাজেরা (আ.) এবং তার শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) এর প্রতি আল্লাহর পাকের রহমতের নিদের্শন স্বরূপ সৃষ্টি হয়েছিল জমজম কূপ। দুনিয়াতে আল্লাহ্ তায়ালার যতগুলো নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে জমজম কূপ অন্যতম। জমজম কূপটি হাজরে আসওয়াত থেকে ৫৪ ফুট দূরে অবস্থিত। এর গভীরতা সমতল ভূমি থেকে ৪৬ ফুট। মুখের বেড় ১৬ ফুট এবং ব্যাস ৫ ফুট। এ কূপের পানি সর্বাপেক্ষা স্বচ্ছ, উৎকৃষ্ট, পবিত্র এবং বরকতময়। এ কূপের পানি শুধু পিপাসাই নিবারণ করে না, বরং এ পানি দ্বারা ক্ষুধাও নিবৃত হয়। রাসূলে করিম (সা.) নিচে এ সম্বন্ধে বলেছেন,  এ পানি শুধু পানীয় নয় বরং খাদ্যের অংশ এবং এতে পুষ্টি রয়েছে। সাফা পাহাড়ঃ বায়তুল্লাহর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত একটি ছোট পাহাড়। যেখান থেকে হাজীদের সায়ী আরম্ভ করতে হয়। মারওয়া পাহাড়ঃ বায়তুল্লাহ্ শরীফের পূর্ব উত্তর কর্নারে ছোট একটি পাহাড়। যে স্থানে সায়ী সমাপ্ত হয়। সাফা পাহাড় এবং মারওয়া পাহারের দূরত্ব আনুমানিক ৪৫০ মি. যা সাত চক্কর দিলে সোয়া তিন কি. মি. পথ অতিক্রম করা হয়। মায়লাইনে আখজারাইনঃ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে মসজিদুল হারামের দেওয়ালে স্থাপিত দুটি সবুজ বাতি দ্বারা নির্ধারিত স্থান। একে  মায়লাইনে আখজারাইন  বলা হয়। এ স্থানে সায়ী পালনকারীদের দৌড়ে পার হতে হয়। তবে মহিলারা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে চলা প্রথা। মাওলিদুন নবী বা হুজুর পাকের জন্মস্থানঃ এখানেই অবস্থিত আখেরি নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর জন্মস্থান। বর্তমানে এ স্থানটি পাঠাগার হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। জান্নাতুল মুয়াল্লাঃ মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে অবস্থিত মক্কা শরীফের বিখ্যাত করবস্থান জান্নতুল মুয়াল্লা। হুজুর পাকের দাদা আব্দুল মোতালিব এবং মাতা আমিনা (রা.) এ কবরস্থানে সমাহিত আছেন। এছাড়া হজরত মুহাম্মদ (স.) এর চাচা এবং হজরত আলীর বাবা আবু তালিবের কবরও এখানেই। হুজুর পাকের প্রথম স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) এবং ছেলে কাসেমসহ অনেক সাহাবায়েকেরাম ও মুমিন মসুলমানের কবর এখানে রয়েছে। যাবালে নূর বা হেরা গুহাঃ নির্ভরযোগ্য বর্ণনা মতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম যে আয়াতগুলো নাজিল হয়, সেগুলো ছিল সূরায়ে আলাকের প্রথম কয়েকটি আয়াত। অর্থাৎ এখানেই তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হয়। সহীহ বোখারীতে এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ওহী নাজিলের সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে এরপর থেকেই তার মধ্যে নির্জন ইবাদত করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি হেরা গুহায় রাতের পর রাত ইবাদতে কাটাতে থাকেন। এ অবস্থাতেই এক রাতে হেরা গুহায় তাঁর নিকট আল্লাহর ফেরেশতা আসেন এবং তাকে বলেন,  ইকরা (পড়ুন)। হুজুর (সা.) জবাব দেন : আমি পড়তে জানি না। পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে হুজুর (সা.) বলেন, আমার জবাব শুনে ফেরেশতা আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং এমনভাবে চাপ দেন যে, আমি অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এরপর ফেরেশতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলে, পড়ুন , আমি এবারও বলি, আমি পড়তে জানি না। তখন ফেরেশতা পুনরায় আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন চাপ দিলেন যে, আমি অত্যন্ত ক্লান্ত অনুভব করতে থাকি।এরপর ফেরেশতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, পড়ুন। এবারও আমি সেই একই জবাব দেই যে, আমি পড়তে জানি না। এ জবাব শুনে ফেরেশতা আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরে এমন ভীষণভাবে চাপ দিলেন যে, আমি চরম ক্লান্তি অনুভব করতে থাকি। অতপর ফেরেশতা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন, পড়ুন  আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। পড়ুন এবং আপনার পালকর্তা অত্যন্ত অনুগ্রহপরায়ণ। এ ছিল তাঁর প্রতি পালনকর্তার সর্বপ্রথম কয়েকটি আয়াত। (তফসীরে মাআরেফুল কোরআন) জাবালে সাওর বা সাওর পর্বতের গুহাঃ জাবালে সাওর মসজিদুল হারামের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। এটি ছিল প্রকাণ্ড সুউচ্চ পাহাড়। হিজরতের সময় এখানে আবু বকর (রা.) সহ নবী করিম (সা.) তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। মিনা  মক্কা মুয়াজ্জমা হতে তিন মাইল পূর্বে অবস্থিত একটি মাঠের নাম। এখানে কোরবানি এবং কংকর নিক্ষেপ করা হয়। মিনা হারাম শরীফের অন্তর্ভুক্ত। মসজিদে খায়েফঃ মিনার সবচাইতে বড় মসজিদ। এটি মিনার উত্তর দিকে যাব পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। আরাফাতের ময়দানঃ আদি পিতা আদম (আ.) ও মাতা হাওয়া (আ.)-এর মিলনস্থল হিসেবে খ্যাত  আরাফাত ময়দান । আরাফাতের ময়দান পাকপবিত্র এবং সম্মানিত স্থান। সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিবছর এখানে হজব্রত পালন করতে আসেন। এটি মুসলিম বিশ্ববাসীর জন্য রহমত, নাজাত ও মুক্তি লাভের মিলন মেলা। এ স্থানের সঙ্গে রয়েছে জান্নাতের সম্পর্ক। কিয়ামত পর্যন্ত এ স্থানটি মুসলমানদের জন্য নিরাপদ ও পবিত্র। জাবালে রহমতঃ জাবালে রহমত আরাফার ময়দানে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম। এই পাহাড়ে হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল হত। দুনিয়াতে আসার পর এখানেই হজরত আদম (আ.) এবং বিবি হাওয়া (আ.)-এর প্রথম সাক্ষাত হয়। নবী করীম (স.) বিদায় হজের খোৎবা এখান থেকেই দিয়েছিলেন। মুজদালিফাঃ মুজদালিফা-মিনা এবং আরাফাতের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি ময়দান। এটি মিনা হতে তিন মাইল পূর্ব দিকে অবস্থিত। আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফায় যেতে হয়। ১০ জিলহজের রাত অর্থাৎ ঈদের রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তবে মাশার-ই-হারামে অবস্থান করা উত্তম। ওয়াদিয়ে মুহাসসার বা আবরাহা বাদশাহর ধ্বংসস্থলঃ মুজদালিফা ওমিনার মাঝামাঝিতে এ স্থানটিকে ওয়াদিয়ে মুহাসসার বলা হয়। বর্তমানে ওয়াদিয়ে মুহাসসারকে ওয়াদিউন্নার বলা হয়ে থাকে। আবরাহা বাদশাহর ধ্বংসস্থল বা ওয়াদিয়ে মুহাসসার ব্যতীত মুজদালিফার ময়দানে যে কোনো স্থানে অবস্থান করা যায়। এ স্থানটি আজাবের নিদর্শন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে উল্লেখ করেন - তুমি কি দেখোনি তোমার প্রভু কেমন করেছিলেন হস্তি বাহিনীর প্রতি? তাদের চক্রান্ত তিনি কি ব্যর্থতার পর্যবসিত করেননি? আর তাদের উপরে তিনি পাঠালেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল, যারা তাদের আছড়ে ছিল শক্ত-কঠিন পাথরের গায়ে; ফলে তিনি তাদের বানিয়ে দিলেন খেয়ে ফেলা খড়ের মতো। (সূরা আল-ফীল, আয়াত : ১-৫)

১৭২১ সালের কাবা শরীফের স্কেচ
মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফ। প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। কাবাঘরটি আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করেন। অনেক তফসিরবিদের মতে, “মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আলস্নাহ তায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন”।

তফসিরবিদ মজাহিদ কলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভুপৃষ্ঠ হতে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন” মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সঃ) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম(কাবা)। এরপরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মীত হয়।
হযরত আদম (আঃ) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতেন, আল্লাহর কাছে হাজিরা দিতেন এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে। কাবাঘরে এসে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিতেন। “লাব্বাইক আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়ালা মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বাইক”।

১৮৫০ সালের কাবা শরীফ

হযরত ইস্রাহীম (আ·) কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর,। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চই তুমি দয়ালু। হে প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ কর।
যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চই তুমি মহাপরাক্রমশালী”। আল্লাহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর বংশ হতে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। এরপর কয়েকশ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করলো আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শ’ শ’ বছর কিংবা হাজার হাজার বছর পরে কাবাঘর সংস্কার করলো মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকতো কাবা শরীফ রক্ষণাবেক্ষনের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করতো। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরীফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করলেন মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নবুয়্যত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খ্রীঃ জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াত স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়।

১৮৮০ সালের কাবা শরীফ
সকলের সম্মতিক্রমে মোহাম্মদ (সা) কাবাগৃহে হাযরে আসওয়াদ কাবা শরীফে স্থাপন করেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরীতে আব্দুলস্নাহ ইবনে জোবায়ের (রাঃ) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরীতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন।

সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মোতোয়াল্লীর দায়িত্বে থাকেন। ভৌগলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ্ব পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরীফে গমন করেন। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহার দিন। এ দিন কোরবানী দিতে হয়। যা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপ ও ঠিক তেমনি হযরত ইসমাইল (আঃ) ও তার মা বিবি হাজেরা (আঃ)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে। এ যমযম কূপ মহান আলস্নাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ্ব মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে।
১৮৮৯ সালের কাবা শরীফ
হস্তী বর্ষ বা হস্তিবর্ষ (আরবি: The Year of the Elephant, ইয়ার অব দ্য এলিফ্যান্ট; আরবি: عام الفيل, ʿআমুল ফিল) হল আনুমানিক ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ইসলামী ইতিহাসে সঙ্ঘটিত একটি ঘটনার সময়কাল। ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, এটি সে বছরে সঙ্ঘটিত হয়, যে বছরে নবী মুহাম্মাদ জন্মেছিলেন। নামটির আগমন ঘটেছে মক্কায় সঙ্ঘটিত কথিত[ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে: যা ছিল আবরাহা নামক ইয়েমেনের তৎকালীন সম্রাটের বিশাল সৈন্যবাহিনী সহ মক্কা আক্রমণ এবং ইসলামে বর্ণিত ঈশ্বর প্রেরিত সহস্র আবাবিল নামক পাখির আক্রমণের মাধ্যমে উক্ত সেনাবাহিনীকে পরাস্তকরণ।
আনুমানিক ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ইয়েমেনের শাসক ছিলেন ইয়াহুদী সম্রাট যু -নাওয়াস এবং আবিসিনিয়ার শাসক খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। অপরদিকে রোম সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। ইয়েমেনের ইয়াহুদী শাসক যু -নাওয়াস খৃস্ট ধর্মের অনুসারীদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করে, এক পর্যায়ে খ্রিস্টধর্মের অনেক অনুসারীদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় খ্রিস্টান রোম সাম্রাজ্যের সহায়তায় আবিসিনিয়ার সরকার ইয়েমেনে আক্রমন চালায়। সেকালে আবিসিনিয়ার কোন প্রতিষ্ঠিত নৌ বাহিনী ছিলনা। রোমান নৌ বাহিনীর সহায়তায় আবিসিনিয়া নিজেদের ৭০ হাজার সৈন্য ইয়েমেনের উপকূলে নামিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই সব কিছু শুধু মাত্র ধর্মীয় আবেগ উচ্ছ্বাসের কারণে করা হয়নি বরং এর পিছনে প্রবলভাবে নিহিত ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ। আর খৃস্টান নির্যাতিতদের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহন; উহা ছিল নিছক একটি বাহানা মাত্র। পূর্ব আফ্রিকা, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া সহ দূর প্রাচ্যের সাথে চলমান ব্যবসার উপর শত শত বছর ধরে আরবদের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। আর এর জন্য ইয়েমেন ছিল কৌশলগত এবং ভূ রাজনৈতিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। আরবদের আধিপত্য ক্ষুণ্ণ করে এই ব্যবসায় নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করাই ছিল এ যুদ্ধের মূল লক্ষ্য।

     ১৮৯০ সালের কাবা শরীফ
ইয়েমেনের উপর আবিসিনিয়ার যে সৈন্য বাহিনী যুদ্ধ পরিচালনা করে, আর-ইয়াত ছিল সেনাপ্রধান আর আবরাহা ছিল সেই বাহিনীর একজন অন্যতম যোদ্ধা। পরবর্তীকালে আর-ইয়াত এবং আবরাহার মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় এবং যুদ্ধে আর-ইয়াত নিহত হয়। শেষ পর্যন্ত আবরাহা গোটা ইয়েমেন দখল করে বসে। অতঃপর সে নিজেকে ইয়েমেনে নিযুক্ত আবিসিনিয়া সরকারের গভর্নর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
ইয়েমেনে নিজের ক্ষমতা সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত করে আবরাহা একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজ করতে শুরু করে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই রোমান সাম্রাজ্য এবং আবিসিনিয়ার খৃস্টান সরকারের সেই উদ্দেশ্যই বিদ্যমান ছিল। আর তা হল একদিকে আরবে খৃস্টধর্ম প্রচার করা আর অন্য দিকে দূর প্রাচ্যের ভারতবর্ষ ও রোমান অধিকৃত অঞ্চলে আরবদের পরিচালিত ব্যবসা সম্পূর্ণ করায়ত্ত করা। এই উদ্দেশ্যে আবরাহা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করল। ঐতিহাসিকগণ এর নাম লিখেছেন “আল- কালীস” এই কাজটি সুসম্পন্ন করার পর সে আবিসিনিয়ার সম্রাটকে লিখল যে –
“আমি আরবদের হজ্জ অনুষ্ঠান মক্কার কাবা হতে সানার এই গির্জায় স্থানান্তরিত না করে ছাড়বনা।”
অজানা সালের কাবা শরীফ
ইয়েমেনে সে এই কথা প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করল এবং চারদিকে এই কথা প্রচার করতে লাগলো। তার এই কাজের উদ্দেশ্য ছিল আরবদের রাগান্বিত করা, কারণ আরবরা যদি রাগান্বিত হয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে তাহলে সে এটাকে উপলক্ষ বানিয়ে মক্কায় আক্রমন চালানোর এবং কাবা শরীফ বিধ্বস্ত করার সুযোগ পাবে। তার পরিকল্পনা সফল হয়। কুরাইশদের কিছু যুবক একত্রিত হয়ে তার এই গির্জায় আগুন ধরিয়ে দেয় অথবা গির্জার ভিতর মলমূত্র ত্যাগ করে। এই ধরণের কোন ঘটনা যদি আদৌ ঘটে থাকে তবে তা অস্বাভাবিক নয়, কারণ তার এই ঘোষণাটি ছিল চরম উত্তেজনা সৃষ্টিকারী। তবে, কোন কোন ঐতিহাসিক বলেছেন, আবরাহা নিজেই নিজেদের লোক দ্বারা এই ধরণের কাণ্ড ঘটায় উত্তেজনা তৈরি করে আরব আক্রমনের বাহানা তৈরি করার জন্য।
অতঃপর ৫৭০ বা ৫৭১ খৃস্টাব্দে আবরাহা ৬০ হাজার সৈন্য ও ১৩ টি হাতি নিয়ে মক্কার দিকে যাত্রা করে। পথিমধ্যে বেশ ক’টি আরব গোত্র আবরাহা বাহিনীর গতিরোধ করার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। এ সেনাদল মক্কার কাছাকাছি পৌঁছে একটি অগ্রবর্তী দল প্রেরণ করে। কুরাইশ গোত্রের প্রধান ছিল তখন নবীজির দাদা আব্দুল মুত্তালিব। এ অগ্রবর্তী দল আব্দুল মুত্তালিবের প্রায় ২ শত উট লুট করে নিয়ে যায়। আবরাহা একজন দূতের মাধ্যমে কুরাইশ প্রধান আব্দুল মুত্তালিবকে ডেকে পাঠায়। আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার সাথে দেখা করতে যায়। আব্দুল মুত্তালিব দেখতে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন। আবরাহা তাকে দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়। আলাপচারিতা শুরু হবার পর আব্দুল মুত্তালিব তার ২ শত উট ফেরত চায়। আবরাহা বললেন –
“আপনাকে দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু এই কথায় আমার নিকট আপনার আর কোন মর্যাদা রইলনা। কারণ, আপনি আপনার উটগুলো ফেরত চাইলেন কিন্তু আপনার এবং আপনার বাপ দাদার ধর্মের কেন্দ্রস্থল কাবা ঘর রক্ষার ব্যাপারে আপনি কিছুই বললেননা।” জবাবে আব্দুল মুত্তালিব বললেন – “উটের মালিক আমি, তাই আমি উট ফেরত চাইলাম। এই ঘরের মালিক আল্লাহ। আল্লাহই এই ঘর রক্ষা করবেন। আপনার বাহিনীর মোকাবিলা করার সামর্থ্য আমাদের নেই।”
১৯০০ সালের কাবা শরীফ
আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার সেনানিবাস হতে ফিরে কুরাইশদেরকে সাধারণ হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে বাঁচার জন্য পর্বতমালায় আশ্রয় গ্রহন করতে বললেন। অতঃপর তিনি আরও কয়েকজন কুরাইশ সরদারকে সাথে নিয়ে কাবা শরীফে উপস্থিত হলেন এবং কাবার দরজার কড়া ধরে এক আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন, তিনি যেন রক্ষা করেন। তখনও কাবার ভিতর ৩৬০ টি মূর্তি বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এই কঠিন সময়ে তারা কেবল এক আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করেছিল।
পরের দিন আবরাহা মক্কায় প্রবেশের জন্য অগ্রসর হল। কিন্তু তার নিজের হাতি সহসা বসে পরল। হাতিটিকে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে চালানোর চেষ্টা করলে উহা দৌড়াতে শুরু করে কিন্তু মক্কার দিকে চালানোর চেষ্টা করলে তা সাথে সাথে বসে পড়ত। এই সময় হঠাৎ ঝাকে ঝাকে পাখি চঞ্চু ও পাঞ্জায় পাথরকুচি নিয়ে উড়ে আসে এবং কাবা আক্রমণকারী আবরাহা বাহিনীর উপর পাথরকুচির বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকে। এই পাথরকুচির আঘাতে আবরাহার বাহিনীর সৈন্যদের শরীরের মাংসপেশী খসে পড়তে শুরু করে এবং তারা চর্বিত ভুষির ন্যায় পরিণত হয়। এইরুপ অবস্থায় তারা নিরুপায় ও পাগলপারা হয়ে ইয়েমেনের দিকে পালাতে শুরু করে। এইভাবে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে তারা নানা জায়গায় পড়ে মরতে লাগলো ।এই ঘটনা সঙ্ঘটিত হয় মুযদালিফা ও মিনার মাঝখানে মুহাসসির নামক স্থানে।

১৯০৭ সালের কাবা শরীফ
মক্কার কোন কোন লোকের নিকট দীর্ঘদিন এই পাথরকুচির নমুনা সংরক্ষিত ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই ঘটনা সঙ্ঘটিত হবার ৩/৪ বছরের মধ্যে ইয়েমেন থেকে আবিসিনিয়া সরকারের পতন ঘটে। যে বছর এ ঘটনা সঙ্ঘটিত হয় সেই বছরটিকে আরবরা “হস্তী বর্ষ” নামে অভিহিত করে। মুহাম্মাদের জন্মও এই বছরে  হয়। এ ঘটনার পর কুরাইশরা প্রায় ১০ বছর এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারও ইবাদত করেননি।

পবিত্র কাবা শরীফ এর ভিতরের বিরল দৃশ্য।

পবিত্র কাবা শরীফ পরিস্কার করার জন্যে এর দরজা বছরে দুইবার খোলা হয়। রমজান এর ১৫ দিন আগে এবং হজ্জ এর ১৫ দিন আগে।
প্রতি আরবি বছরের মহররম ও শাবান মাসের প্রথম দিন নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ ধৌত করা হতো।এক টুইটার বার্তায় পবিত্র মক্কা-মদিনার মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আগামী আরবি নতুন বছরের (মহররম মাস) শুরুতে পবিত্র কাবা ঘর ধোয়ার কাজ সম্পন্ন হবে এবং এবার থেকে বছরে একবার পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়া হবে। পবিত্র কাবা শরিফ ধোয়ার এ কাজটি একটি বড় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। যা আসলে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসরণে করা হয়। ৬৩০ সালে যখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করেছিল তখন তিনি মহান আল্লাহর এ পবিত্র ঘরকে ধৌত করেছিলেন।

কাবার ভিতরের দূর্লভ চিত্র

তবে শাবান মাসে কাবা শরিফ ধোয়া হলেও কাবার গায়ে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে নতুন গিলাফ পড়ানো হয়।
কাবা শরীফের দরজার চাবি বনী সায়বা নামক এক গোত্রের কাছে থাকে (মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এই চাবী এই গোত্রের কাছে দিয়েছিলেন, যা কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তাদের কাছেই থাকবে)। তারা কাবা শরীফ পরিস্কার করার কাজের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, কুটনীতিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের দের অভিবাদন জানান। মক্কা শহরের গভর্নর তাদের কাবা শরীফের ভিতরে নিয়ে যান এবং তারা জমজম কুপের পানি এবং গোলাপ জল দিয়ে কাবা শরীফের ভিতর পরিস্কার করেন।

কাবা ঘরের ভিতরের আর্কিটেকচার ডিজাইন

জমজম কূপের পানি হলো আল্লাহর কুদরতি পানি। এই পানি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, যে কেউ যে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই পানি পান করলে আল্লাহ পাক তাঁর উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করে দেবেন। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিকে এই পানি পান করালে সে সুস্থতা লাভ করবেন। রাসুল করীম (সা.) নিজেই এই জমজমের পানি পান করেছেন এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদানও করেছেন। জমজমের পানি এ যেন পানি নয়, বরং তা আল্লাহ পাক কর্তৃক তাঁর প্রিয় বান্দাকে কেন্দ্র করে প্রবাহিত তাঁরই কুদরতের একটি ঝরনাধারা।পবিত্র কাবার দ্বারপ্রান্তে অবস্হিত কুপকে জমজম কুপ বলে। এই কুপ আল্লাহতায়ালার কুদরতের একটি মহা নিদর্শন। পৃথিবীতে যত আশ্চর্যজনক সৃষ্টি রয়েছে জমজম কুপ তার অন্যতম। এর পানি কখনো নিঃশেষ হয় না।

বিবি সারার কোন সন্তানাদি ছিল না। একটি সন্তানের জন্যে তার আকুতিও কম ছিল না। খোদা, ইব্রাহিমের মাধ্যমে একটি জাতি গড়ে তুলবেন জানিয়েছিলেন। এ কারণে সারা ইব্রাহিমকে প্রলুব্ধ করেন তার দাসী হাজেরাকে বিবাহ করতে। অত:পর সারার অনুরোধে হাজেরাকে বিবাহের পর ইব্রাহিম আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করলেন,
‘হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।’(সূরা আস-সাফফাত: আয়াত: ১০০ ৩৭:১০০)
সুতরাং আল্লাহ তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলেন।((সূরা আস-সাফফাত: আয়াত: ১০১ ৩৭:১০০)
৩৭:১০১)
হাজেরা গর্ভবতী হল। যখন সে বুঝতে পারল যে সে গর্ভবতী, তখন আনন্দে এমন আত্মহারা হয়ে পড়ল যে মনিবপত্নী সারা তার কাছে অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হলেন। এতে ক্ষুব্ধ সারা ইব্রাহিমের নিকট অভিযোগ করলেন। ইব্রাহিম বললেন, ‘সে তোমার দাসী। সুতরাং আপনার যা ভাল মনে হয় তার প্রতি আপনি তা-ই করুন।’
ইব্রাহিমের ৮৬ বৎসর বয়সের সময় হাজেরা একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। তার নাম রাখা হল ইসমাইল। ইতিমধ্যে সারা ও হাজেরার মধ্যে অসন্তোষ আরও বৃদ্ধি পেল। ক্ষুব্ধ সারা আর সহ্য করতে রাজী ছিলেন না। সুতরাং তিনি ইব্রাহিমকে বললেন, ‘সন্তানসহ তাকে মরুভূমিতে নির্বাসন দিন।’ ইব্রাহিম মহা সমস্যায় পড়লেন। দাসীর প্রতি যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার সারার রয়েছে। সর্বোপরি তিনি নিজেই ইতিপূর্বে এই অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে সারাকে সমর্থণ করেছিলেন। কিন্তু এখন হাজেরাকে নির্বাসন দিতে তিনি গড়িমসি করতে লাগলেন। এইসময় ফেরেস্তা জিব্রাইল তাকে সারার কথা মতই কাজ করতে বললেন। তিনি বললেন, ‘তাদেরকে নির্বাসন দিন। আল্লাহ আপনার এই সন্তানের মধ্যে দিয়েই একটা জাতি গড়ে তুলবেন।’
১৯১০ সালের কাবা শরীফ
ইব্রাহিম তার সন্তান ও স্ত্রীকে নির্বাসনের প্রস্তুতি নিলেন। তারপর এক সকালে কিছু খাদ্য ও পানীয়সহ তাদেরকে নিয়ে রওনা হলেন। চারিদিকে ধূ-ধূ মরুভূমি। একস্থানে কিছু গাছপালা দেখতে পেয়ে ইব্রাহিম স্ত্রী ও সন্তানকে সেখানে নির্বাসনের বাসনা করলেন। কিন্তু জিব্রাইল বলল, ‘তাদেরকে নির্বাসনের স্থান এটা নয়।’ সুতরাং তারা চলতে লাগলেন। চলতে চলতে যখন শুস্ক পাহাড় ও উত্তপ্ত বালুকাময় প্রান্তর এসে পড়লেন তখন জিব্রাইল তাদেরকে সেখানেই থামিয়ে দিলেন।
সুতরাং ইব্রাহিম হাজেরাকে বললেন, ‘আল্লাহর নির্দেশমত আমি চলে যাচ্ছি।’
হাজেরা বলল- ‘এই মরুভূমিতে আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন?’
ইব্রাহিম বললেন – ‘আল্লাহর তত্ত্বাবধানে।’
  হাজেরা বললেন- ‘তবে, আমাদের জন্যে চিন্তা করবেন না। আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের ধ্বংস হতে দেবেন না।’
এদিকে হাজেরা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে নিয়ে জনমানবহীন প্রান্তরে দিনাতিপাত করতে লাগলেন। তাদের খাদ্য ও পানীয় (কিছু খেজুর ও এক মশক পানি) দ্রুত শেষ হয়ে গেল। পিপাসায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে। সন্তানকে উন্মুক্ত প্রান্তরে দৃষ্টির সম্মুখে শায়িত রেখে পানির খোঁজে হাজেরা এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি করলেন। আশে পাশে পানি নেই বুঝতে পেরে তিনি কোন পথিক বা নিকটস্থ জনপদের সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ের একটিতে উঠলেন। তারপর অতি আগ্রহ নিয়ে সে দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। চারিদিকে ধূ-ধূ বালু, কোথাও কোন জনপদের চিহ্ন নেই। কোন পথিকও দৃষ্টিগোচর হল না। কিন্তু তিনি হতাশ হলেন না।  ভাবলেন নিশ্চয় অপর পাহাড় থেকে দৃষ্টি দিলে কোন কোন পথিকের দেখা মিলবে। একে পিপাসায় ছাতি ফেঁটে যাচ্ছে তার উপর মরুর তীব্র লু হাওয়া- অতি কষ্টে তিনি অপর পাহাড়ে উঠলেন। তারপর চূঁড়া থেকে আশেপাশে এবং দূরে মনোযোগের সাথে দৃষ্টি ফেললেন। কিন্তু আগের মতই চারিদিকে ধূধূ বালিই তাঁর নজরে এল, কোন পথিকের দেখা মিলল না। কিন্তু  দমে গেলেন না, তিনি ভাবলেন ১ম পাহাড়ে এবার উঠলে নিশ্চয়ই কারও দেখা মিলবে। এভাবে সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ে  সাতবার ওঠানামা করলেন, যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়ে এল এবং দূরের আর কিছু দৃষ্টিগোচরে এল না।

১৯১০ সালের কাবা শরীফ
এখানে একথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, হাজেরার সাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সাতবার ওঠা-নামার কারণেই হজ্বের সময় এই পর্বতদ্বয়ের মাঝে সাতবার দৌঁড়ান একটা বিধিতে পরিণত হয়েছে।অল্লাহ পাক কোরআনে বলেন –
নিঃসন্দেহে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শণগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা‘বা গৃহে হজ্জ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দু‘টিতে প্রদক্ষিণ করাতে দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা অবশ্যই অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দেবেন।(সূরা আল বাক্বারাহ ২:১৫৮)
অতপর সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল। মাতা হাজেরা ভাবলেন এখন তার সন্তানের কাছে ফিরে যাওয়া দরকার। তার বুকে যতটুকু দুধ আছে তা দিয়ে যতক্ষণ সম্ভব সে তার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। এই অসহায় অবস্থায় হাজেরা দু‘হাত আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে আর্জি জানালেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি কি দেখছেন না আমরা তো মৃত্যূর দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছি। আমাদেরকে সাহায্য করুন একান্তই যদি কোন সাহায্য করতে চান।’ আল্লাহ তার এই প্রার্থনায় সাড়া দিলেন। তাঁর নির্দেশে জিব্রাইল এসে শায়িত ইসমাইলের পদদেশে তার গোঁড়ালী দিয়ে আঘাত করলেন। পরিশ্রান্ত, অসহায় মা তার সন্তানের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু তার জন্যে এক মহাবিষ্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি দেখতে পেলন শিশু ইসমাইলের পদদেশে একটি ফোয়ারার সৃষ্টি হয়েছে এবং পানির ক্ষীণধারা বয়ে চলেছে। 
আল্লাহর রহমতের নিদর্শণ, এটাই বর্তমানের জমজম কূপ।

১৯২৫ সালের কাবা শরীফ
হাজেরা বুঝতে পারলেন আল্লাহ তাকে একটি পূণ্যবান সন্তান দান করেছেন। তিনি তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পর পানি পান করলেন। তারপর এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নুড়ি কুড়িয়ে এনে ফোয়ারার চতুর্দিকে স্থাপন করে ঐ পানি আবদ্ধ করলেন। একসময় ঐ আবদ্ধ পানি উপচে পড়তে লাগল। এ দেখে হাজেরা আরও বালু ও নুড়িকনা দ্বারা ঐ পানি আবদ্ধ করার চেষ্টা করতে ও বলতে লাগলেন, ‘জম, জম।’ অর্থাৎ থাম, থাম, তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় ঐ পানির প্রবাহ থেমে পড়ল।
হাজেরার সঙ্গে যে খাবার ছিল তা পূর্বেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। সুতরাং পানি পান করেই মাতা-পুত্রের প্রাণ রক্ষা হতে লাগল। এ সময় একদিন একদল ইয়েমেনীয় জুরহুম গোত্রের বণিক ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমনের প্রাক্কালে পিপাসার্ত পশু সহকারে পানির খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে মক্কার মরু অঞ্চলে এসে পৌঁছিলেন। অতঃপর তারা একস্থানে কিছু পাখি উড়তে দেখে সেদিক লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করলেন। কেননা তারা জানত মরুর বুকে কেবল পানির উৎসের উপরই পাখি উড়ে।
বণিকদল সাফা পর্বতের পাদদেশে এসে পৌঁছিলেন এবং পানির ক্ষুদ্র এক উৎস দেখতে পেলেন। কিন্তু তারা বিষ্মিত হলেন দু‘টি কারণে- প্রথমত: পানির উৎস ক্ষূদ্র এবং তাকে ঘিরে কোন মরুদ্যান গড়ে উঠেনি এবং দ্বিতীয়ত: এক মহিলা শিশুপুত্রসহ ঐ ফোয়ারার পাশে উপবিষ্ট। তাদের বিষ্ময়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল যখন তারা নিশ্চিত হল ঐ মহিলার সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী নেই। বিষ্ময় এবং কৌতুহল নিয়ে বণিকদল ফোয়ারার নিকটবর্তী হলেন। তারপর এই জন-মানবহীন প্রান্তরে তার আগমণের ইতিবৃত্ত জানতে তারা তাঁর পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। হাজেরা তার ইতিবৃত্ত খুলে বললেন।
বণিকদল সবকিছু জানার পর বুঝতে পারলেন এই মহিলা খোদার অনুগ্রহ প্রাপ্ত পরিবারেরই একজন সদস্য। সুতরাং তাঁরা অতি আগ্রহ নিয়ে আশেপাশে বসতি স্থাপণের অনুমতি প্রার্থণা করলেন তাঁর কাছে। ইতিমধ্যে হাজেরাও বুঝতে পেরেছিলেন এই মরুপ্রান্তরে এই বণিকদলকে আল্লাহই রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তিনি অনুমতি দিলেন, কিন্তু ফোয়ারার স্বত্ত্ব প্রদানে সম্মত হলেন না। বণিকেরা তার সাথে একমত হলেন এবং পানির বিনিময়ে বাৎসরিক মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদানেও সম্মত হলেন। যুরহুম গোত্রের ঐ বণিকেরা শীঘ্রই আশেপাশেই বসতিস্থাপন করলেন। এই বণিকদের দ্বারা এবং পরবর্তিতে আগত আরও কিছু ক্ষুদ্র যাযাবর গোষ্ঠি দ্বারা অতি দ্রুতই সেখানে এক ক্ষুদ্র জনপদ গড়ে উঠল।

১৯৩৭ সালের কাবা শরীফ
আবে যমযম অফুরন্ত বিশুদ্ধ পানির উৎস । বিগত ষাটের দশকে বাদশাহ্ খালেদেও শাসনামলে আধুনিক যন্ত্রপাতির দ্বারা যমযম কুপ পরিস্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ কাজে তত্বাবধানে নিয়োজিত প্রকৌশলী ইয়াহইয়া কোশকের প্রদত্ত বিবরণ থেকে জানা যায় যে, বড় ধরনের কয়েকটি পাথরের তলদেশ থেকে প্রবল বেগে পানি উৎসারিত হচ্ছে। সবচাইতে বড় পাথরের চাঙ্গটির উপর স্পষ্ট আরবী হরফে ’বি-ইসমিল্লাহ্ ’কথাটি উৎকলিত রয়েছে। 
যমযম কুপ

আবদুল মুত্তালিব আলাইহি সালাম’র সময় কুপের গভীরতা ছিল মাত্র ১৪ ফুট। খলিফা মামুনুর রশীদের আমলে পুনরায় তা খনন করা হয়। এ সময় পানির নিঃসরণ খুব বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি কুপের বাইরে উপচে পড়া শুরু করেছিল। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী পর সৌদি সরকার আধুনিক মেশিনের সাহায্যে কুপকে পুনঃখনন করেন। দু’জন ডুবুরি কুপের তলদেশে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, সেখানে রং-বেরংয়ের মাটির স্তর জমাট বেঁধে আছে, আর অবিরাম নির্গত পানিকে পরিশোধন করছে। তারা আল্লাহর এ কুদরত দেখে বিস্মিত হয়ে যান। বর্তমানে যমযম কুপের গভীরতা ৫১ ফুট।
ভারী মোটরের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি উত্তোলন
 জম জমের পানির বৈশিষ্ট :
১) আল্লাহ তা’লার অসীম কুদরতে ৪০০০ বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছিল।
২) ভারী মোটরের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি উত্তোলন করার পরও পানি ঠিক সৃষ্টির সূচনাকালের ন্যায়।
৩) পানির স্বাদ পরিবর্তন হয়নি, জন্মায়নি কোন ছত্রাক বা শৈবাল।
৪) সারাদিন পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটেই আবার পূর্ণ হয়ে যায় কূপটি।
৫) এই কূপের পানি কখনও শুকিয়ে যায়নি, সৃষ্টির পর থেকে একই রকম আছে এর পানি প্রবাহ, এমনকি হজ্ব মউসুমে ব্যবহার ক’য়েক গুন বেড়ে যাওয়া সত্বেও এই পানির স্তর কখনও নিচে নামে না।
৬) সৃষ্টির পর থেকে এর গুনাগুন, স্বাদ ও এর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান একই পরিমানে আছে।
৮) এই কূপের পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট এর পরিমান অন্যান্য পানির থেকে বেশী, এজন্য এই পানি শুধু পিপাসা মেটায় তা না, এই পানি ক্ষুধাও নিবারণ করে।
৯) এই পানিতে ফ্লুরাইডের পরিমান বেশী থাকার কারনে এতে কোন জীবানু জন্মায় না।
১০) এই পানি পান করলে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।


১৯৪১ সালের কাবা শরীফ
মহান খোদার কাজসমূহ কতই না মহৎ! তাই তো যবুরে আছে-
‘তিনি প্রান্তরকে জলাশয়ে,
মরুভূমিতে জলের ঝর্ণা তৈরী করেন,
আর সেখানে তিনি ক্ষুৎ পিপাসিতকে বাস করান,
যেন তারা বসতি নগর তৈরী করে,
এবং ক্ষেতে বীজ বপন ও দ্রাক্ষালতা রোপন করে,
এবং উৎপন্ন ফল সঞ্চয় করে।
তিনি তাদেরকে আশীর্বাদ করেন, তাই তারা অতিশয় বৃদ্ধি পায়,
এবং তিনি তাদের পশুগণকে হ্রাস পেতে দেন না।
(১০৭:৩৫-৩৮)

অজানা সালের কাবা শরীফের নকশা


১৯৪২ সালের কাবা শরীফ
 

১৯৫০ সালের কাবা শরীফ
 

১৯৫৩ সালের কাবা শরীফ

১৯৫৪ সালের কাবা শরীফ

১৯৬০ সালের কাবা শরীফ
 

১৯৮৮ সালের কাবা শরীফ
তথ্য সূত্র :উইকিপিডিয়া,সুন্নীপিডিয়া,সামহোয়্যার ইন ব্লগ,হামিদুর রহমান পলাশের ব্লগ ও ইন্টার নেট


৩টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

এত সুন্দর অজানা কথা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ 🌼

নামহীন বলেছেন...

একটি তথ্যবহুল আলোচনা। ইতিহাস সম্বৃদ্ধ তথ্য আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।

Shabbir Ahammed বলেছেন...

nice...