শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় তাওবা

 আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় তাওবা

আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুত পবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরি। তাই নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ আলোচনা তুলে ধরা হল।

তাওবা কাকে বলে?

খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করেন তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং, এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না। এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।
মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী।
যেমন আল্লাহ বলেন:
হে ঈমাদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে।
[সূরা নূর -৩১]
উল্লেখিত আয়াতটি মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মাখলুক যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না।
তাওবার ফলাফল,
ইমাম গাজালী রহ. তার কিতাব মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেন “অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার উপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর । আর তাওবা করবে তুমি দুইটি কারণে,
এক,
তাওবার কারণে আল্লাহ তোমাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং তোমার নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে। গুনাহের পরিণতি হল, গুনাহ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিবাকত্ব করে এবং লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। গুনাহতে আবদ্ধ লোককে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলা ও আল্লাহর দীনের খেদমতে অগ্রসর হতে গুনাহ বারণ করে। গুনাহের বোঝা ভারি হলে সকল প্রকার নেক আমল তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য আর কোন নেক আমল করা সহজ হয় না ইবাদত বন্দেগীতে সে আর কোন উৎসাহ পায় না। আর সব চেয়ে বিপদজনক কথা হল, যারা সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের অন্তর কালো হয়ে যায়, ফলে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। অন্তর ভাল মন্দের বিচার করতে অক্ষম হয়ে যায়, তাদের অন্তর পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন ভাল কাজ তার অন্তর কবুল করে না।
তখন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সে আর কোন মুক্তি বা নাজাতের পথ খুজে পায় না। কোন কিছুতেই তৃপ্তি অনুভব করে না। সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। নিজের জন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না এবং পায় না কোন আশ্রয় কেন্দ্র। পরিণতিতে ধাবিত হয় গভীর অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে। ধীরে ধীরে গুনাহ তাকে ঈমান হারা হওয়া এবং শিরক ও কুফরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
আরো আশ্চযের্র বিষয় হল, যে ব্যক্তি র্দুভাগা এবং যার অন্তর পাথরের চেয়েও বেশী কঠিন, তাকে কিভাবে আল্লাহর আনুগত্যের তাওফীক দেয়া হবে ? তাকে কিভাবে আহ্বান করা হবে কল্যাণের পথে ? অথচ সে গুনাহের কাজেই অবিচল, তার মধ্যে কোন অনুভূতি নাই। সে যে একজন অপরাধী ও অন্যায়কারী এ বিষয়ে তার মধ্যে কোন চেতনা জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাকে কিভাবে কাছে আনা হবে যে নাপাকী ও র্দূগন্ধময় বস্তুর সাথে সর্বদা মাখামাখি করছে, গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে অহর্নিশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
 মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে,তার মুখ থেকে র্দূগন্ধ বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে তার কাছ থেকে দুই জন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। তখন আর তার মুখ ও জিহবা আল্লাহর যিকিরের উপযোগী থাকে না
ফলে গুনাহে লিপ্ত থাকে এ ধরনের খুব কম লোকই আছে যারা পরর্বতীতে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে এবং আল্লাহর ইবাদতে কোন স্বাদ আস্বাদন করে। যদি সে কোন দান-সদকা করে তা অনেক কষ্টে, এতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না, আত্মার কোন তৃপ্তি হয় না এগুলো সবই হল গুনাহের পরিণতি এবং তাওবা না করার ফলাফল।
জৈনেক লোক সত্য কথাই বলছেন, যদি আপনি দিনে রোজা এবং রাতে ইবাদত করতে না পারেন, তাহলে মনে রাখবেন আপনি একজন হাতে পায়ে কড়া পরিহিত শিকলাবদ্ধ লোক। আপনার গুনাহই আপনাকে এ পরিণতিতে টেনে এনেছে।

আর দ্বিতীয় বিষয় হল, আপনাকে যে কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে তা হল, যাতে আল্লাহ আপনার ইবাদত বন্দেগীগুলো কবুল করেন। কারণ, পাওনাদার সাধারণত উপঢৌকন গ্রহণ করে না। গুনাহ হতে বিরত থাকা, গুনাহ হতে তাওবা করা এবং প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করা হল ফরজ কাজ। আর অন্যান্য সকল ইবাদত তা সবই নফল। সুতরাং, মূল পাওনা পরিশোধ ছাড়া আল্লাহ তাআলা আপনার থেকে কিভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করবেন? আপনি কীভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈধ ও মুবাহ কাজা গুলি ছেড়ে দিবেন অথচ আপনি এখনো আল্লাহর নাফরমানী এবং নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত। 

তাওবাতুন নাছুহা কি?
মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ, মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে।
জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। মনে রাখতে হবে তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়া জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তাবায়ন ছাড়া তা কবুল হয় না।
এর জন্য চারটি র্শত আছে
(১) পূর্বের কৃত কাজের উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।
(২) এমন কাজ দ্বিতীয় বার না করার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
(৩) আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করা।
(৪) কবীরা গুনাহের কারণে আপনার উপর যে কর্তব্য বা ঋণের দায়িত্ব বর্তায় তা পরিশোধ করা, যেমন, আপনি কাউকে গালি দিয়েছেন অথবা কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাহলে আপনার কর্তব্য হল, পাওনাদারকে তার পাওনা ফেরত দেয়া এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি আপনি এমন কোন অন্যায় করেন যার মধ্যে অন্যের অধিকারের কোন সম্পর্কে নেই। তাহলে পূর্বের তিনটি শর্ত পূর্ণ করলেই তওবা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর দরাবারে আশা করা যাবে যে তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তওবা যেন তিনি কবুল করেন।
যে কারণে তাওবা করতে হবে
আর মনে রাখতে হবে তোমাকে দুটি কারণে তাওবা করতে হবে। তার একটি কারণ হল, যাতে তোমার আল্লাহর আনুগত্য করা ও বন্দেগী করার সৌভাগ্য লাভ হয়। কারণ, গুনাহের খারাব পরিণতি হল, গুনাহের কারণে বান্দা যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়ে যায় এবং অপমান অপদস্থ হয়। গুনাহ একজন মানুষকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে দিকে অগ্রসর হওয়া ও তাঁর গোলামীর দিকে অগ্রগামী হওয়া থেকে বাধা দেয়। এ ছাড়া যার গুনাহের বোঝা ভারি হয়ে যায়, তার জন্য নেক কাজ করা এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর হওয়া আর সহজ থাকে না। সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকার কারণে মানুষের অন্তরসমূহ কালো হয়ে যায়। ফলে অন্তরসমূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং তা পাথরের মত কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে আর কোন ইখলাস থাকে না ইবাদত বন্দেগীতে কোন মজা ও স্বাদ উপভোগ করে না। আল্লাহ তাআলা যদি তার প্রতি অনুগ্রহ না করে তাহলে গুনাহ গুনাহগার ব্যক্তিকে কুফর ও বেঈমানীর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কী আশ্চর্য! যে গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত তাকে কীভাবে আল্লাহ তার গোলামীর সুযোগ দিবেন। কীভাকে তাকে তার দীনের খেদমতের জন্য ডাকবে যে সর্বদা তার নাফরমানীতে মশগুল এবং অবাধ্যতায় নিমগ্ন। কীভাবে তাকে মুনাজাতের জন্য কাছে টেনে আনবে যে ময়লা আবর্জনা ও নাপাকীতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন কোন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন তার মুখ থেকে যে দূগর্ন্ধ বের হয় তাতে তার থেকে দুইজন ফেরেস্তা দূরে সরে যায়। ফলে এ জিব্হা কীভাবে উপযুক্ত হবে আল্লাহর যিকির করার ? সুতরাং, এতে বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নাই, যে লোক আল্লাহর নাফরমানী ও তার হুকুমের বিরোধিতার উপর অটল থাকে সে কখনো ভালো কাজের তাওফীক লাভ করতে পারে না এবং তার জন্য নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে আল্লাহর ইবাদতে কাজে লাগানো সহজ হয় না। সে যদি খরচ করে তবে তাকে অনেক কষ্টে খরচ করতে হয়, তাতে কোন মানসিক স্বস্তি ও আন্তরিক তৃপ্তি পায় না এবং কোন স্বাদ উপভোগ করে না। এমন হবার মূল কারণ হচ্ছে, সে সব সময় গুনাহতে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ছেড়ে দেয়া। সুতরাং আপনাকে আল্লাহর দরবারে বার বার তাওবা করতে হবে এবং গুনাহের কাজসমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।
গুনাহের প্রকার,
গুনাহ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
১. আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর যে সকল ইবাদত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া। যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় নাকরাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাপ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদত ছুটে গিয়াছে তা যথা সম্ভব ক্বাযা আদায় করা। আর যদি ক্বাজা আদায় করা সম্ভব না হয় তার বিকল্প যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে। এবং আল্লাহর নিকট হতে মাপ করিয়ে নিতে হবে।
২. আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সংঘটিত গুনাহসমুহ। যেমন: মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে পত্যয়ী হতে হবে যে এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
৩. গুনাহের সর্ম্পক বান্দার সাথে। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক। এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে,
(ক) ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত, এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটি হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা হালাল করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপুস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে তার উপর রাজি করিয়ে দেয়।
(খ) মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমনÑ হত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব নাহয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
(গ) মানুষের সম্ভ্রম হরণ করা। যেমন গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে। যাতে আল্লাহ তাকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং তার জন্য বেশী বেশী প্রার্থনা করবে।
(ঘ) ইজ্জত হরণ, যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা।
গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকসমূহ:
মনে রাখতে হবে, গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও খারাব পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল। যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই।
১। ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ, ইলম হল নূর যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন কিন্তু গুনাহ-পাপাচার এ নূরকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো ইলম তথা শরিয়তের জ্ঞান লাভে ধন্য হতে পারে না। ইলম হল, আল্লাহর নূর আর গুনাহ হলো অন্ধকার। আর এ কথা স্পষ্ট যে, আলো ও অন্ধাকার কখনো একত্র হতে পারে না।

২। রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া। মুসনাদে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বান্দা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মানুষের রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয়। সুতরাং, রিযিকের স্বচ্ছলতা কামনাকারীদের জন্য গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
৩। গুনাহ দেহ ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয়। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চোহারা উজ্জ্বল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায়, দেহের শক্তি ও মনোবল চাঙ্গা হয়, মানুষের অন্তরে মুহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিক সংকীর্ণ হয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়।
৪। আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে বঞ্চিত হয়। যদি গুনাহের কারণে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে।
৫। গুনাহকে ঘৃণা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সামলোচনা করে এতে সে লজ্জাবোধ বা গুনাহ করাকে খারাব ও অন্যায় মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -

‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র ঘোষণা দানাকারী ছাড়া। আর ঘোষণা হল, কোন ব্যক্তি রাতে কোন পাপ করল আর আল্লাহ তার অপকর্মকে গোপন রাখলেন কিন্তু লোকটি সকালে লোকদের ডেকে ঘোষণা করতে লাগল, হে অমুক আমি রাতে এই এই... কাজ করেছি। রাতে তার রব তাকে গোপন করল আর সকালে সে আল্লাহর গোপন করা বিষয় প্রকাশ করে দিল। (বুখারী ও মুসলিম)
৬। বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। তার মধ্যে অপরাধ বোধ অবশিষ্ট থাকে না। ফলে সে কোন অপরাধকে অপরাধ মনে করে না। আর এটাই হল একজন মানুষের জন্য ধ্বংসের নিদর্শন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

“মুমিন নিজ গুনাহগুলোকে এমনভাবে দেখে যে, যেন একটি পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে আশঙ্কা করছে যে সেটি তার উপর পতিত হবে আর পাপী নিজ গুনাহসমূহকে মাছির মত মনে করে যা তার নাকের উপর পড়েছে একটু পর উড়ে গিয়েছে। (বুখারী)
৭। গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়ে থাকে। কারণ হল, সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে কোথাও ইজ্জত সম্মান পাওয়া যাবে না। তিনি যাকে ইচ্ছা ইজ্জত দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বেÑইজ্জত করেন। আল্লাহ বলেন-
‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহরই।’’ (সূরা ফাতের- ১০)
অর্থাৎ, ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ, আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যে ইজ্জত তালাশ করবে তাকে অবশ্যই বেইজ্জত হতে হবে। তাকে ভোগ করতে হবে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর হতাশার গ্লানী। তাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই ইজ্জত তালাশ করতে হবে।
৮। গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয় , ফলে জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়ে যায়।
৯। গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন-
অর্থাৎ ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’’ (মুতাফফিফীন:১৪)
এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তখন তার অন্তর আর ভাল কিছু গ্রহণ করে না। ভাল কাজ, ভাল কোন উপদেশ এবং মনীষীদের বাণী সবই তার কাছে অসহনীয় ও বিরক্তিকর মনে হয়। ফলে সে তার মনের ইচ্ছা ও খেয়াল খুশি মত যা ইচ্ছা তাই করতে থাকে। কোন অন্যায় অপরাধ তার নিকট অন্যায় মনে হয় না। গুনাহ তার নিকট আর গুনাহ বলে বিবেচিত হয় না। এ ধরনের লোকের সংখ্যা বর্তমান সমাজে অসংখ্য রয়েছে। তারা সালাত আদায় করে না, সওম পালন করে না, যাকাত প্রদান করে না। কিন্তু এ সব যে প্রতিটিই মারাত্মক অপরাধ তা তাদের মনে একটুও রেখাপাত করে না। তারা যে অপরাধী, গুনাহগার ও পাপী এ ধরনের কোন অনুভূতি তাদের মনষ্পটে জাগ্রত হয় না এবং তাদের বিবেক বিন্দু পরিমাণও নাড়া দেয় না। ফলে তাদের অন্তর পাথরের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে যায়। তাদের অন্তরসমূহ হককে গ্রহণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এক পর্যায়ে ঈমান হারা হয়ে মারা যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরনের পরিণতি হতে হেফাজত করুন।
১০- গুনাহ বান্দাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগারদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন - সুদ গ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী- সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনিভাবে অভিশাপ করেছেন চোরের উপর। গাইরুল্লাহর নামে জাবেহকারী, জীবের ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারীসহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেছেন। সুতরাং, মনে রাখতে হবে, যে গুনাহের কারণে আল্লাহ ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন সে সব গুনাহে লিপ্ত হলে তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগিদার হতে হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগিদার হয় তার পরিণতি যে কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১১- গুনাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। কেননা, আল্লাহ তার নবীকে বান্দা বান্দীদের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।
সুপ্রিয় পাঠক, ইবাদত-আনুগত্যের জন্য মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন নানা নেয়ামতরাজী দ্বারা। সুতরাং আনুগত্য করাই আমাদের কাজ। কল্যাণ ও কামিয়াবির পথ এটিই। তার পরও নফস-শয়তানের প্রবঞ্চনায় অন্যায়-অপরাধ হতে পারে, হয়ে যায়। কিন্তু রহমানুর রাহীম মহান আল্লাহর করুণা সীমাহীন। তিনি বান্দাকে অপরাধ মুক্ত হিসাবে হাশরে উপস্থিত দেখতে চান। তাই অন্যায় হয়ে গেলেও তার প্রতিকারের সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন। নবীজী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পাপ থেকে তওবাকারী এমন হয়ে যায় যেন সে পাপই করেনি। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মৃত্যুর লক্ষণ শুরু হওয়া অবধি বান্দার তওবা কবুল করেন। তাই সুবিবেচনা ও নিজের প্রতি ইনসাফের পরিচয় হবে, সর্বদা পাপমুক্ত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যদি পাপ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তওবা সুযোগ গ্রহণ করা। তওবাতে আল্লাহ অনেক খুশি হন। আল্লাহ আমাদেরকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণের পথে পূর্ণঅবিচল থাকার তাওফীক দান করুন।

অপর দিকে আলেমগণ বলেন, সকল প্রকার পাপ, অপরাধ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব তথা অবশ্য করণীয়।
তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ - ফিরে আসা।
পরিভাষায় তওবা হল : যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে ঐ সকল কথা ও কাজে লেগে যাওয়া, যা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় ও তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা যায়।
এক কথায় পাপ-কর্ম থেকে ফিরে এসে সৎকাজে প্রবৃত্ত হওয়া।
পাপ বা অপরাধ দু ধরনের হয়ে থাকে :
এক. যে সকল পাপ শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক বা অধিকার  সম্পর্কিত। যেমন শিরক করা, নামাজ আদায় না করা, মদ্যপান করা, সুদের লেনদেন করা ইত্যাদি।
দুই. যে সকল পাপ বা অপরাধ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। যে পাপ করলে কোন না কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন, জুলুম-অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি, ঘুষ খাওয়া, অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্নসাৎ ইত্যাদি।
প্রথম প্রকার পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করার সাথে তিনটি শর্তের উপসি'তি জরুরী।
শর্ত তিনটি হল :
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
দ্বিতীয় প্রকার পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত হল মোট চারটি:
(১) পাপ কাজটি পরিহার করা।
(২) কৃত পাপটিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আন-রিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে আর এ পাপ করব না বলে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
(৪) পাপের কারণে যে মানুষটির অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়েছে বা যে লোকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার পাওনা পরিশোধ করা বা যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিয়ে তার সাথে মিটমাট করে নেয়া অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দাবী ছাড়িয়ে নেয়া।
মানুষের কর্তব্য হল, সে সকল প্রকার পাপ থেকে তাওবা করবে, যা সে করেছে। যদি সে এক ধরনের পাপ থেকে তাওবা করে, অন্য ধরনের পাপ থেকে তাওবা না করে তাহলেও সে পাপটি থেকে তাওবা হয়ে যাবে। তবে অন্যান্য পাপ থেকে তওবা তার দায়িত্বে থেকে যাবে। একটি বা দুটো পাপ থেকে তাওবা করলে সকল পাপ থেকে তাওবা বলে গণ্য হয় না। যেমন এক ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে, ব্যভিচার করে, মদ্যপান করে। সে যদি মিথ্যা কথা ও ব্যভিচার থেকে যথাযথভাবে তওবা করে তাহলে এ দুটো পাপ থেকে তওবা হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু মদ্যপানের পাপ থেকে তওবা হবে না। এর জন্য আলাদা তওবা করতে হবে। আর যদি তাওবার শর্তাবলী পালন করে সকল পাপ থেকে এক সাথে তাওবা করে তাহলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
তওবা করে আবার পাপে লিপ্ত হয়ে পড়লে আবারও তাওবা করতে হবে। তওবা রক্ষা করা যায় না বা বারবার তওবা ভেঙ্গে যায় এ অজুহাতে তওবা না করা শয়তানের একটি ধোকা বৈ নয়। অন্তর দিয়ে তওবা করে তার উপর অটল থাকতে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফীক কামনা করা যেতে পারে। এটা তাওবার উপর অটল থাকতে সহায়তা করে।
কুরআন, হাদীস ও উম্মাতের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাপ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
হে ঈমানদারগন! তোমরা সকলে তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন-নূর : ৩১)
তিনি আরো বলেন:
আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাওবা কর। (সূরা হুদ : ৩)
তিনি আরো বলেন:
হে ঈমানদারগন! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, বিশুদ্ধ তাওবা। (সূরা আত-তাহরীম : ৮)
এ আয়াতসমূহ থেকে আমরা যা শিখতে পারি:
১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল ঈমানদারকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২- তাওবা দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য লাভের মাধ্যম।
৩- তাওবার আগে ইসে-গফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তারপর তাওবা। ভবিষ্যতে এমন পাপ করব না বলে তাওবা করলাম কিন' অতীতে যা করেছি এ সম্পর্কে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম না। মনে মনে ভাবলাম যা করেছি তা করার দরকার ছিল, ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন কি? তাহলে তাওবা কবুল হবে না। যেমন দ্বিতীয় আয়াতটিতে আমরা দেখি, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাওবা কর।
৪- তওবা ও ইসে-গফার হল পার্থিব জীবনে সুখ শানি- লাভের একটি মাধ্যম যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :
আর তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর তৎপর তাওবা কর, তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট কাল পর্যন- সুখ-সম্ভোগ দান করবেন। (সূরা হুদ : ৩)
নূহ আলাইহিস সালাম তার সমপ্রদায়কে  বলেছিলেন :
আমি বললাম, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের সমৃদ্ধি দান করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। (সূরা নূহ : ১০-১২)
৫- আল্লাহ তাআলা বিশুদ্ধ তাওবা করতে আদেশ করেছেন। বিশুদ্ধ তাওবা হল যে তাওবা করা হয় সকল শর্তাবলী পালন করে। শর্তসমূহ ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।

এ বিষয়ের হাদীসসমূহ :
হাদীস-১৩. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : আমি দিনের মধ্যে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তেগফার) করি ও তাওবা করি। বর্ণনায় : বুখারী
হাদীসটি থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ছিলেন মাসূম অর্থাৎ সকল পাপ থেকে মুক্ত। তারপরও তিনি কেন ইস্তেগফার ও তওবা করেছেন? উত্তর হলঃ
(ক) তিনি উম্মতকে ইস্তেগফার ও তাওবার গুরুত্ব অনুধাবন করানোর জন্য নিজে তা আমল করেছেন।
(খ) পাপ না থাকলেও তাওবা ইস্তেগফার করা যায়। এটা বুঝাতে তিনি এ আমল করেছেন। আর তখন তওবা ও ইসে-গফারের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।
(গ) ইস্তেগফার ও তওবা হল ইবাদত। পাপ না করলে তা করা যাবে না এমন কোন নিয়ম নেই। কেহ যদি তার নজরে কোন পাপ নাও দেখে তবুও সে যেন ইসে-গফার ও তওবা করতে থাকে। হতে পারে অজান্তে কোন পাপ তার দ্বারা সংঘটিত হয়ে গেছে বা কোন পাপ করে সে ভুলে গেছে।
২- সত্তর সংখ্যাটি আধিক্য বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝাতে নয়।
৩- ইস্তেগফার ও তওবা আমলটি সর্বদা অব্যাহত রাখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
হাদীস-১৪. আগার ইবনে ইয়াসার আল-মুযানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন : হে মানব সকল তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর আমি দিনে একশত বারের বেশী তাওবা করে থাকি। বর্ণনায় : মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ছিলেন মাসূম অর্থ্যাৎ সকল পাপ থেকে মুক্ত। তারপরও তিনি সর্বদা ইসে-গফার ও তাওবা করেছেন। কারণ, তিনি উম্মাতকে ইসে-গফার ও তাওবার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে চেয়েছেন। পাপ না থাকলেও তাওবা ইসে-গফার করা যায়, এবং এর মাধম্যে আল্লাহ তাআলার কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি হয়, এটা উম্মাতকে শিখিয়েছেন।
২- ইস্তেগফার ও তওবা হল ইবাদত। পাপ না করলে তা করা যাবে না এমন কোন নিয়ম নেই। কেহ যদি তার নজরে কোন পাপ নাও দেখে তবুও সে যেন ইসে-গফার ও তাওবা পরিহার না করে। হতে পারে তার দ্বারা অজানে- কোন পাপ সংঘটিত হয়ে গেছে বা কোন পাপ করে সে ভুলে গেছে।
৩- হাদীসে একশ সংখ্যাটি আধিক্য বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সংখ্যা বুঝাতে ব্যবহার করা হয়নি। তাইতো দেখা যায় কোন হাদীসে সত্তর বারের কথা এসেছে, আবার কোন হাদীসে একশ বারের কথা এসেছে।
৪- ইসে-গফার ও তাওবা আমলটি সর্বদা অব্যাহত রাখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
হাদীস-১৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামযা আনাস ইবেন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের তাওবায় আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশী আনন্দিত হন যে ব্যক্তি তার উট জনমানবহীন প্রান-রে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার তা ফিরে পেয়েছে। বর্ণনায়ঃ বুখারী ও মুসলিম
তবে সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ তার বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যার উট খাদ্য ও পানীয়সহ জনমানবহীন মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। এ কারণে সে জীবন থেকে নিরাশ হয়ে কোন এক গাছের নীচে শুয়ে পড়ল। এমন নৈরাশ্য জনক অবস্থায় হঠাৎ তার কাছে উটটিকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে এর লাগাম ধরে আনন্দে আত্নহারা হয়ে বলে ফেলল, হে আল্লাহ! তুমি আবার বান্দা, আমি তোমার প্রভূ। অর্থ্যাত সে এ ভুলটি করেছে আনন্দের আধিক্যে।
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- আল্লাহ তাআলা কত বড় মেহেরবান যে, তিনি বান্দার তাওবা কবুল করে থাকেন ও তাওবাকারীকে ভালোবাসেন। যেমন তিনি নিজেই বলেছেন :
إِ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন পবিত্রতা অর্জনকারীদের। সূরা আল-বাকারা, আয়াত- ২২২
২- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মাতকে তাওবা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
৩- অনিচ্ছাকৃত পাপ বা ভুলের শাস্তি আল্লাহ দেবেন না। যেমন উল্লেখিত ব্যক্তি অনিচ্ছায় আল্লাহকে বান্দা বলে ফেলেছে।
৪- ওয়াজ-নসীহতে ও শিক্ষা দানে বিভিন্ন উদাহরণ, উপমা  দেয়া দোষের কিছু নয়। বরং উত্তম। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ হাদীসে এক ব্যক্তির উপমা দিয়েছেন।
হাদীস-১৬. আবু মূসা আব্দুল্লাহ বিন কায়েস আশআরী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন : আল্লাহ তাআলা রাত্রি বেলা তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যেন দিনের বেলা যারা পাপ করেছে তারা তাওবা করে নেয়। দিনের বেলাও তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের পাপীরা তাওবা করে নেয়। এমনিভাবে (তার তাওবার দরজা) উম্মুক্ত থাকবে যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উদিত হয়। বর্ণনায় : মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত সকল সময় ব্যাপী। কোন সময়ের সাথে খাছ নয়। যদিও কোন কোন সময়ের আলাদা ফজিলত রয়েছে।
২- দেরি না করে তাড়াতাড়ি তাওবা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
৩- তাওবার দ্বার সর্বদা উম্মুক্ত। যে কোন সময় তাওবা করা যেতে পারে। তবে মৃত্যু বা কেয়ামতের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাওবার দ্বার বন্ধ হয়ে যায়।

হাদীস-১৭. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক দিয়ে সূর্য উদয়ের পূর্বে (কেয়ামত শুরুর পূর্বে) তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করবেন। বর্ণনায় : মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- চূড়ান্ত মুহুর্তের অপেক্ষা না করে এক্ষুনি তওবা করা কর্তব্য।
২- তওবার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে এ হাদীসে।
৩- কেয়ামতের একটি বড় আলামত হল সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উদিত হওয়া।
৪- তওবা কবুলের সময়টা ব্যাপক বিস্তৃত। এমনকি তা কেয়ামতের পূর্বক্ষণে হলেও তওবা গ্রহণ করা হবে।

হাদীস-১৮. আব্দুল্লাহ বিন উমার রা. থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবা কবুল করেন গড়গড় করার (মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশের) পূর্ব পর্যন্ত। বর্ণনায় : তিরমিজী
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- তাওবার একটি শর্ত হল, তাওবা করতে হবে মৃত্যুর আলামত প্রকাশের পূর্বে। মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পেতে শুরু করলে তাওবা কবুল হবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

তাদের জন্য তাওবা নেই, যারা ঐ পর্যন্ত পাপ করতে থাকে, যখন তাদের কারো নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে নিশ্চয়ই আমি এখন তওবা করলাম। সূরা আন-নিসা, আয়াত- ১৮
২- সুস্থ জীবন তওবার উপযুক্ত সময়। জীবন থেকে নিরাশ হওয়ার পর তওবার উপযুক্ত সময় আর থাকে না। এমনিভাবে পাপ করার সামর্থ থাকাকালীন সময়টা হল তওবার উপযুক্ত সময়। পাপ করার ক্ষমতা লোপ পেয়ে গেলে তওবা করা যথোপযুক্ত নয়। তবুও তওবা করা উচিত।


হাদীস-১৯. যির ইবনে হুবাইশ বলেনঃ মোজার উপর মাসেহ সম্পর্কে জানার জন্য আমি সাফওয়ান ইবনে আসসাল রা. এর কাছে আসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন হে যির! তুমি কি উদ্দেশ্যে এসেছ? আমি বললাম জ্ঞান অর্জনের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, ফেরেশ্‌তাগণ জ্ঞান অর্জনকারীর জ্ঞান অন্বেষণে সন্তুষ্ট হয়ে তার সম্মানে তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়। আমি বললাম, মল-মুত্র ত্যাগের পর মোজার উপর মাসেহ করা সম্পর্কে আমার মনে খটকা লাগে। আপনিতো নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবী। তাই এ ব্যাপারে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। আপনি কি এ ব্যাপারে তাঁর থেকে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যখন আমরা সফরে থাকতাম তখন তিন দিন ও তিন রাত পর্যন্ত তিনি মল-মুত্র ত্যাগের পর, নিদ্রা থেকে জাগার পর মোজা না খোলার জন্য বলেছেন। তবে গোসল ফরজ হলে অন্য কথা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভালোবাসা সম্পর্কে তাকে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। হঠাৎ একজন বেদুইন এসে উঁচুস্বরে ডাক দিয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ!। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মত উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বললেন : এগিয়ে এসো! আমি তাকে বললাম, তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার আওয়াজ নীচু কর। তুমিতো নবীর দরবারে এসেছ। তার দরবারে আওয়াজ বড় করতে নিষেধ করা হয়েছে। বেদুইন লোকটি বলল, আমি আমার আওয়ায ছোট করতে পারছি না। কোন ব্যক্তি যখন কোন দলকে ভালোবাসে অথচ এখনও তাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারেনি? (সে অস্থির হতেই পারে, এতে দোষের কি?)
তার কথা শুনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেনঃ যে যাকে ভালোবাসে কেয়ামতের দিন সে তার সাথে থাকবে। এভাবে তিনি কথা বলতে বলতে পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা বললেন। যার প্রস্থের দূরত্ব অতিক্রমে পায়ে হেটে গেলে বা যানবাহনে গেলে চল্লিশ বা সত্তর বছর সময় লাগবে। হাদীস বর্ণনাকারী সুফিয়ান এ কথার ব্যাখ্যায় বলেন, যে দিন আল্লাহ আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে শাম (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, জর্দান) অঞ্চলের দিক দিয়ে এ দরজা তাওবার জন্য উম্মুক্ত রেখেছেন। পশ্চিম দিক দিয়ে সুর্যোদয় না হওয়া পর্যন- এ দরজা বন্ধ করা হবে না। বর্ণনায় : তিরমিজী।
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করার জন্য উৎসাহিত করেছে এ হাদীস। যারা ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষনে লিপ্ত থাকে, তাদের ফজিলত উল্যেখ করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা হল ধর্মীয় জ্ঞান। যারা এ জ্ঞান অন্বেষনে লিপ্ত ফেরেশ্‌তাগন তাদের সম্মান করে থাকেন।
২- মোজার উপর মাসেহ করার সুন্নাত প্রমাণিত। কিছু শর্ত স্বাপেক্ষে অজু করার সময় মোজা না খুলে মোজার উপর মাসেহ করা যায়। পা ধৌত করার প্রয়োজন হয় না। মোজার উপর মাসেহ করা শর্তসমূহ হল:
(ক) অজু থাকা অবস্থায় মোজা পরিধান করতে হবে।
(খ) মোজা পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন হতে হবে।
(গ) পায়ে পানি প্রবেশ প্রতিরোধ করে এমন মোজা হতে হবে।
(ঘ) দীর্ঘ সময় হাটা-চলা করলেও মোজা ফেটে যায় না বা ছিড়ে যায় না, এমন ধরণের মোজা হতে হবে।
(ঙ) অজুর সময়ে মোজার উপর মসেহ করার বিধান সীমিত। ফরজ গোসলে নয়।
(চ) মুকীম অর্থাৎ নিজ বাড়ীতে অবস্থান রত ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধানের পর থেকে একদিন ও এক রাত সময় পর্যন্ত মোজার উপর মাসেহ করার সুযোগ লাভ করবেন। আর মুসাফির তিন দিন তিন রাত মাসেহ করার সুযোগ পাবেন।
৩- আলেম ও বিদ্বানদের সম্মান করা। তাদের মজলিসে উচ্চস্বরে কথা না বলা।
৪- অজ্ঞ ব্যক্তিকে শিক্ষাদানে বিনম্র পন্থা অবলম্বন করা ও কঠোরতা পরিহার করা।
৫- আলেম-উলামাদের ভালোবাসা ও তাদের সম্মান করা এবং তাদের সহচর্য লাভ করার চেষ্টা করা।
৬- ভালোবাসার দাবী হল, যাকে ভালোবাসবে তার আদর্শের অনুসরণ করবে।
৭- এমন লোকদের ভালোবাসা উচিত যার সাথে হাশর হলে সে ভাগ্যবান বলে বিবেচিত হবে। এমন কাউকে ভালোবাসা উচিত নয় যে আখেরাতে হতভাগা বলে বিবেচিত হবে।
৮- ইসলামের কোন বিষয়ে মনে সংশয় সৃষ্টি হলে বা খটকা লাগলে তা আলেমদের কাছে যেয়ে বা প্রশ্ন করে নিরসন করা দরকার। যেমন সফওয়ান বলেছেন আমার মনে খটকা লাগে। তিনি তার সংশয় দূর করতে দীর্ঘ সফর করেছেন।
৯- তাওবার দরজা সর্বদা খোলা আছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করার কারণে হাদীসটি তাওবা অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে।

হাদীস-২০. আবু সাঈদ সাদ ইবনে মালেক ইবনু সিনান আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের পূর্বের এক যুগে এক ব্যক্তি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করল। এরপর সে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ আলেমের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে এক পাদ্রীকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে তার কাছে গিয়ে বলল, সে নিরানব্বই জন মানুষকে খুন করেছে তার তাওবার কোন ব্য আছে কি না? পাদ্রী উত্তর দিল, নেই। এতে লোকটি ক্ষিপ্ত হয়ে পাদ্রীকে হত্যা করে একশত সংখ্যা পুরণ করল। এরপর আবার সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেম সম্পর্কে জানতে চাইল। তাকে এক আলেমেকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে আলেমের কাছে যেয়ে জিজ্ঞাসা করল, সে একশত মানুষকে খুন করেছে, তার তাওবা করার কোন সুযোগ আছে কিনা? আলেম বললেন, হ্যাঁ, তাওবার সুযোগ আছে। এ ব্যক্তি আর তাওবার মধ্যে কি বাধা থাকতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু মানুষ আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করছে। তুমি তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করতে থাকো। আর তোমার দেশে ফিরে যেও না। সেটা খারাপ স্থান। লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে পথ চলতে শুরু করল। যখন অর্ধেক পথ অতিক্রম করল তখন তার মৃত্যুর সময় এসে গেল। তার মৃত্যু নিয়ে রহমতের ফেরেশ্‌তা ও শাস্তির ফেরেশ্‌তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হল। রহমতের ফেরেশ্‌তাগন বললেন, এ লোকটি আন-রিকভাবে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। আর শাসি-র ফেরেশ্‌তাগন বললেন, লোকটি কখনো কোন ভাল কাজ করেনি। তখন এক ফেরেশ্‌তা মানুষের আকৃতিতে তাদের কাছে এল। উভয় দল তাকে ফয়সালাকারী হিসাবে মেনে নিল। সে বলল, তোমরা উভয় দিকে স্থানের দূরত্ব মেপে দেখ। যে দুরত্বটি কম হবে তাকে সে দিকের লোক বলে ধরা হবে। দূরত্ব পরিমাপের পর যে দিকের উদ্দেশ্যে সে এসেছিল তাকে সে দিকটির নিকটবর্তী পাওয়া গেল। এ কারণে রহমতের ফেরেশ্‌তাগণই তার জান কবজ করল। বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে ভাল মানুষদের স্থানের দিকে মাত্র অর্ধহাত বেশী পথ অতিক্রম করেছিল, তাই তাকে তাদের অন্তর্ভূক্ত বলে ধরা হয়েছে। বুখারীর আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ যমীনকে নির্দেশ দিলেন, যেন ভাল দিকের অংশটা নিকটতর করে দেয়। আর খারাপ দিকের অংশটার দুরত্ব বাড়িয়ে দেয়। পরে সে বলল, এখন তোমরা উভয় দুরত্ব পরিমাপ করো। দেখা গেল সে মাত্র অর্ধ হাত পথ বেশী অতিক্রম করেছে। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- ওয়াজ, বক্তৃতা ও শিক্ষা প্রদানে বাস-ব উদাহরণ পেশ করার অনুপম দৃষ্টান- রেখেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
২- যার ইবাদত কম কিন্তু ইলম বেশী, সে শ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তির চেয়ে, যার ইবাদত বেশী ইলম কম। যেমন এ হাদীসে দেখা গেল যে ব্যক্তি ফতোয়া দিল যে তোমার তাওবা নেই সে আলেম ছিল না, ছিল একজন ভাল আবেদ। তার কথা সঠিক ছিল না। আর যে তাওবার সুযোগ আছে বলে জানাল, সে ছিল একজন ভাল আলেম। তার কথাই সঠিক প্রমাণিত হল।
৩- বিভিন্ন ওয়াজ, নসীহত, বক্তৃতা, লেখনীতে পূর্ববর্তী জাতিদের ঘটনা তুলে ধরা যেতে পারে। তবে তা যেন কুরআন-সুন্নাহ বা ইসলামী কোন আকীদার পরিপনি' না হয়।
৪- গুনাহ বা পাপ যত মারাত্নকই হোকনা কেন, তা থেকে তাওবা করা সম্ভব।
৫- দাঈ অর্থাত ইসলামের দাওয়াত-কর্মীদের এমন কথা বার্তা বলা দরকার যাতে মানুষ আশান্বিত হয়। মানুষ নিরাশ হয়ে যায়, এমন ধরনের কথা বলা ঠিক নয়।
৬-  সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা আর নৈতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা আলেম ও দায়ীদের একটি বড় গুণ।
৭- অসৎ ব্যক্তি ও অসুস্থ সমাজের সঙ্গ বর্জন করা। এবং সৎ ব্যক্তি ও সৎ সমাজের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করা কর্তব্য।
৮- ফেরেশতাগন বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন।
৯- যে আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করে আল্লাহর রহমত তার দিকে এগিয়ে আসে। তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং পথ চলা সহজ করে দেন।
১০- আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেয়ার দিকটা  প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
১১- আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী হওয়া সত্বেও আদল ও ইনসাফ পছন্দ করেন। তাই দু দল ফেরেশতার বিতর্ক একটি ন্যায়ানুগ পন্থায় ফয়সালা করার জন্য অন্য ফেরেশতা পাঠালেন।
১২- হাদীসটি দিয়ে বুঝে আসে, যে মানুষ হত্যা করার অপরাধে অপরাধী আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যদি সে তাওবা করে। অথচ অন্য অনেক সহীহ হাদীস স্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছে যে, আল্লাহ মানুষের অধিকার হরণকারীকে ক্ষমা করেন না। অতএব যে কাউকে হত্যা করল সে তো অন্য মানুষের বেচে থাকার অধিকার হরণ করে নিল। আল্লাহ তাকে কিভাবে ক্ষমা করবেন?
এর উত্তর হল : যে ব্যক্তি কোন মানুষকে হত্যা করল সে তিন জনের হক (অধিকার) ক্ষুন্ন করল। এক. আল্লাহর অধিকার বা হক। কারণ আল্লাহ মানুষ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। মানুষকে নিরাপত্তা দিতে আদেশ করেছেন। হত্যাকারী আল্লাহর নির্দেশ লংঘন করে সে তাঁর অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। দুই. নিহত ব্যক্তির অধিকার। তাকে হত্যা করে হত্যাকারী তার বেঁচে থাকার অধিকার হরণ করেছে। তিন. নিহত ব্যক্তির আত্নীয়-স্বজন, পরিবার ও সন্তানদের অধিকার। হত্যাকারী ব্যক্তিকে হত্যা করে তার পরিবারের লোকজন থেকে ভরণ-পোষণ, ভালোবাসা-মুহব্বাত, আদর-স্নেহ পাবার অধিকার থেকে চিরতরে বঞ্চিত করেছে।
হত্যাকারী এ তিন ধরণের অধিকার হরণের অপরাধ করেছে। আল্লাহর কাছে তাওবা করলে আল্লাহ শুধু প্রথম অধিকার -যা তাঁর নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট- নষ্ট করার অপরাধ ক্ষমা করবেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অপরাধ ক্ষমা করবেন না। এ হাদীসে প্রথম ধরনের অপরাধ ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। (শরহু রিয়াদিস সালেহীন মিন কালামে সাইয়েদিল মুরসালীন : মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.)

হাদীস-২১. আব্দুল্লাহ ইবনে কাআব ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত। সাহাবী কাআব রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার ছেলেদের মধ্যে আব্দুল্লাহ তাকে পথ চলতে সাহায্য করতেন। এই আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন যে, আমি আমার পিতা কাআব ইবনে মালেকের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর  সাথে তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করা সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুনেছি। কাআব রা. বলেছেন, তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আমি অন্য কোন যুদ্ধে পশ্চাতে থাকিনি। অবশ্য বদরের যুদ্ধে আমি অংশ নেইনি। কিন্তু এ যুদ্ধে যারা অংশ নেয়নি তাদের তিরস্কার করা হয়নি। কারণ, সে যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কুরাইশ কাফেলাকে বাধা দানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন (যুদ্ধ ঘোষণা হয়নি)। অবশেষে আল্লাহ তাআলা অনির্ধারিতভাবে তাদের শত্রুদের সাথে লড়াই করার সম্মুখীন করে দিলেন। আমরা আকাবার শপথের রাতে যখন ইসলামে অটল থাকার অঙ্গীকার করেছিলাম, তখন আমিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে অধিক আলোচিত বিষয়, তবুও আমি আকাবার শপথে উপসি'তির পরিবর্তে বদর যুদ্ধে উপসি'তি সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া উত্তম মনে করি না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে তাবুক যুদ্ধে আমার অংশ না নিতে পারার কারণটা হচ্ছে এই যে, এ যুদ্ধের সময় আমি যতটা শক্তিশালী ও ধনী ছিলাম এতটা ইতিপূর্বে ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এ যুদ্ধের সময় আমার দুটো উট ছিল। এর পূর্বে আমার দুটো উট কখনো ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কোথাও অভিযানে বের হবার ইচ্ছা করলে অন্য স্থানের কথা বলে গন-ব্যের কথা গোপন রাখতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অত্যাধিক গরমের সময় এ যুদ্ধের প্রস-তি গ্রহণ করেন। সফর ছিল অনেক দূরের পথে। পথিমধ্যে অনেক মরুভুমি অতিক্রম করা ছিল অনিবার্য। আর শত্রু পক্ষের সংখ্যাও ছিল বেশী। তাই তিনি এ যুদ্ধের কথা মুসলমানদের কাছে খোলাখুলিভাবে বলে দিলেন। যেন তারা যুদ্ধের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। তিনি তাদেরকে তার গন-ব্যের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন। বহু মুসলিম যোদ্ধা এ অভিযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সহযাত্রী হলেন। তখন তাদের নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য কোন রেজিষ্টার বই ছিল না। কাআব রা. বলেন, অনেক কম লোকই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ থেকে অনুপস্থিত থাকত। যে ব্যক্তি অংশ গ্রহণ না করে নিজেকে গোপন করে রাখতে চাইত, সে অবশ্যই মনে করত যে, যতক্ষণ পর্যন- তার সম্পর্কে অহী অবতীর্ণ না হবে  ততক্ষণ পর্যন- তার ভূমিকা গোপন থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যখন এ অভিযানে বের হচ্ছিলেন তখন খেজুর ফলে পাক ধরছিল। গাছ পালার ছায়া শানি-দায়ক হয়ে উঠছিল। আর আমি এ সবের প্রতি আকৃষ্ট ছিলাম। সে যাই হোক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ও তার সাথে মুসলিমগন যুদ্ধে বের হবার প্রস্তুতি আরম্ভ করলেন। আমিও তার সাথে বের হবার প্রস্তুতি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে ভোরে যেতাম আর কোন কিছু সম্পন্ন না করেই ফিরে আসতাম। আর মনে মনে আমি ভাবতাম, ইচ্ছা করলেই এ কাজ (যুদ্ধ থেকে পালিয়ে থাকা) সহজেই করতে পারব। এভাবে আমি গড়িমসি করতে থাকলাম। লোকেরা যুদ্ধ সফরের জোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজনদের নিয়ে একদিন সকালে তাবুকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অথচ আমি কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। আমি আবার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগলাম। কিন' কিছুই করলাম না। আমার এ দো-টানা ভাব অব্যাহত থাকল। এ দিকে লোকেরা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে থাকল। আমি তখন মনে মনে ভাবলাম যে, রওয়ানা হয়ে গিয়ে তাদের সাথে মিলে যাব। আহ! আমি যদি তা করতাম। এরপর আর তা আমার ভাগ্যে জুটলনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অভিযানে বের হবার পর আমি যখন মানুষদের মধ্যে চলাফেরা করতাম, তখন যাদেরকে মুনাফিক বলে ধরা হত এবং যাদেরকে আল্লাহ অক্ষম ও দুর্বল বলে গণ্য করেছিলেন, সে রকম লোক ব্যতীত আর কাউকে আমার ভুমিকায় দেখতে পেতাম না। এ অবস্থা আমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলল। তাবুক পৌছা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কথা মনে করেননি। তাবুকে তিনি লোকজনের মাঝে বসা অবস্থায় জিজ্ঞেস করলেন, কাব ইবনে মালেক কি করল? বনি সালেম গ্রোত্রের এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে তার চাদর ও দু পার্শ্বদেশ দর্শন আটকে রেখেছে। মুআজ ইবনে জাবাল রা. বললেন, তুমি যা বলেছ তা খুবই খারাপ কথা। আল্লাহর কসম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ব্যতীত আর কিছুই জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নীরব থাকলেন। এমন সময় সাদা পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তিকে মরুভুমির মরিচিকার ভিতর দিয়ে আসতে দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, তুমিযেন আবু খাইসামা হও! দেখা গেল সত্যিই সে আবু খাইসামা আনসারী। আর আবু খাইসামা হল সেই ব্যক্তি, যে এক সা খেজুর ছদকাহ করার করায় মুনাফিকরা যাকে তিরস্কার করেছিল। কাআব রা. বলেন, যখন জানতে পারলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাবুক থেকে আসছেন, তখন আমি অত্যন্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। তাই মিথ্যা অজুহাত পেশ করার প্রস-তি নিলাম। কিভাবে তার অসন'ষ্টি থেকে বাঁচতে পারব, চিন্তা করতে লাগলাম। আমার পরিবারের বুদ্ধিমান লোকদের কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাইলাম। এরপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শীঘ্রই এসে পড়বেন বলে খবর পেলাম তখন মিথ্যা বলার ইচ্ছা উধাও হয়ে গেল। এমনকি কোন কিছু দ্বারা মুক্তি পাওয়া যাবে না বলে বুঝতে পারলাম, তাই সত্য কথা বলার সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরদিন সকালে পৌছে গেলেন। আর তিনি সফর থেকে ফিরে মসজিদে দু রাকাআত নামাজ আদায় করতেন। এরপর লোকজনের সামনে বসতেন। এ নিয়ম অনুযায়ী তিনি যখন বসলেন, যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তারা তখন কসম করে করে যুদ্ধে না যাওয়ার কারণ বলতে শুরু করল। এরূপ লোকের সংখ্যা আশি জনের কিছু বেশি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তাদের মুখের বক্তব্য গ্রহণ করলেন। তাদের বাইআত (শপথ) গ্রহণ করালেন এবং তাদের অপরাধ ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করে তাদের গোপন অবস্থা আল্লাহর উপর ন্যস- করলেন। এরপর আমি উপস্থিত হয়ে যখন সালাম দিলাম, তিনি রাগের ক্রোধের সাথে মুচকি হাসলেন। এরপর বললেন, আস, আমি তার সামনে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, কি কারণে তুমি পিছনে রয়ে গেলে। তুমি কি তোমার জন্য যানবাহন ক্রয় করনি? কাআব বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি আপনি ব্যতীত অন্য কোন দুনিয়াদার ব্যক্তির কাছে বসতাম, তাহলে এ ব্যাপারে কোন অজুহাত পেশ করে এর অসন্তোষ থেকে বেঁচে থাকার পথ দেখতে পেতাম। এবং এধরণের যুক্তি প্রদর্শন করার যোগ্যতা আমার আছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি, যদি আজ আমি আপনার কাছে মিথ্যা কথা বলি তাহলে আপনি আমার প্রতি খুশী হবেন, কিন্তু মহান আল্লাহ আমার প্রতি আপনাকে অতি শীঘ্রই অসন্তুষ্ট করে দেবেন। আর যদি আপনাকে সত্য কথা বলি, তাহলে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হলেও আমি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে শুভ পরিণতির আশা করি। আল্লাহর শপথ! আমার কোন সমস্যা ছিল না। (আমি অভিযানে অংশ নিতে পারতাম) আল্লাহর কসম! এ যুদ্ধে আপনার সাথে না গিয়ে পিছনে থেকে যাবার সময় আমি যতটা শক্তিমান ও শক্তিশালী ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না। কাআব বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন, এ ব্যক্তি সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন উঠে যাও। তোমার ব্যাপারে আল্লাহ কোন ফয়সালা না করার পর্যন্ত দেখা যাক। বনী সালামার কয়েকজন ব্যক্তি আমার পিছনে পিছনে এসে বলতে লাগল, আল্লাহর কসম! ইতিপূর্বে তুমি কোন অন্যায় করেছ বলে আমরা জানি না। তুমি অন্যদের মত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে অজুহাত পেশ করতে পারলেনা কেন? তোমার পাপের জন্য আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ক্ষমা প্রার্থনাই যথেষ্ঠ ছিল। আল্লাহর কসম! এরা আমাকে এতই তিরস্কার করতে লাগল যে, আমার ইচ্ছে হল আমি আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ফিরে গিয়ে নিজেকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস- করি। এরপর আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আমার মত এরূপ ঘটনা কারো ব্যাপারে ঘটেছে কি না? তারা বলল, হ্যাঁ আরো দুজনের ব্যাপারটিও তোমার মতই ঘটেছে। তুমি যা বলেছো তারাও সে রকম বলেছে। কাআব বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে দু জন কে? তারা বলল, মুররা ইবনে রাবিয়া আমেরী ও হেলাল ইবনে উমাইয়া ওয়াকেফী।
কাআব বলেন, তারা যে আমাকে দু জন লোকের নাম বলল, তারা ছিলেন খুবই সৎ ও আদর্শ মানুষ এবং তারা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। কাআব রা. বলেন, লোকেরা আমাকে এ দু জনের খবর দিলে আমি আমার পূর্বের নীতিতে অটল থাকলাম। যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে আমাদের এ তিন জনের সাথে কথা বলার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধাজ্ঞা জারী করলেন। কাআব বলেন, একারণে লোকেরা আমাদের বয়কট করে চলত। অথবা তিনি বলেছেন, তারা পরিবর্তন হয়ে গেল। এমনকি পরিচিত পৃথিবী আমার জন্য একেবারে অপরিচিত হয়ে গেল। কি আশ্চর্য! আমরা পঞ্চাশ রাত পর্যন- অতিবাহিত করলাম। অপর দু জন সাথী ছিলেন দূর্বল। তারা ঘরে বসে বসে কাঁদতে লাগলেন। আর আমি যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম বলে বাইরে বের হয়ে মুসলমানদের সাথে নামাজ আদায় করতাম এবং বাজারে ঘোরাফেরা করতাম। অথচ কেউ আমার সাথে কথা বলত না। নামাজের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নিজ স্থানে বসলে আমি তাকে সালাম দিতাম এবং মনে মনে বলতাম, দেখি তিনি সালামের উত্তরে ঠোট নাড়েন কি না। এরপর আমি তার নিকটবর্তী স্থানে নামাজ আদায় করতাম এবং আমি আড় চোখে দেখতাম, তিনি আমার দিকে তাকান কিনা। আমি যখন নামাজে ব্যস্ত হতাম তখন তিনি আমার দিকে তাকাতেন। আবার আমি যখন তার দিকে মনোযোগ দিতাম, তখন তিনি আমার দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। অবশেষে যখন মুসলিম সমাজের অসহযোগিতার কারণে আমার দুরাবস্থা দীর্ঘায়িত হল, তখন আমি (একদিন) আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবু কাতাদার বাগানের দেয়াল টপকে সেখানে পৌছে তাকে সালাম দিলাম। আল্লাহর কসম! সে আমার সালামের উত্তর দিল না। আমি তাকে বললাম, আবু কাতাদাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জান না আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসি। সে নিশ্চুপ রইল। আবার আমি কসম দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে চুপ থাকল। আবার আমি তাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল। আমি দেয়াল টপকে ফিরে এলাম। একদিন আমি মদীনার বাজারে হাটছিলাম। এমন সময় মদীনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার জন্য আগত এক সিরিয়াবাসী কৃষক বলতে লাগল, কে আমাকে কাআব ইবনু মালেককে দেখিয়ে দেবে। লোকেরা তাকে আমার দিকে ইঙ্গিত দিল। সে আমার কাছে এসে আমাকে গাস্‌সান বাদশার একটা পত্র দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি পত্রখানা পড়লাম। এতে লেখা ছিল, আমরা জানতে পারলাম, তোমার সাথী (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার ব্যাপারে সীমা লংঘন করেছে। আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছনা ও ধ্বংসের স্থানে থাকার জন্য সৃষ্টি করেননি। তুমি আমাদের কাছে চলে এসো, আমরা তোমাকে সাহায্য করব। আমি পত্রখানা পাঠ করে বললাম, এটাও আমার জন্য একটা পরীক্ষা। আমি পত্রটি চুলায় জ্বালিয়ে ফেললাম। অবশেষে যখন ৫০ দিনের ৪০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল, তখনও কোন অহী নাযিল হল না। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন সংবাদদাতা আমার কাছে এসে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বললাম, আমি কি তাকে তালাক দেব, না অন্য কিছু করব? সংবাদবাহক বলল, তুমি তার থেকে পৃথক থাকবে, তার নিকটে যাবে না। আমার অন্য দু জন সাথীকেও অনুরূপ খবর দেয়া হল। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি বাপের বাড়ীতে চলে যাও। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আল্লাহ কোন ফয়সালা না করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি তাদের নিকট থাকবে। হেলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হেলাল ইবনে উমাইয়া খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোন পরিচর্যাকারী নেই। আমি তার সেবা করলে আপনি কি অসন'ষ্ট হবেন? তিনি বললেন, না, তবে সে যেন তোমার নিকটবর্তী না হয়। হেলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রী বললেন, আল্লাহর কসম! এ ব্যাপারে তার কোন শক্তি সামর্থই নাই। আল্লাহর কসম! এ দিন পর্যন্ত তার ব্যাপারে যা কিছু হচ্ছে তাতে সে কেবল কাঁদছে। কাআব বলেন, পরিবারের একজন আমাকে বলল, তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে তোমার স্ত্রীর সেবা নেয়ার অনুমতি চাইতে পার। তিনি তো হেলাল ইবনে উমাইয়ার স্ত্রীকে অনুমতি প্রদান করেছেন। আমি বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এ বিষয়ে অনুমতি প্রার্থনা করব না। আমি যুবক হয়ে কিভাবে সেবা পাওয়ার প্রার্থনা করি।
এ অবস্থায় আরো দশ দিন অতিবাহিত করলাম। অবশেষে আমাদের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণার পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হল। এরপর আমি আমার এক ঘরের ছাদে পঞ্চাশতম দিনের ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে এমন অবস্থায় বসেছিলাম, যে অবস্থার কথা আল্লাহ তাআলা কুরআনে আমাদের সম্পর্কে বলেছেন। আমার মন সংকীর্ণ হয়ে গেছে। পৃথিবী প্রশস- হওয়া সত্বেও আমার কাছে সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমি এ অবস্থায় বসে আছি। হঠাৎ এমন সময় সালআ পাহাড়ের চূড়া থেকে এক ব্যক্তিকে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলতে শুনলাম। হে কাআব! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি এ কথা শুনেই সিজদায় লুটিয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম, মুক্তি এসেছে। মহান আল্লাহ আমাদের তাওবা গ্রহণ করেছেন। এ খবর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ফজরের নামাজ শেষে সমস্ত মানুষকে জানিয়ে দিলেন। অতএব মানুষেরা আমাদের সুসংবাদ দিতে থাকল। কিছু লোক আমার অন্য দু সাথীকেও খবর দিতে গেল। আর একজন লোক (যুবাইর ইবনু আওয়াম) আমার দিকে ঘোড়া নিয়ে ছুটে এল। আসলাম গোত্রের একজন দৌড়ে গিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে খবর পৌছাল। ঘোড়ার চেয়ে শব্দের গতি ছিল দ্রুততর। যে আমাকে প্রথমে সুখবরটি দিয়েছিল সে যখন আমার কাছে এলো, তখন সুখবর দেয়ার জন্য আমি তাকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিজের কাপড় দুখানা খুলে তাকে পরিধান করিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন দু খানা কাপড় ব্যতীত আমার কাছে কোন কাপড়ই ছিল না। আমি দু খানা কাপড় ধার করে তা পরিধান করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হলাম। লোকেরা দলে দলে আমার সাথে দেখা করে তাওবা কবুলের জন্য ধন্যবাদ জানাতে লাগল। তারা আমাকে বলতে লাগল, মহান আল্লাহ তোমার তাওবা কবুল করায় তোমার প্রতি মোবারকবাদ। আমি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বসা ছিলেন। আর লোকেরা তার চারিদিকে বসা ছিল। তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রা. দ্রুতবেগে উঠে এসে সাদরে আমার সাথে মোসাফাহা করে আমাকে মোবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম তালহা ব্যতীত আর কোন মুহাজির উঠেননি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কারণে কাআব তালহার ব্যবহারের কথা জীবনে কখনো ভুলেননি। কাআব বলেন, আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সালাম দিলাম, তখন তার পবিত্র চেহারা আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেন “তোমার জন্ম দিন থেকে আজ পর্যন- সময়ের সর্বাপেক্ষা উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! খবর কি আপনার কাছ থেকে না আল্লাহর কাছ থেকে? তিনি বললেন : না, বরং আল্লাহর কাছ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  যখন আনন্দিত হতেন তখন তার পবিত্র চেহারা এমন উজ্জল হয়ে যেত, মনে হত এক টুকরো চাদ। আমরা তা বুঝতে পারতাম। এরপর আমি যখন তার সামনে বসলাম, তখন বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার তাওবা কবুল হওয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আমি আমার সকল ধন-সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন'ষ্টির জন্য ছদকাহ করে দিতে চাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বললেনঃ “কতক সম্পদ রেখে দাও, সেটাই তোমার পক্ষে উত্তম হবে। আমি বললাম, আমার খায়বরের মালের অংশটা রেখে দিলাম। আমি আরো বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মহান আল্লাহ আমাকে সত্য কথা বলার জন্য মুক্তি দিয়েছেন। অতএব আমার তাওবার এটাও দাবী যে, আমি বাকী জীবনে সত্য কথাই বলব। আল্লাহর কসম! আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এ কথা বলছিলাম, তখন থেকে সত্যের ব্যাপারে মহান আল্লাহ অন্য কোন মুসলিমকে আমার মত এত উত্তম পরীক্ষা করেছেন বলে আমি জানি না। আল্লাহর কসম! আমি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এ কথা বলেছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা পর্যন্ত করিনি। বাকী জীবনে আল্লাহ আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন বলে আমি আশা রাখি। কাআব বলেন নিঃসন্দেহে এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ আয়াত নাযিল করেছেন। আয়াত হল :

নিশ্চয়ই আল্লাহ নবী, মুহাজির ও আনসারদের তাওবা কবুল করেছেন। যারা সংকটকালে তার অনুসরণ করেছে-এমনকি যখন তাদের এক দলের চিত্ত-বৈকল্যের উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করলেন। তিনিতো তাদের প্রতি দয়াদ্র, পরম দয়ালু। এবং তিনি ক্ষমা করলেন অপর তিনজনকেও, যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল। যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্বেও তাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়েছিল এবং তারা উপলদ্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন আশ্রয়স্থল নেই, তাঁর দিকে ফিরে আসা ব্যতীত। পরে তিনি তাদের তাওবা কবুল করলেন যাতে তারা তাওবায় সি'র থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। হে মুমিনগন! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভূক্ত হও। (সূরা আত-তাওবা : ১১৭-১১৯)
কাআব বলেন, আল্লাহর কসম! যখন আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য দান করেছেন তখন থেকে এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সত্য কথা বলাই আমার জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেআমত। আমি যেন মিথ্যা বলে ধ্বংস না হই। যেমন অন্যান্য মিথ্যাবাদীরা মিথ্যা বলে ধ্বংস হয়ে গেছে। মহান আল্লাহ অহী নাযিল করার সময় মিথ্যাবাদীদের সর্বাধিক নিন্দা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন :

তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে অচিরে তারা আল্লাহর নামে শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের উপেক্ষা কর। সুতরাং তোমরা তাদের উপেক্ষা করবে। তারা অপবিত্র এবং তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল। তারা তোমাদের নিকট শপথ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ তো সত্যত্যাগী সমপ্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না। (সূরা আত-তাওবা : ৯৫-৯৬)
কাআব বলেন আমাদের এ তিনজন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐ সকল লোক পিছনে পড়ে গেল, যারা কসম করে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তো তাদের অজুহাত গ্রহণ করে তাদের শপথ করিয়েছিলেন এবং তাদের ক্ষমার জন্য দোআ করেছিলেন। আর তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমাদের এ তিনজনের ব্যাপারে সিদ্ধান- গ্রহণ স্থগিত করেছিলেন। অবশেষে আল্লাহ এ ব্যাপারে মীমাংসা করে বললেন, যে তিন জন পিছনে রয়ে গেছে এর অর্থ আমাদের যুদ্ধ থেকে পিছনে পড়ে থাকা নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে এটাই যে, আমাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা এ সকল লোকদের পিছনে রাখা হয়েছিল। যারা মিথ্যা অজুহাত পেশ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তা কবুল করেছিলেন। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বৃহস্পতিবার তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে যাত্রা করা পছন্দ করতেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি দিনের বেলায় দুপুরের আগে সফর থেকে ফিরে আসতেন। সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দু রাকাআত নামাজ আদায় করে বসতেন।
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- মুসলমানের সত্যিকার চরিত্র হল সত্যবাদিতা, স্পষ্টভাষী ও নিজের দোষত্রুটি অকপটে স্বীকার করা। সে কোন অন্যায় করে ফেললে তার সমর্থনে অসাড় বা মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করে না।
২- সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, মিথ্যা মানুষকে ধ্বংস করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীর বাস্তব চিত্র হল এ হাদীস। যারা মিথ্যা বলে রেহাই পেতে চেয়েছিল তারা কিছু দিনের জন্য রেহাই পেলেও চির দিনের জন্য তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। যতদিন কুরআন ও হাদীস থাকবে ততদিন মানুষ তাদের মিথ্যাবাদীতা সম্পর্কে জানবে। আর যারা সত্য বলে কয়েক দিনের জন্য বিপদে পড়েছিল, তারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছে। আল-কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে অবগত হবে। তাদের নাম স্মরণ করবে ও তাদের আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
৩- একজন সফল সেনাপতি হিসাবে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর দায়িত্ব পালন করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এত হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কে অনুপসি'ত থাকল, কেন থাকল ইত্যাদি বিষয়গুলো সুনিপুনভাবে তদারক  করেছেন।
৪- যত বাধা-বিপত্তি ও সমস্যা থাকুক, যখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জেহাদের ডাক আসবে তখনই মুসলমানদের তাতে অংশ নিতেই হবে।
৫- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবাগণ সত্য বলার বিপদ জেনেও সত্য বলা থেকে একটুও পিছপা হননি। যদি সে সত্যটি নিজের বিরুদ্ধে যায় তবুও তা বলেছেন।
৬- মানুষ প্রকাশ্যে যা বলবে অথবা করবে বা দাবী করবে, সে অনুযায়ী তার পক্ষে বা বিপক্ষে ফয়সালা হবে। অন-রে তার কি আছে তা দেখা বা দাবী করার দায়িত্ব মানুষের নয়। এ বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে।
৭- যদি মুসলমানদের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কাউকে বয়কট করার নির্দেশ দেয়, তবে তা পালন করতে হবে। প্রকাশ্যে বয়কটের সাথে একাত্মতা আর গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করা গ্রহণযোগ্য নয়।
৮- নিজের কোন অন্যায় অপরাধ হয়ে গেলে তার জন্য অনুতাপ প্রকাশ, কান্নাকাটি করা ঈমানদারের একটি বড় গুণ।
৯- শেষ পরিণতি মুত্তাকীদের জন্যই। তাইতো যারা মিথ্যা অজুহাত দিয়ে রেহাই পেয়ে গেছে তারা আসলে রেহাই পায়নি। পরবর্তীকালে কুরআন তাদের তিরস্কার করেছে। কিন্তু যারা সত্য বলে বিপদে পড়েছিল, পরিশেষে তাদেরই জয় হল। তাদের প্রশংসার কথা আল-কোরআনে কেয়ামত পর্যন- থেকে যাচ্ছে। আল্লাহ নিজে তাদের প্রতি সন'ষ্টির কথা নাযিল করেছেন তাঁরই পবিত্র কালামে।
১০- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন কত দয়াদ্র মানব। হেলাল ইবনে উমাইয়া তার বৃদ্ধ স্বামীর খেদমত করার অনুমতি চাওয়ায় তাকে অনুমতি দিলেন।
১১- যিনি কোন সুসংবাদ দান করেন তাকে পুরুস্কার দেয়ার বিষয়টি ভাল কাজ বলে স্বীকৃত।
১২- নিজের সকল সম্পদ দান বা ছদকাহ করে দেয়া ঠিক নয়।
১৩- ইসলাম ও মুসলমানের শত্রুরা সর্বদা মুসলিমদের মাঝে ফেৎনা ও বিশৃংলা সৃষ্টিতে তৎপর থাকে। তাদের পারস্পারিক অনৈক্যকে তারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। এক মুসলিমকে অন্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে উস্কানী দেয়। তাই একজন মুসলিম ইসলামী দল, রাষ্ট্র বা সমাজে যতই বেকায়দায় পড়ুক, কোন অবস্থাতেই কাফেরদের ডাকে সাড়া দেয়া বা কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ নয়। বরং ইসলাম ও ঈমানের দাবী হল, এ ধরনের বিষয়ে তাদের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা। যেমন করেছিলেন এ প্রখ্যাত সাহাবী। এতটা বিপদেও গাসসান বাদশা কর্তৃক  আশ্রয় দানের  প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। নিজের স্বার্থে নয়, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে। তাদের প্রতি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকুক চিরকাল।  তিনি তাদের পথে পথ চলার তাওফীক দান করুন আমাদেরকেও।
হাদীস- ২২. আবু নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন আল-খুযাঈ রা. থেকে বর্ণিত, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি শাসি-যোগ্য অপরাধ করেছি, আমাকে এর জন্য শাস্তি প্রদান করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তার অভিভাবককে ডেকে বললেন, এর সাথে ভাল আচরণ করবে। যখন সে সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। এ লোকটি তাই করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে শাসি- প্রদানের আদেশ দিলেন। এরপর তার শরীরের কাপড় ভাল করে বেঁধে দেয়া হল। অতঃপর পাথর মেরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য জানাযা নামাজ পড়লেন। উমার রা. বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! যে ব্যভিচার করেছে এমন নারীর জানাযা নামায আপনি পড়েছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ সে এমন তাওবা করেছে যে, তা যদি সত্তর জন মদীনা বাসীর মধ্যে বন্টন করে দেয়া হত, তাহলে তাদের মুক্তির জন্য এটা যথেষ্ঠ হয়ে যেত। যে মহিলা নিজের প্রাণকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করে দেয়, তার এরূপ তাওবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কাজ তুমি পেয়েছ কি?  বর্ণনায় : মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- ঈমানদার ব্যক্তির চরিত্র হল, যখন কোন পাপ করে তখন তা থেকে পবিত্র হতে চায়। অনুতাপ, অনুশোচনা, তাওবা ও শাস্তি গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা ও রহমতের আশা করে।
২- শাস্তি প্রদানে নিরাপরাধ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা। যেমন গর্ভে অবস্থিত বাচ্চার কারণে এ মহিলা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহার শাস্তি প্রদান বিলম্ব করা হয়েছে।
৩-পাপকে ঘৃণা করা উচিত। যে পাপ করেছে তাকে নয়। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এ মহিলার সাথে সদাচারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
৪- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দয়া ও করুনার দৃষ্টান্ত: তিনি গর্ভের বাচ্চার প্রতি দয়া দেখালেন, অপরাধী এ মহিলার সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য তার অভিভাবককে নির্দেশ দিলেন, তার শাস্তি কার্যকর করার পর তার জন্য দোআ করলেন, তার প্রশংসা করলেন।
৫- আল্লাহর আইন বাস-বায়নে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর দৃঢ়তা। তিনি এ মহিলার প্রতি দয়াদ্র হলেও তাকে শাসি- থেকে রেহাই দেয়ার ক্ষমতা রাখলেন না।
৬- যে আদালতের কাছে এসে পাপ বা অপরাধ স্বীকার করে, আদালত তাকে শাসি- দিতে বাধ্য। শাস্তি প্রদান ব্যতীত আদালতের আর কিছু করার থাকে না।
৭- মহিলা বিবাহিত থাকা সত্বেও ব্যভিচার করেছে বলেই তাকে প্রস্তর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি হল একশ বেত্রাঘাত। যেমন আল-কুরআনের সূরা আন-নূরের দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড শুধু বিবাহিত ব্যভিচারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
৮- কেহ ব্যভিচার করে থাকলে তা থেকে তাওবা ও পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে যদি ব্যভিচারের কথা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করে, তবে তা নাজায়েয নয়। কিন্তু যদি পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে নিজের ব্যভিচারের কথা মানুষকে বলে দেয়, তবে তা আরেকটি অপরাধ। প্রথমত পাপ করার অপরাধ, দ্বিতীয়ত পাপকে প্রচার করার অপরাধ।

হাদীস- ২৩. ইবনে আব্বাস ও আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন : যদি কোন মানব সন্তানের এক উপত্যকা ভরা সোনা থাকে, তাহলে সে দুটো উপত্যকা (ভর্তি) সোনা কামনা করে। তার মুখ মাটি ব্যতীত আর কিছুতেই ভরে না। আর যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- সকল মানুষই অর্থ, সম্পদ পেতে চায় ও এর প্রতি লোভী।
২- মানুষ স্বভাবগতভাবে কৃপণ। সে অর্থ সম্পদ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় করে। আর এ জন্য সে যত সম্পদের মালিক হোক না কেন, শুধু আরো চায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

বলঃ যদি তোমরা তোমার প্রতিপালকের দয়ার ভাণ্ডারের অধিকারী হতে তবুও তোমরা খরচ হয়ে যাবে এই আশংকায় ওটা ধরে রাখতে, মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।  সূরা আল-ইসরা : ১০০
৩- সম্পদ অর্জন করা ভাল, তবে সম্পদ অর্জনটা নেশায় পরিণত হওয়া বা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া মোটেই ভাল নয়।
৪- সম্পদের আধিক্য মানুষকে ধনী করে না। বরং তার অভাব বা চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। মনের দিক দিয়ে যে ধনী, সে-ই প্রকৃত ধনী।
৫- ইসলামী অর্থনীতির একটি মৌলিক বিষয় এ হাদীসে ফুটে উঠেছে। তা হল, যার সম্পদ যত বেশি তার অভাব বা চাহিদা তত বেশি।
৫- তাওবাকারীর তাওবা আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। হাদীসের এ বিষয়টির সাথে আলোচ্য বিষয়ের শিরোনামের সম্পর্ক।

হাদীস-২৪. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেনঃ আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তাআলা এমন দু ব্যক্তির ব্যাপারে হাসবেন, যারা একে অপরকে হত্যা করবে এবং উভয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে। একজন আল্লাহর পথে লড়াই করে শহীদ হবে। এরপর আল্লাহ (সেই শহীদের) হত্যাকারীর তাওবা কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে (যুদ্ধে অংশ নিয়ে) শহীদ হয়ে যাবে। বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম
শিক্ষা ও মাসায়েল :
১- অপরাধ ও পাপ যত মারাত্নকই হোক, অবশ্যই তা থেকে তাওবা করতে হবে।
২- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। যত অপরাধ বা পাপ করে না কেন, যত বিপদ-মুসীবতে আক্রান্ত হয় ঈমানদার সর্বদা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার প্রত্যাশা করে।
৩- ইসলাম গ্রহণের কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কাফের থাকা কালীন সময়ের সকল পাপ, অন্যায় ও অপরাধ ক্ষমা করে দেন।
৪- আল্লাহর পথে জিহাদ করে শহীদ হওয়ার মর্যাদা এ হাদীসটি দিয়েও প্রমাণিত। অবশ্যই শাহাদাতের পুরস্কার হল জান্নাত।

নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও আমাদের কর্মসমূহের খারাবী থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নাই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেয়ার কেউ নাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরিক নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত পর্যন্ত ‌ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় বান্দাদের প্রতি অধিক দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি তার বান্দাদের যে কোন উপায়ে ক্ষমা করতে ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন। আল্লাহ তা’আলা মানুষের ছোট গুনাহ কেবল নেক আমল করা দ্বারাই ক্ষমা করে দেন। কিন্তু কবীরা গুনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা করা হয় না। তাই কবীরা গুনাহ হতে ক্ষমা পাওয়ার জন্য তাওবা করা জরুরি। আমরা মনে করি মুখে শুধু ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলার নামই তাওবা। বাস্তবে তা কিন্তু তাওবা নয়। বাস্তবে তাওবা কাকে বলে, তাওবা কবুল হওয়ার শর্ত, তাওবার প্রতিবন্ধকতা, তাওবা করার প্রদ্ধতি, তাওবা কবুল হওয়ার আলামত ইত্যাদি বিষয়গুলো এ বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহর নিকট কামনা তিনি যেন আমাদের আমলকে কবুল করেন এবং আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করার তাওফীক দেন। আমীন।

তাওবার গুরুত্ব
আল্লাহ তা’আলার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহ তা’আলার নিকট তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। আল্লাহ তা’আলা নিজেই মুমিনদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন-  
“হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তাওবা [প্রত্যাবর্তন] কর, নিশ্চয় তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা নূর আয়াত: ৩১]
 আর যারা তাওবা করে না, তাদের আল্লাহ তা’আলা যালেম বলে আখ্যায়িত করেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“যারা তাওবা করবে না, তারাই অত্যাচারী”
উলে¬খিত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। এক- তাওবাকারী, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম। দ্বিতীয়- যারা তাওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এ দুই ভাগের মধ্যে কোন তৃতীয় ভাগ নাই। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন ভাগের অন্তর্ভূক্ত হবো?
বান্দা যখন কোন অপরাধ করে আল্লাহর নিকট ফিরে যায় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অধিক খুশি হন। যেমন, আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

“আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি তার বাহন সাওয়ারী নিয়ে কোন জনমানব শূন্য প্রান্তরে অবস্থান করছিল, হঠাৎ তার সাওয়ারীটি পালিয়ে গেল। সাওয়ারীটির সাথে ছিল তার খাদ্য ও পানীয় বস্তু। লোকটি সাওয়ারীটি খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার ব্যাপারে হতাশ হয়ে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়া-তলে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘুম থেকে উঠে সে দেখে তার সাওয়ারীটি তার পার্শ্বে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে অধিক খুশিতে তার সাওয়ারীর লাগাম চেপে ধরে বলল, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা এবং আমি তোমার রব! লোকটি অধিক খুশিতে উল্টা-পাল্টা বলে ফেলল”।
হে মুসলিম ভাই! মনে রাখবেন, আল্লাহ আমাদের হিসাব নেয়ার আগে আমরা আমাদের নিজেদের হিসাব করে নিব। আল্লাহ আপনার হিসাব করার পূর্বে আপনার হিসাব আপনি করুন। তাতে আপনার হিসাব দেয়া সহজ হবে।
যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করুন এবং আপনি আপনার হিসাব করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন কোন কাজ করছেন কি, যা সঠিক আক্বীদা পরিপন্থী/ দ্বীনের স্তম্ভ সালাত কায়েমে আপনার কোন দুর্বলতা আছে কি? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি যথাযথ ভাবে আদায় করছেন কি/ আপনি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন কি?
এখনো তওবা দ্বারা ক্ষমা করা হয়। তবে তওবা কাকে বলে, তাওবার অর্থ কি এবং তাওবা কবুল হওয়ার শর্ত কি? তা আমাদের অনেকেরই জানা নাই। তাই আমরা নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো আলোচনা করব। আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন।
তাওবা কাকে বলে?
খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায়Ñঅবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক লোকেরা মনে করে, শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ক্ষমা চাওয়া বা তা থেকে ফিরে আসার নাম তাওবা। কিন্তু তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেই ঠিক না। বরং, এ ক্ষেত্রে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ-অন্যায়। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করার চেয়ে আরও বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা মারাত্মক অপরাধ ও বড় গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।  
মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী। যেমনÑ আল্লাহ তা’আলা বলেন-

“হে ঈমাদারগণ তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে”। উলে¬খিত আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মানব যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকেও তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবা করাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না।

তাওবাতুন নাছুহা কি?

মনে রাখতে হবে, তাওবা হল মানুষের অন্তরের আন্তরিক প্রচেষ্টা, অনুশোচনা। অর্থাৎ, মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। এ ধরনের ক্ষমা প্রার্থনা বা তাওবাকে তাওবাতুন নাছুহা বলা হয়। আরও মনে রাখবে, আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে।
জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ত্যাগ করা এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
 “যখন কোন বান্দা আল্লাহর কাছে খালেস তাওবা-তাওবায়ে নাছুহা- করে, আল্লাহ তা’আলা তাকে মহব্বত করেন এবং তার যাবতীয় গুনাহ গোপন করে রাখেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কীভাবে গোপন করে রাখেন? তিনি বললেন, উভয় ফেরেশতা তার বিরুদ্ধে যা লিপিবদ্ধ করত, তারা তা লিখতে ভূলে যায় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতি ও জমীনের -ভূ-খণ্ডের-প্রতি নির্দেশ দেন- তোমরা তার গুনাহগুলো গোপন রাখ! তখন তারা গুনাহগুলো গোপন রাখে। ফলে যে দিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তার কোন গুনাহ থাকবে না- যা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।

যে কারণে তাওবা করতে হবে

আর মনে রাখতে হবে, তোমাকে, যে কারণে তাওবা করতে হবে, তার অন্যতম কারণ হল, যাতে আল্লাহর আনুগত্য করা ও বন্দেগী করার সৌভাগ্য তোমার লাভ হয়। কারণ, গুনাহের খারাব পরিণতি হল, গুনাহের কারণে বান্দা যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয় এবং অপমান অপদস্থ হয়। গুনাহ একজন মানুষকে আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের দিকে অগ্রসর হওয়া ও তাঁর গোলামীর দিকে অগ্রগামী হওয়া থেকে বাধা দেয়। এ ছাড়া যার গুনাহের বোঝা ভারি হয়ে যায়, তার জন্য নেক কাজ করা এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর হওয়া আর সহজ থাকে না। সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকার কারণে মানুষের অন্তরসমূহ কালো হয়ে যায়। ফলে অন্তরসমূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং তা পাথরের মত কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে আর কোন ইখলাস থাকে না ইবাদাত বন্দেগীতে কোন মজা ও স্বাদ উপভোগ করে না। আল্লাহ তা’আলা যদি তার প্রতি অনুগ্রহ না করেন তাহলে গুনাহ গুনাহগার ব্যক্তিকে কুফর ও বেঈমানীর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কী আশ্চর্য! যে গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত তাকে কীভাবে আল্লাহ তার গোলামীর সুযোগ দিবেন। কীভাবে তাকে তার দীনের খেদমতের জন্য ডাকবেন যে সর্বদা তার নাফরমানীতে মশগুল এবং অবাধ্যতায় নিমগ্ন। কীভাবে তাকে মুনাজাতের জন্য কাছে টেনে আনবে যে ময়লা আবর্জনা ও নাপাকীতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন

“যখন কোন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন তার মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয় তাতে তার থেকে দুইজন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। ফলে এ জিব্হা কীভাবে হবে আল্লাহর যিকির করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে?”
 সুতরাং, এতে বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নাই, যে লোক আল্লাহর নাফরমানী ও তার হুকুমের বিরোধিতার উপর অটল থাকে, সে কখনো আল্লাহর আনুগত্য করা ও ভালো কাজ করার তাওফীক লাভ করতে পারে না এবং তার জন্য নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে আল্লাহর ইবাদাতে কাজে লাগানো সহজ হয় না। সে যদি খরচ করে তবে তাকে অনেক কষ্টে খরচ করতে হয়, তাতে সে  মানসিক স্বস্তি ও  আন্তরিক তৃপ্তি পায় না এবং ইবাদাতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না। এমন হবার মূল কারণ হচ্ছে, সে সব সময় গুনাহতে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ছেড়ে দেয়। সুতরাং, আপনাকে আল্লাহর দরবারে বার বার তাওবা করতে হবে এবং গুনাহের কাজসমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 “হে মানব! তোমরা আল্লাহর দরাবরে তাওবা কর। আমি দৈনিক আল্লাহর নিকট একশত বার তাওবা করি”। আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি করে তাওবা করার তাওফীক দান করুন।      

তাওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলী

মনে রাখতে হবে, তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহ তা’আলা মানুষকে ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়ার জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া তা কবুল হয় না।
তাওবা কবুল হওয়ার জন্য চারটি র্শত আছেÑ
এক- পূর্বের কৃত কাজের উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।
দুই- এমন কাজ দ্বিতীয় বার না করার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া এবং দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন- পূর্বকৃত কাজ থেকে এখনই বিরত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা।
চার- অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করার কারণে আপনার উপর যে কর্তব্য বা ঋণের দায়িত্ব বর্তায় তা পরিশোধ করা, যেমন, আপনি কাউকে গালি দিয়েছেন অথবা কারও অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাহলে আপনার কর্তব্য হল, পাওনাদারকে তার পাওনা ফেরত দেয়া এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি অন্যায়টি অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করার সাথে সম্পর্কিত না হয়, তাহলে পূর্বের তিনটি শর্ত পূর্ণ করলেই তওবা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে আশা করা যায় যে, তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হল, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তওবা যেন তিনি কবুল করেন।

তাওবার শর্তসমূহের পরিপূরক বিষয়াবলী

 এক:- শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য পাপ ও গুনাহের কাজ ত্যাগ করাকে তাওবা বলা হবে:
অন্য কোন কারণে পাপচার ত্যাগ করাকে তাওবা বলা যাবে না, যেমন;
-অক্ষমতার কারণে পাপ থেকে দূরে থাকা, এসব কর্ম করতে ভাল না লাগা অথবা লোকজন মন্দ বলবে এই ভয়ে পাপ ত্যাগ করা, এমন ব্যক্তিকে তাওবাকারী বলা হবে না।
Ñযে ব্যক্তি মানহানী ঘটা বা চাকুরীচ্যুত হওয়া বা পদ-পদবী হারানোর ভয়ে তাওবা করে, তাকে তাওবাকারী বলা হবে না।
Ñযে ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করল তার শক্তি ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য; যেমন কেউ ব্যভিচার করা ত্যাগ করলো যেন দুরারোগ্য ব্যাধি-এইডস থেকে বাঁচতে পারে অথবা তার শরীর ও স্মৃতি শক্তি যাতে দুর্বল না হয়, তাহলে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না।
Ñতেমনিভাবে তাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে; কোন বাড়ীতে ঢুকার পথ না পেয়ে বা সিন্দুক খুলতে অসমর্থ হওয়ার কারণে কিংবা পাহারাদার ও পুলিশের ভয়ে।
Ñতাকে তাওবাকারী বলা যাবে না, যে দূর্নীতি দমন বিভাগের লোকজনদের জোর তৎপরতায় ধরা পড়ার ভয়ে ঘুষ খাওয়া বন্দ করে দেয়।
Ñআর তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে ব্যক্তি মদ পান, মাদকদ্রব্য বা হেরোইন সেবন ইত্যাদি ছেড়ে  দেয় দারিদ্রতার আশঙ্কায়।
Ñতেমনিভাবে তাকেও তাওবাকারী বলা যাবে না, যে সামর্থহীন হওয়ার কারণে গুনাহ করা ছেড়ে দিলো। যেমন মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়েছে তার কথায় জড়তা সৃষ্টি হওয়ার কারণে কিংবা ব্যভিচার করছে না যেহেতু সে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কিংবা চুরি করা ছেড়ে দিয়েছে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ার কারণে।
বরং এসব থেকে তাওবার জন্য অবশ্যই অনুতপ্ত হতে হবে, সব ধরনের পাপ থেকে মুক্ত হতে হবে এবং অতীত কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:  “অনুতপ্ত হওয়াই হল তাওবা”।মহান আল্লাহ কোন সৎ কর্ম বা অসৎ কর্ম করার আকাংখা পোষণকারী অপারগকে কর্ম সম্পাদনকারীর মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আপনি জানেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেছেন,

“দুনিয়া চার প্রকার লোকের জন্য;
[১] সেই বান্দার জন্য যাকে আল্লাহ মাল ও জ্ঞান দান করেছেন সুতরাং সে এতে তার প্রভূকে ভয় করছে, তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখছে এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর হক কি তা জানছে, এ হল সর্বোত্তম অবস্থানে।
[২] সেই বান্দা যাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন কিন্তু মাল দেননি, সে হল সঠিক নিয়তের লোক, সে বলে, যদি আমার টাকা পয়সা থাকতো তাহলে উমুক ব্যাক্তির মত কাজ করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী সওয়াব পাবে। এদের দুজনের নেকী সমান হবে।
[৩] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ টাকা পয়সা দিয়েছেন কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। সে না জেনেই তার টাকা পয়সা খরচ করছে। এতে সে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তা রক্ষা করে না এবং এতে আল্লাহর হকও সে জানে না। সে হল সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থানে।
[৪] আর সেই বান্দা যাকে আল্লাহ মালও দেননি জ্ঞানও দেননি, সে বলে আমার টাকা পয়সা থাকলে উমুকের মতই [খারাপ কাজ] করতাম। সে তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পাবে। এরা দুজনই গুনাহর দিক থেকে সমান। 

দুই:- পাপের কদর্যতা ও ভয়াবহতা অনুভব করা:
অর্থাৎ যদি সঠিক তাওবা করা হয়, তাহলে অতীত পাপের কথা স্মরণ হলেও কখনো আনন্দ ও মজা পাওয়া যাবে না  অথবা কখনো ভবিষ্যতে সে সব কাজে ফিরে যাবে, এ কামনা মনে স্থান পাবে না।
ইবনুল কাইয়্যেম রহমতুল্লাহ আলাইহে তার লিখা  ‘রোগ ও চিকিৎসা’ এবং  ‘আল-ফাওয়াইদ’ নামক গ্রন্থে গুনাহের অনেক ক্ষতির কথা উলে¬খ করেছেন।
তন্মধ্যে রয়েছে: জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া, অন্তরে একাকিত্ব অনুভব করা, কাজকর্ম কঠিন হয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, আল্লাহর আনুগত্য থেকে বঞ্চিত হওয়া, রুজি রোজগারের বরকত কমে যাওয়া, কাজ কর্মে সমন্বয় না হওয়া, গুনাহর কাজে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও আল্লাহর ব্যাপারে পাপীর অন্তরে অনাসক্তি সৃষ্টি হয় এবং লোকজন তাকে অশ্রদ্ধা করে। জীবজন্তু ও পশু পাখি তাকে অভিশাপ দেয়। পাপী ব্যক্তি সর্বদা অপমানিত হতে থাকে। পাপীর অন্তরে মোহর পড়ে যায়। পাপী ব্যক্তি লানতের মাঝে পড়ে এবং পাপীর দু’আ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। জলে ও স্থলে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। পাপীর আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। লজ্জা চলে যায়, ফলে সে যা ইচ্ছা তাই করে। নিয়ামত হতে বঞ্চিত হয়। আল্লাহর আজাব ও বিপর্যয় নেমে আসে। পাপীর অন্তরে সর্বদা ভয় ও আতঙ্ক নেমে আসে এবং সে শয়তানের দোসরে পরিণত হয়। তার জীবন সমাপ্ত হয় মন্দের উপর এবং ঈমান হারা হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়। পরকালীন আজাবে নিপতিত হয়।
পাপের এই ক্ষতি ও বিপর্যয় যদি বান্দা জানতে পারে, তাহলে সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকবে। কিছু কিছু লোক এক পাপ ছেড়ে আরেক পাপ করতে শুরু করে তার কিছু কারণ হল:
১. মনে করে যে, এর পাপ কিছুটা হালকা।
২. মন পাপের দিকে বেশী আকৃষ্ট হয় এবং এর দিকে ঝোঁক খুবই প্রবল থাকে।
৩. অন্যটির তুলনায় এ পাপ করার জন্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা সহজ ও সহায়ক হয়, অন্য পাপের জন্য অনেক কিছু জোগাড় করা লাগে।
৪. তার সঙ্গী সাথীরা এ পাপের সাথে জড়িত, তাদেরকে ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়।
৫. কোন কোন ব্যক্তির নিকট বিশেষ পাপ তার তার সঙ্গী সাথীদের মাঝে মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য সে চিন্তা করে যেন তার অবস্থান সে ধরে রাখে এবং এ পাপ অব্যাহত রাখে, যেমনটি ঘটে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানদের বেলায়।

তিন- তাড়াতাড়ি তাওবা করা:Ñ
যার জন্য তাওবার প্রয়োজন সে যেন তাড়াতাড়ি তাওবা করে। কারণ তাওবা করতে দেরী করাটাই পাপ।

চার- আল্লাহর হক আদায় করা:-
আল্লাহর হক যা ছুটে গেছে তা যথাসম্ভব আদায় করা। যেমন যাকাত দেয়া যা সে পূর্বে দেয়নি। কেননা এতে আবার দরিদ্র লোকজনের অধিকারও রয়েছে।

পাঁচ- পাপের স্থানকে ত্যাগ করা:-
কারণ যেখানে পাপ করছে, যদি সেখানে অবস্থান করে, আবার সে পাপে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে।

ছয়- স্থান ত্যাগ করা:Ñ
যারা পাপ কাজে সহযোগিতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করা। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে না পারলে আবারও সে পাপে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: 
“আন্তরিক বন্ধুরাই সেদিন একে অপরের শত্রুতে পরিণত হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া”।
খারাপ সাথীরা একে অপরকে কিয়ামতের দিন অভিশাপ দিবে। এজন্য হে তাওবাকারী, আপনাকে এদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ও এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে, যদি আপনি তাদেরকে দাওয়াত দিতে অপারগ হন। শয়তান যেন আপনার ঘাড়ে আবার সওয়ার হবার সুযোগ না পায় এবং আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আবার কুপথে নিয়ে না যায়। আর আপনি তো জানেন যে, আপনি দুর্বল তাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন না। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে যে, অনেক লোকই তার পুরাতন বন্ধু বান্ধবের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার পর আবার পাপে জড়িয়ে পড়েছে।

সাত- নিজের কাছে রক্ষিত হারাম জিনিসকে নষ্ট করে ফেলা:-
যেমন মাদক দ্রব্য, বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, হারমনিয়াম, অথবা ছবি, ব্লু ফ্লিম, অশ্লীল নভেল নাটক। এগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাওবাকারীকে সঠিক পথে দৃঢ়ভাবে থাকার জন্য অবশ্যই সব জাহেলিয়াতের জিনিস থেকে মুক্ত হতে হবে। এ ধরনের অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে দেখা যায়, এসব হারাম জিনিসই তাওবাকারীর পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাবার পিছনে প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর দ্বারাই সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট সঠিক পথে টিকে থাকার জন্য তাওফীক কামনা করছি।

আট- ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করা:-
ভাল সঙ্গী-সাথী গ্রহণ করতে হবে, যারা তাকে দ্বীনের ব্যাপারে সহায়তা করবে এবং এরা হবে খারাপ সঙ্গী সাথীর বিকল্প। আর চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন ধর্মীয় ও ইলমী আলোচনায় বসার জন্য। নিজেকে সব সময় এমন কাজে মশগুল রাখতে হবে যাতে কল্যাণ রয়েছে, যেন শয়তান তাকে পূর্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেবার সুযোগ না পায়।

নয়Ñ হারাম বর্জন করে হালাল ভক্ষণ করা:
নিজ শরীরের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে যাকে সে হারাম দিয়ে প্রতিপালন করেছে। একে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লাগাতে হবে এবং হালাল রুজি খেতে হবে যেন শরীরে আবার পবিত্র রক্ত-মাংস সৃষ্টি হয়।

দশÑ গরগরা তথা মৃত্যুক্ষণ আসার পূর্বে তাওবা করা:
তাওবা দম আটকে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাবার [মৃত্যুর পূর্বক্ষণে শ্বাসকষ্ট শুরু হবার] পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবার পূর্বে হতে হবে। গরগরার অর্থ হল কণ্ঠনালী হতে এমন শব্দ বের হওয়া যা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য হল কিয়ামতের পূর্বেই তাওবা করতে হবে তা ছোট কিয়ামত হোক [মৃত্যু] বা বড় কিয়ামতই হোক [পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া]। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে গরগরা উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন”।

এগার- সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করা:
কারণ, হাদীসে বর্ণিত রাসূল সা. বল যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তা’আলা তার তাওবা কবুল করবেন”।

গুনাহের প্রকার ও তার থেকে প্রতিকারের উপায়
গুনাহ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
১. আল্লাহ তা’আলা বান্দার উপর যে সকল ইবাদাত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া। যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় না করাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাফ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদাত ছুটে গিয়েছে তা শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী পরে আদায় করে নেয়া। আর যদি পরে আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যে ক্ষেত্রে তার বিকল্প আছে, যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া, তা আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, কিংবা যে ক্ষেত্রে কোন বিকল্প নেই, তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট হতে তাওবার মাধ্যমে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
২. আল্লাহর হক ও নির্দেশ অমান্য করে গুনাহসমুহে লিপ্ত হওয়া। যেমন: মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
৩. আল্লাহর বান্দা তথা মানুষের অধিকার লংঘনজনিত পাপ ও গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক। এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে- 
[ক]  ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত অধিকার লংঘন, এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছেন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটির নিকট হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা মাফ করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে, লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ করিয়ে নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন।
[খ] মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমনÑ হত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ কিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
[গ] মানুষের সম্ভ্রম হরণ করা। যেমনÑ গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে, তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে যাতে আল্লাহ তাকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে, আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং এভাবে তার জন্য বেশী বেশী দু’আ করবে।
[ঘ] ইজ্জত হরণ: যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা। এ বিষয়ে করণীয় হল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অধিকার ফেরত দেয়া এবং তাওবা করা।

গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিক
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, মনে রাখতে হবে, গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও খারাব পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল। যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই।

১- ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া: 
ইলম হল নূর বা আলো যা আল্লাহ তা’আলা মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন। আর গুনাহ হল, অন্ধকার, যা ইলমের নুর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়। ফলে, ইলম ও গুনাহ এক সাথে এক পাত্রে সহাবস্থান করতে পারে না। তাই গুনাহের কারণে বান্দা দীনি ইলম হতে বঞ্চিত হয়। 

২- রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া:
গুনাহের কারণে বান্দা রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “বান্দা গুনাহের লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়”। 

৩- গুনাহ ও পাপাচার মানুষের দেহ এবং আত্মাকে দুর্বল করে দেয়:
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন- নিশ্চয় নেক আমলের কারণে মানুষের চেহারা উজ্জল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায় ও আয় রোজগারে বরকত হয়, দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানুষের অন্তরে অপরের প্রতি মহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়। ফলে তাকে কেউ ভালো চোখে দেখে না।

৪- আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে পাপী ব্যক্তি বঞ্চিত হয়:
যদিও গুনাহের কারণে দুনিয়াতে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদাত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে। গুনাহকে ঘৃণা করা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং গুনাহ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করে না। এমনকি সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সমালোচনা করে, তারপরও সে কোন অপরাধ বা অন্যায় করতে লজ্জাবোধ বা খারাপ মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বেঈমান হয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
 ‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র প্রকাশ্য পাপী ছাড়া। আর প্রকাশ্যে পাপ করা হল, আল্লাহ কোন বান্দার অপকর্মকে গোপন রাখল কিন্তু লোকটি তার নিজের অপকর্ম প্রকাশ করে নিজেকে অপমান করে এবং বলে থাকে, হে ভাই! আমি আজ অমুক অমুক কাজ করেছি - ইত্যাদি। এভাবে সে তার নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করে অথচ আল্লাহ তার গুনাহকে গোপন রাখে”।  

৬- গুনাহ করাকে হালকাভাবে দেখা:
বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। আর এটাই হল ধ্বংসের নিদর্শন। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন-

“একজন মুমিন সে গুনাহকে এমন ভাবে ভয় করে যে, সে যেন একটি পাহাড়ের নিচে আছে আর আশংকা করছে যে পাহাড়টি তার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে একজন বদকার ব্যক্তি সে তার গুনাহকে মনে করে তার নাকের উপর একটি মাছি বসে আছে হাত নাড়া দিল আর সে চলে গেল”।

৭-গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়:
কারণ হল, সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহ আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যা কিছু করা হবে, তাই অপমান অপদস্থের কারণ হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
 ‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহই জন্য”।
অর্থাৎ, ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ সে আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাবে  না।

৮- গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয়:
মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভেয়ে দেয়, ফলে গুনাহের কারণে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়।

৯- গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়।
যেমন, আল্লাহ তা’আলা বলেন-
 ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছেন”।
এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
অর্থ: যখন কোন মু’মিন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে তারপর সে যখন তাওবা করে এবং গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায় তখন তার অন্তর পরিস্কার হয়ে যায়। আর যখন মু’মিন আবারো গুনাহ করে তখন অন্তরের কালো দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে মু’মিনের অন্তরে আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত ‘রাইন’ তথা মরিচা প্রভাব বিস্তার করে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘কক্ষনো না, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে।’’(সূরা মুতাফফিফীন, আয়াত: ১৪)

১০- গুনাহ অভিশাপকে টেনে আনে:
গুনাহ বান্দাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগার ও পাপীদের উপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন - সুদগ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনি ভাবে চোরের উপর অভিশাপ করেছেন। গাইরুল্লাহর নামে জাবেহকারী, ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারী সহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেন।

১১-গুনাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ।
কেননা আল্লাহ তার নবীকে নর-নারী সকলের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।

গুনাহ করার পর তাওবার সুযোগ
গুনাহ যত ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না। যদি কোন কারণে আপনার থেকে -ছোট হোক বা বড় হোক- কোন গুনাহ প্রকাশ পায় আপনি সাথে সাথে সে গুনাহ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে খালেস তাওবা করে নেবেন। অন্যথায় ছোট গুনাহও যখন বার বার করা হয়ে থাকে তখন তা আর ছোট থাকে না, তখন তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং তা আপনার জন্য খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আপনি জেনে রাখুন [আল্লাহ আপনার প্রতি ও আমার প্রতি দয়া করুন] পরাক্রমশালী আল্লাহ তার বান্দাদের নিষ্ঠার সাথে তাওবা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠার সাথে তাওবা কর [প্রত্যাবর্তন কর]। ’’ আমরা যখন কোন গুনাহ করি, কিরামান কাতিবীন [ফেরেশতা] সাথে সাথে আমাদের গুনাহ লেখেন না। তারা আমাদের কারো গুনাহ্ লিখার পূর্বে আমাদেরকে তাওবা করার জন্য অনেক সুযোগ দেন। যখন বান্দা গুনাহ করার পর তাওবা করে, তখন তার গুনাহ সাথে সাথে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যখন সে তাওবা না করে, তখন তার গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন কোন অপরাধ করে, তাকে সময় দেয়া হয়। তার গুনাহ লিখা হয় না। যখন সে তাওবা করে, তখন তার গুনাহ লিখা হয় না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর যদি ক্ষমা না চায়, তখন একটি গুনাহ লিখা হয়। আর একজন মুমিন বান্দা যখন বিশ বছর পরও তার গুনাহের কথা স্মরণ করে তার রবের নিকট ক্ষমা চায়, তখন তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। আর গুনাহ করার পর ব্যক্তি অনেক সময় তার অপরাধ ভুলে থাকে। আল্লাহ বান্দার গুনাহগুলো মাফ করার জন্য অপেক্ষা করেন এবং তিনি তার হাতকে বাড়িয়ে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত পেতে রাখে, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত পেতে দেয়। এটি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”।

গুনাহকে তুচ্ছ মনে করার পরিণতি
বর্তমান যুগের সমস্যা হল, অনেক মানুষই আল্লাহকে ভয় করে না, তারা রাতদিন বিভিন্ন রকমের গুনাহ করে চলেছে। এদের কেউ কেউ আবার গুনাহকে তুচ্ছজ্ঞান করে। এজন্য দেখবেন এদের কেউ কেউ সগীরা গুনাহকে খুবই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখে থাকে। যেমন বলে, একবার খারাপ কিছু দেখলে অথবা কোন বেগানা মহিলার সাথে করমর্দন করলে কি-ই বা ক্ষতি হবে?
অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিস যেমন পত্র-পত্রিকার খারাপ দৃশ্য বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে নজর দেয়, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে এটি হারাম, তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে, এতে কতটুকু গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন নিম্নোক্ত দুটি বর্ণনার সাথে যা ইমাম বুখারী উলে¬খ করেছেনÑ
এক: আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 
তোমরা এমন সব কাজ কর যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।
দুই: ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
 “একজন মুমিন গুনাহকে এভাবে দেখে থাকে যে, সে যেন এক পাহাড়ের নিচে বসে আছে যা তার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে পাপী তার গুনাহকে দেখে যেন মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, তাকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়”।
এরা কি বিষয়টির বিপদ উপলব্ধি করতে পারবে যখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীস পাঠ করবে;

“তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও! নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলোর উদাহরণ হল ঐ লোকদের মত যারা কোন মাঠে বা প্রান্তরে গিয়ে অবস্থান করল এবং তাদের প্রত্যেকেই কিছু কিছু করে লাকড়ি [জ্বালানি কাঠ] সংগ্রহ করে নিয়ে এলো। শেষ পর্যন্ত এতটা লাকড়ি তারা সংগ্রহ করল যা দিয়ে তাদের খাবার পাকানো হল। নিশ্চয় নগণ্য ছোট ছোট গুনাহতে লিপ্ত থাকা ব্যক্তিদেরকে যখন সেই নগণ্য ছোট ছোট গুনাহগুলো গ্রাস করবে [পাকড়াও করবে] তখন তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে।” অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে, “তোমরা নগণ্য ছোট ছোট গুনাহ থেকে সাবধান হও; কেননা সেগুলো মানুষের কাঁধে জমা হতে থাকে অতঃপর তাকে ধ্বংস করে দেয়”। 
স্কলারগণ উলে¬খ করেছেন: যখন সগীরা গুনাহর সাথে লজ্জাশরম কমে যাবে, কোন কিছুতে ভ্রƒক্ষেপ করবে না, খোদাভীতি থাকবে না এবং আল্লাহর ব্যাপারে ভক্তি হবে না তখন একে কবীরা গুনাহতে পরিণত করবে। এজন্যই বলা হয়েছে যে, “ক্রমাগত পাপ করলে তা আর সগীরা থাকে না এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে, তা আর কবীরা থাকে না”। অর্থাৎ, ক্রমাগতভাবে সগীরা গুনাহ করতে থাকলে তা কবীরা গুনাহে পরিণত হয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকলে কবীরা গুনাহ আর গুনাহ থাকে না, বরং তা মাফ হয়ে যায়। যার এ অবস্থা তাকে আমরা বলি, গুনাহ ছোট আপনি এদিকে দৃষ্টি দিবেন না, বরং আপনি দৃষ্টি দিবেন এদিকে যে, আপনি কার অবাধ্যতা করছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
 “আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে বসে অথবা যুলম করে নিজেদের প্রতি, সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে ও নিজদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যে পাপ করেছে জেনে শুনে তা চালিয়ে যাওয়ার জেদ করে না।”
এ কথাগুলো দ্বারা অবশ্যই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ সত্যবাদীগণ, যারা অনুভব করছেন তাদের গুনাহের ব্যাপারটি। তারা নয় যারা তাদের গোমরাহীতে অনড়, তাদের বাতিল অবস্থার প্রতি অবিচল। এটি তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে মহান আল্লাহর এ বাণীকে:
 
“আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু”। 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত বাড়িয়ে রাখেন, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য সারা রাত হাত বাড়িয়ে দেন। এটি ঐ দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”। তেমনি যারা ঈমান রাখে এ বাণীর উপর:
“আর নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হল যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”। 

অপরাধ যত বড়ই হোক আল্লাহর ক্ষমা তার চেয়েও বড়

অপরাধ ও গুনাহ যত বড় বা বেশি হোক না কেন, যখন বান্দা তাওবা করবেন, আল্লাহ তা’আলা তার অপরাধকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আমাদের কারো মনে এমন কোন প্রশ্ন  জাগে যে, আল্লাহ তা’আলা কি ছোট বড় সব ধরনের গুনাহ ক্ষমা করবেন?। অপরাধ যদি বড় হয় তাও কি তিনি ক্ষমা করবেন?। তার উত্তর হল হ্যাঁ যত বড় অন্যায় হোক না কেন আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
 “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবা কবূল করেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। আর তোমরা যা কর, তা তিনি জানেন”। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
“তিনি পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবূলকারী, কঠোর আযাবদাতা, অনুগ্রহ বর্ষণকারী। তিনি ছাড়া কোন [সত্য] ইলাহ নেই। তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন”।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, 
“আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।
যদি আপনি এ পরিমাণ অপরাধ করেন, ফলে আপনার গুনাহ আকাশ ছুঁয়ে গেল, অতঃপর আপনি লজ্জিত হয়ে ফিরে আসলেন এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার তাওবা অবশ্যই কবুল করবেন এবং আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমাকে পাওয়ার আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘেœ ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে, তারপরও তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘেœ তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইতে আসলে যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি, আমি জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব”।
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, যখন কোন বান্দা আল্লাহর দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয়, আল্লাহ বলেন, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক বাহু অগ্রসর হই। আর যখন কোন বান্দা আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।

একশজন লোক হত্যাকারীর তাওবা
একজন মানুষ যত গুনাহ করুক না কেন, সে যখন গুনাহ থেকে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। নিম্নে আমরা আগেকার উম্মতদের মধ্য থেকে একজন লোকের কাহিনী উলে¬খ করছি, যিনি একশ লোককে হত্যা করেন।

“আবু সাঈদ সাদ বিন মালেক বিন সিনান আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের পূর্বের জাতির একটি লোক নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করে, এরপর সে সবচেয়ে বড় একজন জ্ঞানী লোকের [আলেমের] খোঁজ করে, তখন তাকে একজন আবেদের কথা বলা হয়। সে তার কাছে গিয়ে বলল, আমি নিরানব্বই জন মানুষকে খুন করেছি, আমার তাওবা আছে কি? সে বলল, না তোমার তাওবা নাই। অতঃপর লোকটি তাকেও হত্যা করে এবং সে একশ জন লোক পুরা করে। অতঃপর সে আবারও একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির খোঁজ করলে একজন আলেমের খোঁজ দেয়া হয়। সে তাকে গিয়ে বলে, আমি একশটি লোক হত্যা করেছি, আমার কি তাওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। কে তোমার ও তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে? তুমি উমুক স্থানে যাও সেখানে কিছু মানুষ রয়েছে যারা আল্লাহর ইবাদাত করে, তুমি তাদের সাথে গিয়ে আল্লাহর ইবাদাত কর। আর তুমি তোমার এলাকায় ফিরে যেও না। কেননা, তোমার এলাকাটা খুব খারাপ এলাকা। সে তখন যাত্রা শুরু করে। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার সময় তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার ব্যাপারে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতারা বিবাদে লিপ্ত হয়। রহমতের ফেরেশতারা বলে, সে তাওবা করে আল্লাহর পানে ছুটে এসেছে। পক্ষান্তরে আযাবের ফেরেশতারা বলে, সে কখনো কোন ভালো কাজই করেনি। অতঃপর সেখানে মানুষের বেশে একজন ফেরেশতা আসে। তারা তাকে বিচারক মানে। তিনি বলেন, তোমরা দুদিকটা মেপে দেখ। সে যেদিকে নিকটবর্তী হবে, তাকে সেদিকের বলে ধরে নেয়া হবে। অতঃপর মেপে দেখা গেল যে, সে যেদিকে যাচ্ছিল সে দিকটাই নিকটে। এর ফলে তাকে রহমতের ফেরেশতারা নিয়ে যায়।
অপর বর্ণনায় এসেছে- সে ছিল ভাল গ্রামটার দিকে এক বিঘত পরিমাণ আগানো যার ফলে তাকে সেদিকের ধরে নেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ অহি করে দেন যেন এদিক দূরে হয়ে যায় এবং ঐদিকটা নিকটে হয়ে যায় এবং বলেন এর মধ্যখান মাপো যার ফলে তারা মাত্র এক বিঘত পরিমাণ এর দিকে আগান পায়, যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়”।
 একটু ভেবে দেখুন, লোকটি এত বড় অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। আমরা যারা আজকে তাওবা করতে চাই তাদের কেউ আশা করি এত বড় অপরাধী নই। তাহলে আমাদের ক্ষমা পাওয়া তো আরও সহজ। আমরা যদি খালেস মন নিয়ে আল্লাহর দরবারে তাওবা করার জন্য উপস্থিত হই তখন আমার তাওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই। আমাদের গুনাহ তো এ ব্যক্তির চেয়ে বেশী নয় এবং বড় নয় তাহলে হতাশা কেন? আল্লাহতো আমাদের ক্ষমা করবেনই।

তাওবা করার লাভ ও উপকারিতা
১. তাওবা দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়ঃ
  কেউ হয়ত বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু তাওবা করলে আমার লাভ কি? এবং কে আমাকে নিশ্চয়তা দেবে যে, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন? আমি সঠিক পথে চলতে চাই কিন্তু আমার মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে, যদি আমি নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন তাহলে আমি তাওবা করতাম?
আমি তাকে বলব, আপনার ভিতরে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সে অনুভূতি ইতঃপূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে নিম্নোক্ত দুটি রেওয়ায়েত পড়েন, তাহলে আপনার মনের প্রশ্ন আশা করি দূর হয়ে যাবে।
প্রথমত: ইমাম মুসলিম আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করেন। তাতে উলে¬খ করা হয়েছে, তিনি বলেন:

“মহান আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামকে পছন্দনীয় করে দিলেন, তখন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আপনার হাত বাড়ান আমি বাইয়াত করবো। তখন তিনি হাত বাড়ালে আমি হাত গুটিয়ে নেই। তিনি বলেন, হে আমর তোমার কি হল? আমি বললাম, আমি শর্ত করতে চাই। তিনি বলেন, কিসের শর্ত? বললাম, আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়। তিনি বললেন, হে আমর! তুমি কি জাননা যে, ইসলাম পূর্বের সবকিছু ধ্বংস করে দেয় এবং হিজরত পূর্বের সমস্ত গুনাহ ধ্বংস করে দেয়।
দ্বিতীয়ত: সহীহ মুসলিমে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:

 কিছু মুশরিক লোক মানুষ হত্যা করে এবং তারা অনেক হত্যাকান্ড ঘটায়, জিনা করে এবং অনেক ব্যভিচার করে এরপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলে, আপনি যা বলেন এবং যার দিকে আহ্বান করেন তা অতি উত্তম। এখন আপনি যদি আমাদেরকে জানাতেন যে, আমরা যা করেছি এর কি কাফ্ফারা রয়েছে? তখন আল্লাহর এ বাণী নাযিল হয়:
 
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা’বুদের উপাসনা করে না এবং আল্লাহ যাকে [হত্যা করা] হারাম করে দিয়েছেন, তাকে হত্যা করে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত এবং তারা ব্যভিচার করে না, আর যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে, তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে তাতে অনন্তকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে। কিন্তু যারা তাওবা করবে এবং ঈমান আনবে আর নেক কাজ করতে থাকবে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দিবেন। আর আল্লাহ বড়ই করুণাময়।
এবং এ আয়াতটিও নাযিল হয়:

“আপনি বলে দিন, [আল্লাহ বলেন] হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।”

হে মুসলিম ভাই! আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তাওবা দ্বারা শুধু গুনাহ মাপ হয় না বরং তাওবা আরও অনেক ফায়েদা ও লাভ রয়েছে। যেমন-

২. তাওবা দ্বারা আল্লাহর ভালো বাসা ও মহব্বত লাভ হয়:
 আল্লাহ তা’আলা তাওবাকারীকে মহব্বত করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং ভালবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে”।

৩. দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন:
তাওবা দ্বারা একজন বান্দা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”।

৪. গুনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া হয়:
বান্দা যখন তার অপরাধ বুঝতে পেরে সত্যিকার তাওবা করে, তখন আল্লাহ তা’আলা শুধু তার গুনাহকেই ক্ষমা করবেন না, বরং গুনাহগুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আপনি মহান আল্লাহ তা’আলার এ বাণীকে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, তাতে আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের কী সু-সংবাদ দিচ্ছেন:

“তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। 
একটু ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন এ বাণীটি, “তাদের পাপকে আল্লাহ নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন”। এতে আপনার নিকট মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে। আলেমগণ বলেন, পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে:
এক: খারাপ গুণকে ভালগুণে পরিবর্তন করে দেয়া। যেমনÑ তাদের শিরককে ঈমানে পরিবর্তন করে দেয়া এবং ব্যভিচারকে পবিত্রতা ও চারিত্রিক সততায়, মিথ্যাকে সত্যবাদিতায় এবং খিয়ানতকে আমানদারীতা দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়া।
দুই: তারা যে পাপ করেছে তা কিয়ামতের দিন নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া। আপনি একটু ভাল করে পাঠ করুন, তাদের পাপকে নেকীতে পরিবর্তন করে দিবেন। তিনি একথা বলেননি প্রত্যেক পাপের স্থান নেকীতে পরিবর্তন করবেন। কেননা হতে পারে কম বা সমান অথবা বেশীতে পরিবর্তন করে দিবেন। এটা নির্ভর করছে তাওবাকারীর নিষ্ঠা ও পূর্ণতার উপর। আপনি কি এর চেয়ে উত্তম অনুগ্রহ আরো আছে বলে মনে করেন? আপনি মহান প্রভূর বাণীর উত্তম ব্যাখ্যা দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসে:

“আবদুর রহমান বিন জুবাইর আবু তালীব শাতবুল মামদুদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, একজন খুবই বৃদ্ধ ব্যক্তি লাঠিতে ভর দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যার চোখের পাতা তার চোখের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি রাসূলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন, যদি কোন লোক সব ধরনের পাপ করে থাকে, এমন কোন পাপ নেই যা সে করেনি [ছোট বড় সব ধরনের পাপই করেছে]।
[অপর বর্ণনায় এসেছে যে, সে সব পাপই করেছে, তার পাপ যদি দুনিয়াবাসীর উপর বন্টন করে দেয়া হত তাহলে তাদেরকে ধ্বংস করে দিত] এর কি তাওবা করার সুযোগ রয়েছে? তিনি বললেন, আপনি কি ইসলাম গ্রহণ করছেন? সে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন, ভাল কাজ করবেন এবং মন্দ [পাপ] কাজ পরিত্যাগ করবেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্য সব পাপকে ভাল কাজে পরিণত করে দিবেন। সে বলল, আমার গাদ্দারী ও কুকীর্তি সমূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, সে বার বার আল্লাহু আকবার [আল্লাহ মহান] ধ্বনি উচ্চারণ করছিল যতক্ষণ না সে চোখের আড়াল হয়ে যায়”।
এখানে তাওবাকারী হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আমি ছিলাম পথভ্রষ্ট, নামায পড়তাম না, ইসলামের গন্ডির বাইরে ছিলাম, আমি কিছু ভাল কাজও করেছি, এখন তাওবা করার পর এগুলো কি ধরা হবে, নাকি সব হাওয়া হয়ে যাবে?
আপনার প্রশ্নের জবাব হল, উরওয়া ইবনে জুবাইর হতে বর্ণিত হাদীসটি। তিনি বলেন, 
হাকীম ইবনে হিজাম তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলিয়াতের যুগে দান-খয়রাত, গোলাম মুক্ত করা, আত্মীয়তা রক্ষা করা ইত্যাদি নেকীর কাজ করতাম। আমি কি এতে নেকী পাব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছো, পূর্বেরগুলোকে উত্তম ভাবেই পাবে।” [বুখারী]
সুতরাং, এসব পাপ ক্ষমায় পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং এসব জাহেলিয়াতের যুগের নেকী তাওবার পরে ঠিক রাখা হবে। তাহলে আর কি-ইবা বাকী থাকলো?

৫. তাওবা দ্বারা  জান্নাত লাভ হয়:
তাওবা জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়। আল্লাহ তা’আলা তাওবাকারীদের গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।  আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত”।
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,
﴿
“আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!

৬. দুনিয়াতে উত্তম জীবন উপকরণ ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান লাভ হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে করীমে এরশাদ করেন-
“আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন”।
অর্থাৎ, দুনিয়াতে তাকে উত্তম ভোগ উপকরণ দান করবেন আর তার ইবাোত ও আনুগত্য অনুযায়ী তাকে প্রতিদান দেবেন।

৭. আসমান থেকে সময়মত বৃষ্টি ও তোমাদের শক্তি দান করবেন:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে হুদ আ. এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, হুদ তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলছিল,
 “হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও অতঃপর তার কাছে তাওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না”।

৮. দু’আ কবুল হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে সালেহ আ. এর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সালেহ তার সম্প্রদায়ের লোকদের বলছিল,


আর সামূদ জাতির প্রতি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই সালিহকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আবাদের ব্যবস্থা করেছেন । সুতরাং তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁরই কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমার রব নিকটে, সাড়াদানকারী’।

৯. তাওবার দ্বারা যাবতীয় বলা-মুসিবত ও আল্লাহর আযাব দূর হয়:
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-
আর আল্লাহ এমন নন যে, তাদেরকে আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আযাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে। সূরা আনফাল, আয়াত:
তাওবার দ্বারা পেরেশানি দূর হয়, বিপদ থেকে মুক্ত পায় এবং রিযিক বৃদ্ধি পায়:
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. এরশাদ করেন

 “যে ব্যক্তি বেশি বেশি করে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করে, আল্লাহ তা’আলা তার সমস্ত পেরেশানীকে দূর করে দেয়, সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করে এবং তাকে তার ধারণাতীত রিযিক দান করে”।

তাওবার ক্ষেত্রে রাসূল সা. এর অনুসরণ

আল্লাহ তা’আলা রাসূল সা. এর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় সব গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তার তাওবা করা জরুরি নয়। তারপরও তিনি বলেন, হে মানুষ তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। কারণ, আমি দৈনিক একশত বার আর দরবারে ক্ষমা চাই। তিনি আরও বলেন, আমি দৈনিক সত্তুরের অধিক আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি। আর আমাদের জন্য রাসূলের অনুকরণ করা ও তার সূন্নাতের অনুসরণ করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ ও উত্তম আদর্শ। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
একটি মজলিসের মধ্যে রাসূল সা.  ‘হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর, আমার তাওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি ক্ষমা কারী ও তাওবা কবুল কারী’ এ কথাটি একশ বারের অধিক বলতেন বলে সাহাবীরা গণনা করেন। 
সূরা নাসর নাযিল হওয়ার পর যত সালাত আদায় করতেন, সব সালাতে তিনি এ দুআ পড়তেন।
তিনি আরও বলেন, তোমাদের কাউকে তার আমল নাজাত দেবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনাকেও নাজাত দেবে না? তিনি বললেন, না আমাকেও না, তবে যদি আল্লাহ তা’আলা তার রহমত ও দয়া দ্বারা আমাকে ডেকে নেন।
সুতরাং আমাদের রাসূল এর অনুসরণ করতে হবে এবং তার সাহাবীরা কিভাবে তাওবা করেছে তা অনুকরণ করতে হবে। নিম্নে দুই সাহাবীর প্রসিদ্ধ দুটি ঘটনা উল্লেখ করছি।

সাহাবীদের তাওবা
মনে রাখবেন, সাহাবীরা ছিল উম্মতের আদর্শ। তারা যখন কোন ভুল করতেন, সাথে সাথে তারা তার থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেতেন এবং গুনাহ হতে পবিত্র হওয়ার জন্য তারা অস্থীর হয়ে যেতেন। তারা তাদের নিজেদের অপরাধ স্বীকার করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে তা প্রকাশ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করতেন না। আমরা এখানে এ উম্মতের প্রথম যুগের রাসূলের সাহাবীদের তাওবার কয়েকটি ঘটনা উদাহরণ স্বরূপ উলে¬খ করবো।
মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামীর রা. এর তাওবা:
এক Ñ বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু তা’আল আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মায়েয ইবনে মালেক আল আসলামী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি, আমি জিনা করেছি। আমি চাই আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্প্রদায়ের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে, তার মানসিক কোন সমস্যা আছে বলে তোমাদের কাছে খবর আছে কি? তারা বলল, আমরা তো এ ধরনের কিছু জানিনা। তাকে আমরা পূর্ণ জ্ঞানবানই দেখছি। আমাদের দৃষ্টিতে সে একজন সুস্থ মানুষ। এরপর সে তৃতীয়বার আবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসে এবং রাসূল আবার তার গোত্রের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তারা জানায়, তার কোন মানসিক সমস্যা নেই। অতঃপর যখন সে চতুর্থবার আসে তখন তার জন্য গর্ত খুঁড়া হয়,  পাথর ছুঁড়ে হত্যার মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়।
দুই- গামেদিয়া [গামেদিয়া গোত্রের জনৈকা মহিলা] এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যভিচার করেছি, আপনি আমাকে পবিত্র করুন! রাসূল তার কথার প্রতি কোন কর্ণপাত করলেন না এবং তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনি আমাকে ফেরত পাঠালেন? হয়তো আপনি আমাকে মায়েযের মত ফেরত পাঠাচ্ছেন! আল্লাহর শপথ! আমি অবৈধভাবে গর্ভবতী। তখন  তিনি  তাকে বললেন, যখন সন্তান প্রসব করবে, তখন এস। সন্তান জন্ম দেবার পর বাচ্চাটিকে একটি কাপড়ে জড়িয়ে নিয়ে মহিলা রাসূলের নিকট হাজির হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও যখন সে খাবার খেতে পারবে তখন আসবে। এরপর যখন বাচ্চা খাবার খেতে শুরু করে তখন মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে এসে হাজির হন, তখন বাচ্চার হাতে এক টুকরা রুটি ধরা ছিল। সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! বাচ্চা এখন খাবার খাচ্ছে। অতঃপর তার বাচ্চাটাকে একজন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া হল। এরপর তার বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়তে নির্দেশ দেয়া হল। এরপর লোকদের নির্দেশ দেয়া হল  যেন পাথর ছুঁড়ে হত্যার মাধ্যমে তার শাস্তি কার্যকর করা হয়। খালিদ ইবনে অলিদ একটা পাথর ছুঁড়ে তার মাথায় মারেন, যার ফলে রক্ত ছুটে খালিদের মুখে এসে পড়ে, এজন্য খালিদ তাকে গালি দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গালি শুনতে পেয়ে বলেন, ধীরে, হে খালিদ! আমার জীবন যে সত্ত্বার হাতে রয়েছে তার কসম করে বলছি। এ মহিলা এমন তাওবা করেছে, যদি এ তাওবা কোন অবৈধ ট্যাক্স আদায়কারী করত, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হত। এরপর নির্দেশ দেয়া হয় এবং তার জানাযা পড়ে তাকে দাফন করা হয়। 
এক বর্ণনায় এসেছে, উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে রজম [পাথর ছুড়ে হত্যা] করলেন এরপর তার আবার জানাযা পড়বেন? তখন তিনি বললেন, সে এমন তাওবা করেছে তা যদি মদীনার সত্তর জন লোকের মাঝে বন্টন করে দেয়া হত, তাহলে তা তাদের গুনাহ মাপের জন্য যথেষ্ট হত। তুমি কি এর চেয়ে আর কাউকে উত্তম দেখেছ, যে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজের জীবন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে”?। 

আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না

আপনি হয়তো আমাকে বলতে পারেন, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু আমার গুনাহের পরিমাণ অনেক বেশী, আমি আমার জীবনে যত রকমের গুনাহ আছে, তা সবই আমি করেছি। আমি জীবনে অনেক বড় বড় পাপ কামাই করেছি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিগত এত বছরের সব পাপ কি আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন?
হে সম্মানিত পাঠক ভাই! আপনাকে আমি বলছি, এটি বিশেষ কোন সমস্যা নয় বরং এটা অনেকেরই সমস্যা যারা তাওবা করতে চায়। গুনাহ যত বড় হোক না কেন, আল্লাহর রহমত ও দয়া তার চেয়ে অনেক বড়। আল্লাহ তা’আলা সব ধরনের পাপকেই ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ তা’আলা কুরানে করীমে স্বীয় বান্দাদের সম্বোধন করে বলেন,
“বলে দাও যে, [আল্লাহ বলেন] হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু। আর তোমরা তোমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকট আত্মসমর্পণ কর আযাব আসার পূর্বেই, অতঃপর আর তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না”।
আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করবেনই। আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহ আনহু হতে হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, 
أআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যখনই তুমি আমাকে ডাকবে ও আশা করবে, আমি তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি আছে, সেগুলো নির্বিঘ্নে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তোমার গুনাহের স্তুপ  আসমান পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাইলে, আমি নির্বিঘ্নে তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি জমিন ভর্তি গুনাহ করে থাক, তারপর যে অবস্থায় তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক করোনি সে অবস্থায় তুমি আমার নিকট আসলে, আমি তোমার কাছে জমিন ভর্তি ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন,
“একজন বান্দা রাতে যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আাল্লাহ তা’আলা সারা হাত পেতে রাখেন, আর দিনের বেলা যে সব অপরাধ করে, তা ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ তা’আলা রাতে হাত পেতে দেন। এটি ততদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে, যেদিন সূর্য্ পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে”। 
 মোট কথা পাপের পরিমাণ যত বেশী হোক না কেন আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই ক্ষমা করবেন। কিন্তু তারপরও আমাদের অন্তরে এ অনুভূতি জাগে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন কিনা? এ অনুভূতি জাগ্রত হওয়া কারণ হচ্ছে: 
প্রথমত: আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার ব্যাপকতা সম্পর্কে বান্দার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস না থাকা। এর ব্যাখ্যা হিসেবে মহান আল্লাহর এ বাণীই যথেষ্ট হবে:
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু”। 
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর রহমত যে কত ব্যাপক সে সম্পর্কে ঈমানে ঘাটতি থাকা। এক্ষেত্রে নিম্নের হাদীসে কুদসীই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি জানলো যে, আমি গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা রাখি তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেব এ ব্যাপারে কোন কিছুতেই পরওয়া করবো না, যদি সে আমার সাথে কোন কিছু শরীক [অংশীদার] না করে থাকে”। এটি হবে, যখন বান্দা আল্লাহর সাথে পরকালে সাক্ষাত করবে।
তৃতীয়ত: তাওবার কার্যকর ক্ষমতা সম্পর্কে এ ধারণা না থাকা যে, তা সব গুনাহকেই ক্ষমা করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে রাসূলের এ হাদীসই যথেষ্ট, “যে ব্যক্তি তাওবা করবে তার যেন কোন গুনাহ থাকবে না।”
ক্ষমাকে যারা খুব কঠিন বলে মনে করে এবং চিন্তা করে, আল্লাহ কঠিন পাপ ক্ষমা করবেন কিনা? তাদের জন্য নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করছি।

তাওবার প্রতিবন্ধকতা

১- শয়তান মানুষের সামনে গুনাহগুলো সু-শোভিত করে তুলে এবং প্রিয় বানিয়ে দেয়। ফলে বান্দার অন্তর গুনাহের কর্মের দিক অগ্রসর ও ধাবিত হয়। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করা হতে পলায়ন করে এবং ইবাদাত বন্দেগী করা তার নিকট কষ্টকর হয়।
২- হারামকে হালাল হিসেবে তুলে ধরে এবং হালালকে হারাম হিসেবে তুলে ধরে শয়তান বান্দাকে ধোকায় ফেলে দেয়। এ ছাড়াও ভালো কাজকে খারাপ এবং খারাপ কাজকে ভালো হিসেবে প্রকাশ করে শয়তান মানুষকে ধোকা দেয়। ফলে তার আর তাওবা করার সুযোগ হয় না। সে যে অন্যায় করছে, তা সে বুঝতেই পারে না।
৩- শয়তান বান্দাকে তাওবা থেকে ফিরানোর জন্য তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের আশা দিয়ে থাকে। শয়তান বান্দাকে বলতে থাকে, তুমি তাওবা করতে এত তাড়াহুড়া করছ কেন? তোমারতো তাওবা করার এখনো অনেক সময় আছে। তুমি এখনো যুবক, পড়া লেখা শেষ করোনি, চাকুরি পাওনি ইত্যাদি। এরপর যখন চাকুরি পায় তখন বলে এখনো বিবাহ করোনি ইত্যাদি বলে শয়তান মানুষকে তাওবা থেকে ফিরিয়ে রাখে।  এ ধরনের সমস্য সামনে আসলে মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে। কারণ, মৃত্যু ছোট বড় কাউকেই ছাড়ে না। যে কোন সময় যে কোন বয়সের লোকের মৃত্যু এসে যেতে পারে। তখন আর তাওবা করার সুযোগ থাকবে না।
৪- গুনাহকে ছোট মনে করে তাওবা করা হতে বিরত থাকে। যখন কোন একটি গুনাহ করে, তখন শয়তান এসে বলে, এতো বড় ধরনের কোন অপরাধ নয় যে, তা হতে তাওবা করতে হবে। মানুষ এর চেয়ে আরও বড় বড় গুনাহ করে থাকে।
৫- তাওবা করার পর গুনাহ ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যের উপর অবিচল থাকা কষ্টকর হওয়ার কারণে তাওবা করতে মনে চায় না। কারণ, যখন তাওবা করে তখন সাথীরা বলে তুমি এত কষ্ট করছ কেন? তোমার থেকে তোমার সাথীরা দূরে সরে যাচ্ছে, সবাই তোমার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যাচ্ছে।
৬- হতাশাও মানুষকে তাওবা থেকে ফিরিয়ে রাখে। কারণ, যখন কোন বান্দাহ গুনাহ করার পর তাওবা করতে চায়, তখন শয়তান এসে বলে, তোমার গুনাহ অনেক বড় যা আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবে না। যদি ক্ষমা নাই করে, তাহলে তাওবা করে লাভ কি? ফলে সে তাওবা করা হতে বিরত থাকে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো যখন আপনার সামনে আসবে তখন আমরা আপনাকে বলব, আপনি শয়তানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন। নিশ্চয় শয়তানদের চক্রান্ত খুবই দুর্বল। আপনি শয়তানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন, এসব শয়তান ও তার দোসররা অবশ্যই থেমে যাবে অতঃপর খুব শীঘ্রই তার ষড়যন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়বে এবং মুমিনের ধৈর্য ও দৃঢ়তার সামনে সে পরাজিত হবে।
আপনি নিশ্চিত থাকুন যে, আপনি যদি শয়তানের কথা মত চলেন, তার কাছে মাথা নত করেন, তাহলে সে আরো বেশী বেশী ধোকা আপনার বিরুদ্ধে দাঁড় করাবে। সুতরাং পূর্বে ও পরে সর্বাবস্থায় আপনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতএব তার অনুসরণ না করে আল্লাহর সাহায্য চান এবং বলুন:
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতির আশংকা করতেন তখন বলতেন:
“হে আল্লাহ! আমি আপনাকে তাদের গলার উপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনার নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি তাদের খারাপী থেকে”।
অনেক সময় দেখা যায় গুনাহের কর্ম ছাড়ার কারণে তার সাথে তার খারাপ বন্ধুরা যাদের সাথে ইতিপূর্বে বন্ধুত্ব ছিল, তারা যোগাযোগ করে তাকে হুমকি দিয়ে বলে, তুমি এতদিন আমাদের সাথে ছিলে এখন কেন আমাদের থেকে দূরে সরে গেলে? আমাদের কাছে তোমার সব গোপন তথ্য আছে যেগুলো আমরা রেকর্ড করে রেখেছি, তোমার ছবিও আমাদের নিকট রয়েছে, তুমি যদি আমাদের সাথে বের না হও তাহলে তোমার পরিবারের নিকট সব ফাঁস করে দিবো! একথা সঠিক যে, আপনার অবস্থান খুবই নাজুক।
এ ধরনের কোন পরিস্থিতির স্বীকার হলে, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে রয়েছেন, তাওবাকারীদের সাথে রয়েছেন এবং তিনি মুমিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না এবং তাদেরকে ছেড়ে দিবেন না। তাঁর নিকট কোন বান্দা আশ্রয় নেয়ার পর সে কখনো অপমানিত হয় না। আপনি জেনে রাখুন, নিশ্চয় কঠিন অবস্থার সাথেই সহজ অবস্থা আসে এবং সংকীর্ণতার পরেই প্রশস্ততা আসে।
হে তাওবাকারী ভাই!
আপনার জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করছি যা আমাদের কথার যথার্থতা প্রমাণ করবে। ঘটনাটি হল, প্রখ্যাত ফেদায়ী [গেরিলা] সাহাবী মারসাদ ইবন আবিল মারসাদ আল গানাবীর, যিনি দুর্বল মুসলমানদেরকে মক্কা থেকে গোপনে মদীনায় নিয়ে আসতেন। তিনি মক্কা থেকে দুর্বল বন্দী লোকদের গোপনে মদীনায় পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।
মক্কায় একজন নষ্টা মহিলা ছিল যার নাম আনাক এবং সে ছিল তার বান্ধবী। তিনি মক্কার একজন বন্দী লোককে ওয়াদা দিয়েছিলেন মদীনায় পৌছে দেয়ার। তিনি বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি মক্কার এক দেয়ালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। আনাক আমার ছায়া দেখে এগিয়ে আসে এবং বলে, মারসাদ? আমি বললাম হাঁ, মারসাদ। সে বলল, মারহাবা, স্বাগতম, এস আমার কাছে রাত কাটাও। আমি বললাম, হে আনাক! আল্লাহ ব্যভিচারকে হারাম করেছেন। সে তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, হে তাবুবাসীরা! এই লোকটি তোমাদের বন্দীদেরকে নিয়ে ভাগতে চায়।
তিনি বলেন, আটজন লোক আমার পিছু নেয় এবং আমি তখন খান্দামা পাহাড়ে [মক্কার প্রবেশ পথের একটি পাহাড়] ঢুকে পড়ে এক গুহায় লুকিয়ে যাই। এরা আমার সন্ধানে আমার কাছে এসে পড়ে, কিন্তু আল্লাহ আমাকে এদের থেকে আড়াল করে রাখেন। তিনি বলেন, এরপর তারা ফিরে যায় এবং আমিও ঐ লোকটির নিকট গিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে আসি। লোকটি ছিল বেশ ভারী, আমার অনেক কষ্ট হয়ে ছিল। তাকে কিছু দূরে বয়ে নিয়ে গিয়ে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে ফেলি। আমি অনেক কষ্টে তাকে মদীনায় নিয়ে আসি। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আনাককে বিয়ে করতে পারি? [কথাটি দুবার বললাম] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে থাকলেন কোন জবাব দিলেন না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়:
“ব্যভিচারী পুরুষ ব্যভিচারিণী মহিলাকেই বিয়ে করে অথবা মুশরিকা মহিলাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলা ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককেই বিয়ে করে থাকে”। 
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মারসাদ! ব্যভিচারী পুরুষই কেবল ব্যভিচারিণীকে অথবা মুশরিকা মহিলাকে বিয়ে করে থাকে এবং ব্যভিচারিণী মহিলাও একমাত্র ব্যভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক লোককে বিয়ে করে থাকে, সুতরাং তুমি তাকে বিয়ে করো না”। 
আপনি দেখলেন কিভাবে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারের পক্ষে প্রতিরোধ গড়লেন এবং তিনি মুহসিনদের [সৎকর্মশীল লোকদের] সাথে কি আচরণ করলেন? অবস্থা যদি খুবই খারাপ হয় যে, আপনি যা আশংকা করছেন তাই ঘটে, আর এর ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আপনি আপনার অবস্থান বর্ণনা করুন, স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন এবং বলুন, হ্যাঁ, আমি পাপ করতাম। এখন আল্লাহর নিকট তাওবা [প্রত্যাবর্তন] করেছি? এখন তোমরা কি চাও?
আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রকৃত কেলেঙ্কারী তো হল আল্লাহর সামনে কিয়ামতের দিন প্রকাশিত কেলেঙ্কারী। সেই ভয়ানক দিনে যেদিন একশ, দু’শ, হাজার, দু’হাজার লোকের সামনে নয় বিশ্বের সকল মানুষের সামনে, সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে, ফেরেশতা, জিন ও ইনসান সবার সামনে আদম থেকে শুরু করে দুনিয়ার সর্বশেষ মানুষের সামনে তা ঘটবে।
আসুন আমরা ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আ পাঠ করি:
েআর যেদিন সকলকে উত্থাপিত করা হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। যেদিন কোন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কাজে আসবে না। একমাত্র কাজে আসবে যদি সঠিক অন্তঃকরণ নিয়ে কেউ উপস্থিত হয়”। সংকট মুহূর্তে নবীর শেখানো দু’আ পড়ে নিজেকে হেফাযত করুন:

“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ইজ্জত রক্ষা করুন এবং আমাদের নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিশোধ তাদের উপর ফেলুন যারা আমাদের উপর জুলুম করেছে এবং আমাদেরকে সাহায্য করুন তাদের বিরুদ্ধে যারা আমাদের উপর চড়াও হয়েছে। হে আল্লাহ! আমাদের শত্রুদেরকে ও হিংসুকদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে খুশি হতে দেবেন না।”
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হল আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদের তওবা কবুল করেন। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয় তিনি শুনেন ও দোয়া কবুল করেন।

তাওবার সালাত

তাওবার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত বা চার রাকাত সালাত আদায় করা যেতে পারে। অথবা ফরয সালাতের পরও তাওবা করা যেতে পারে। সাইয়্যেদ সাবেক রহ. স্বীয় কিতাব ফিকহুস সূন্নাহতে বিষয়টি উল্লেখ করেন। তারপর তিনি এর প্রমাণ হিসেবে দুটি হাদীস উল্লেখ করেন।
 “আবু বকর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ করার পর ভালোভাবে ওজু করে এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করে- যেমনটি বর্ণিত ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ও ইবনে খুজাইমার বর্ণনায়- তারপর সে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন –

‘‘যারা কোন পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ব্যতীত গুনাহসমূহের ক্ষমাকারী কেই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না।’’ আল্লামা আলবানী সহীহ আবুদাউদে হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।
আল্লামা তাবরানী স্বীয় কিতাব আল-কবীরে বিশুদ্ধ সনদে আবুদ্ দারদা রা. হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, তাতে তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন,
 “যে ব্যক্তি সুন্দর ভাবে ওজু করে, তারপর সে দাঁড়িয়ে ফরয হোক বা নফল হোক দুই রাকাত অথবা চার রাকাত সালাত আদায় করে এবং তাতে সে ভালোভাবে রুকু করে এবং সেজদা করে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

তাওবা কবুল হওয়ার আলামত

যখন কোন ব্যক্তি তাওবার যাবতীয় শর্তপূরণ করে খালেসভাবে আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন এবং গুনাহ মাপ চান, তখন আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। তবে যখন কোন ব্যক্তি তাওবা করে, তার তাওবা কবুল হল কিনা তার কিছু আলামত আছে। যেমন-
এক- তাওবা করার পর লোকটির মধ্যে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, সে এখন পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অধিক নম্র, ভদ্র ও নমনীয়,  পূর্বের তুলনায় অধিক নেক আমল করে, খারাপ সঙ্গীদের সাথে মিশে না, আলেম ওলামা ও ভালো লোকদের সাথে উঠা-বসা করে এবং গুনাহের কর্ম ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে।
দুই- সব সময় আল্লাহর পাকড়াও ও আযাবের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। এক মহুর্তের জন্যও সে আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করে না। সে মনে করে যে কোন সময় আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করতে পারে। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর ভয় তার অন্তরে বিদ্যমান থাকে। তার ভয় তখন দূর হয়, যখন মৃত্যুর ফেরেস্তা এসে তাকে বলে-
‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সু-সংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল’।
তিন- লোকটি সব সময় ইতিপূর্বে যে সব অপরাধ করেছে, তার উপর অত্যন্ত লজ্জা অনুভব করতে থাকে। সে সব সময় আফসোস করতে থাকে আর বলতে থাকে-  হায় এ অন্যায় কাজটি আমি কেন করলাম! আমি যদি এ কাজটি না করতাম!  কতই না ভালো হত! কারণ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার অপকর্মের উপর লজ্জিত হবে না এবং আফসোস করবে না, আখেরাতে যখন সে আল্লাহর নেক বান্দাদের আমলের সাওয়াব ও বিনিময় এবং অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেখতে পাবে, তখন সে লজ্জিত হবে এবং আফসোস করবে। কিন্তু তখন তার লজ্জা ও আফসোস কোন কাজে আসবে না।
আল্লাহ যে কাজে সন্তুষ্ট এমন সব কাজ কর্ম করুন। কেননা কোন মানুষই অপরাধ ও ত্রুটি মুক্ত নয়। আর সমস্ত আদম সন্তানই ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। আর উত্তম ভুলকারী হল আল্লাহর কাছে তওবাকারী আর মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনের মাধ্যমে এবং মহানবী ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হাদীসের মাধ্যমে গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন যে,

অর্থাৎ, হে রাসূল আপনি বলুন নিশ্চয় আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ আমার নিকট প্রত্যাদেশ পাঠানো হয়। আর নিশ্চয়ই তোমাদের ইলাহ এমন মাত্র। তোমরা তার পথেই স্থির ও সুদৃঢ় থাক এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর।
আল্লাহ আরো বলেন,
অর্থাৎ হে মুমিনগণ তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে তওবা কর। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হতে পারবে।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
অর্থাৎ ওহে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তোমাদের রবের নিকটে একনিষ্ঠতার সাথে কবুলযোগ্য তওবা কর। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের থেকে সকল গুণাহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রাবাহিত হয়।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তওবাকারীদেরকে ভালবাসেন এবং তিনি পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকেও ভালবাসেন।

আম্মার বিন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী করীম ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন যে,
হে মানবজাতি তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর এবং আমি প্রতি দিনে একশতবার তওবা করে থাকি। (মুসলিম)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুথেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসূল -কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন যে,
নিশ্চয় আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তার কাছে দৈনিক সত্তরবারের বেশি তওবা করি। (বুখারী)
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলেছেন,
আল্লাহ তার বান্দাহর তওবার কারণে খুব খুশি হন। যখন বান্দাহ তার কাছে তওবা করে তখন বান্দাহ যে অবস্থায় থাকুক না কেন আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন।
আর আনাস এবং ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলেন যে,
যদি আদম সন্তানের জন্য স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত উপত্যকাও হয় তার পরেও তার কাছে দুটি স্বর্ণের উপত্যকা হওয়া ভাল মনে করবে। তারপরও তার মুখ কখনো পূর্ণ হবেনা। তবে মাটি দ্বারা পূর্ণ হবে। আর আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক তওবাকারীকেই ক্ষমা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)

অতঃপর তওবা হল আল্লাহর অবাধ্যচারণ থেকে ফিরে গিয়ে আল্লাহর আনুগত্য পথের দিকে ধাবিত হওয়া। কেননা আল্লাহ হলেন প্রকৃত ইবাদত পাবার যোগ্য। আর প্রকৃত ইবাদত হল মাবুদের জন্য তার প্রেম, ভালবাসায় ও মহত্বের বিনয়ী হওয়া।
আর দ্রুত তওবা করা আবশ্যক। বিলম্ব করা কোনক্রমেই বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূল ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ তওবা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল নির্দেশই দ্রুত দ্রুততার সাথে সাথে পালন করা উচিত। কেননা বান্দাহ জানেনা যে, বিলম্বে কোন কাজ করলে তা কি অর্জন করা যাবে কিনা? কেননা হঠাৎ তার মৃত্যু এসে পড়তে পারে। অতঃপর সে তওবা করার সুযোগ পাবে না। আর অন্যায় কাজ বারবার করার মাধ্যমে অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং আল্লাহর হুকুম পালনে দূরত্বে অবস্থান করে। আর তার ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। কেননা ঈমান আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং অন্যায় করার মাধ্যমে ঈমান কমে যায়। কেননা বারবার অপরাধ করার দ্বারা অপরাধ করার প্রতি মানসিকতা তৈরী হয়। আর যখন কোন আÍা কোন বস্তুর প্রতি সীমালংঘন করে ফেলে তখন তার থেকে পৃথক হওয়া কঠিন হয়ে যায়। এবং তখন তার উপর শয়তান বিজয়ী হয়ে বসে। আর অন্যান্য বড়বড় অপরাধ করার প্রতি অনুপ্রেরণা যোগায়। এ জন্যইতো ওলামায়ে কেরাম বলে থাকেন যে, নিশ্চয় সকল ধরনের অপরাধ কুফুরী বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষ ধাপে ধাপে একটি অপরাধ থেকে আরেকটি অপরাধে লিপ্ত হয়ে যায়। এমনকি সে দ্বীন থেকে দূরে সরে চলে যায়।

তওবা কবুল হওয়ার শর্ত পাঁচটি


এক. তওবা একনিষ্ঠতার সাথে হওয়া চাই এবং আল্লাহর প্রতি ভালবাসা ও তার মহত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং ঁতার কাছে কল্যাণের আশা করা এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পাওয়া। এ তওবা দ্বারা পার্থিব কোন বস্তু কামনা অথবা কোন সৃষ্টজীবের কাছে কিছু প্রার্থনা না করা চাই। আর যদি কেউ এমনটি করে তাহলে তার তওবা কবুল হবে না। কেননা সে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তওবা করেছে। সে আল্লাহর কাছে তওবা করেনি এবং সে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে তওবা করেছে।
দুই. তার পূর্বকৃত গুণাহর জন্য লজ্জিত ও হীন হওয়া চাই এবং সে এই আশা করবে যে তার এই তওবা কবুল না হলে সে কিছুই অর্জন করতে পারবে না। আর তার এই তওবা হবে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়া এবং তার কৃত অপরাধের শাস্তির ভয় স্মরণ করা। তাহলে তার তওবা হবে একান্ত বিশ্বাসের সাথে এবং চাক্ষুষের সাথে।
তিন. অতি তাড়াতাড়ি গুণাহের কাজ থেকে দূরে সরে যাওয়া। কেননা নিষিদ্ধ কাজ দ্বারা যদি অপরাধ হয়ে যায় তাহলে সে উহার মধ্যে ধাবিত হবে। আর তার অপরাধ যদি কোন আবশ্যকীয় কাজ বর্জনের মাধ্যমে হয় তাহলে তা অবশ্যই সাথে সাথে করে নিবে। যতটুকু সম্ভব সাথে সাথে পূরণ করে নিবে। যেমন যাকাত ও হজ্ব।
আর কোন ব্যক্তি বারবার কোন অপরাধ করার দ্বারা তওবা করায় কোন লাভ নেই। ধরা যাক, কেউ সুদ খাওয়া থেকে তওবা করল অথচ সে সুদের কাজে কর্মে সর্বদা ব্যস্ত থাকে তাহলে তার এই ধরনের তওবা করার দ্বারা কোন লাভ হবে না। বরং তার তওবা হবে হাসি-ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করার ন্যায়। বরং এর দ্বারা সে আল্লাহ তার আয়াতসমূহের সাথে অবজ্ঞা আচরণ করল। এর দ্বারা তাকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আবার যদি কেউ তওবা করে যে, জামাতের সাথে নামায পড়া আর কখনো ত্যাগ করবে না, অথচ সর্বদা সে জামাতে নামায ত্যাগ করে চলে, তাহলে তার এই তওবা করার দ্বারা কোন লাভ হবে না।
আর যখন সৃষ্টজীবের অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যাপারে অপরাধ করে বসে তখন সৃষ্টজীবের অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার তওবা সঠিক হবে না। আর যখন কোন ব্যক্তি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে হস্তগত করে অথবা কারো সম্পদ নিয়ে আবার অস্বীকার করে তাহলে উক্ত ব্যক্তির সম্পদ ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তওবা সঠিক হবে না। আর যদি ইতিমধ্যে উক্ত সম্পদের মালিক আরো পায় তাহলে তার উত্তরাধিকারীদের কাছে ফিরিয়ে দিবে। আর যদি তার কোন উত্তরাধিকারী জীবিত না থাকে তাহলে বাইতুল মালে আদায় করে দিবে। আর যদি এমন হয় যে, কোন ব্যক্তি এই হস্তগত সম্পদের মালিক তাহলে উক্ত সম্পদশীল ব্যক্তির নামে সাদকাহ করে দিবে।
আর যদি কোন মুসলিমকে গীবত করার দ্বারা অপরাধ ঘটে যায় তাহলে উক্ত গীবত থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক হয়ে যায়। আর কোন অপরাধ বারবার করার পরও তওবা করা সঠিক হবে। কেননা আমল কোন কোন সময় কম হয়ে থাকে। আর ঈমান (তাওবা) বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
চার. এ ধরনের সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয় যে, এই ধরনের অপরাধ ভবিষ্যতে আর কখনো করবে না। কেননা ইহা তাওবার ফল এবং তওবাকারীর জন্য একটা সত্যতার দলিল। যদি কেউ বলে যে, নিশ্চয় সে তওবা করছে এবং সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কখনো করবে না অথবা তওবা করেছে এই নিয়তে যে সে বারবার এই কাজ করবে আবার তওবা করবে তাহলে তার তওবা কবূলযোগ্য হবে না। কেননা তাহলে তার এই তওবা হবে সাময়িক যা দ্বারা তার কোন প্রকার দ্বীন ও দুনিয়ার উপকার আসবে না।
পাঁচ. তওবা কবূলের সময় শেষ হবার পর আর কখনো গুণাহর কাজ করবে না। কেননা যদি তওবা কবূলের সময় শেষ হবার পর আবারও উক্ত গুণাহ করে তবে তার তওবা কবূল করা হবে না। আর তওবা কবূলের সময় শেষ হওয়া দু-ধরনের। একটি হলো ব্যাপকভাবে প্রত্যেকের জন্য। আর দ্বিতীয়টি হল প্রত্যেকটি ব্যক্তির নিজস্বতার জন্য।
সাধারণভাবেঃ আর উহা হল পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় হওয়া। আর পশ্চিম দিকে সূর্য যখন উদিত হবে তখন আর তওবাহ করার দ্বারা কোন উপকার হবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন যে,
অর্থাৎ, তখন আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটি অন্তকরণে মোহর মেরে দিবেন এবং মানুষের আমল করার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।
নবী করমি ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ আরো বলেন যে,
যে ব্যক্তি সূর্য পশ্চিম দিক উদয় হবার পূর্ব সময় পর্যন্ত তওবা করবে তার তওবা আল্লাহ কবুল করবেন। (মুসলিম)
বিশেষভাবেঃ প্রত্যেকটি ব্যক্তির মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে। কেননা মৃত্যুর সময় হাযির হয়ে গেলে তার আর তওবা কবুলের সময় থাকে না। ফলে তওবা করলেও কোন লাভ হবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন যে,

অর্থাৎ আর তাদের তওবা কোন কাজে আসবে না যারা খারাপ আমল করে যতক্ষণ না তাদের নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয়। আর মৃত্যু কালিন সময়ে বলে যে, আমি এখন তওবা করলাম।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বান্দাহর তওবা কবুল করে থাকেন যতক্ষণ না তার রুহ অবশিষ্ট থাকে। (তিরমিযী)
আর যখনই সব শর্তানুযায়ী তওবা করা হয় তখন তওবা কবূল করা হয় এবং আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা বড় ধরনের অপরাধও ক্ষমা করে দিবেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থাৎ হে রাসূল আপনি বলে দিন যে, হে আমার বান্দাহরা যারা নিজেদের আত্মার উপর অত্যাচার করেছ তোমরা কখনোই আল্লাহর রহমত হতে হতাশ হয়ে যেওনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুণাহকে ক্ষমা করে দিবেন। কেননা তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
এই আয়াতটি আল্লাহর দিকে সাড়াদানকারী ও তওবাকারী ব্যক্তিদেরকে মুসলিম বলে প্রমাণ করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন খারাপ আমল করে অথবা নিজের প্রতি অত্যাচার করে এরপর ক্ষমা প্রার্থনা করে না। এর পরেও সে আল্লাহকে অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে।
অতএব, তোমরা অতি দ্রুত তওবা কর। আল্লাহতাআলা তোমাদের উপর অনুগ্রহ করবেন এবং তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্ব পর্যন্ত তোমাদের প্রতি কবুলযোগ্য তওবার মাধ্যমে তোমাদেরকে অনুগ্রহ করবেন। এ ছাড়া তোমরা গুনাহ মুক্ত হতে পারবে না।
হে আল্লাহ কবূলযোগ্য তওবা করার জন্য আমাদেরকে তাওফীক দাও। এমন তওবা যা দ্বারা আমাদের পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। আমাদের জন্য সব কাজকর্ম সহজ করে দাও। এবং কাজ কর্মে কাঠিন্যতা দূর কর। হে আল্লাহ আমাদেরকে, আমাদের মাতাপিতাদেরকে এবং সব মুমিনকে ইহকালে ও পরকালে ক্ষমা করে দাও।

কোন মন্তব্য নেই: