শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

কল্কি অবতার কে ? মহানবী (সাঃ) ?

কল্কি অবতার কে ? মহানবী (সাঃ) ?

হিন্দু ধর্মে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে । এ দশ আবতারের সর্বশেষ অবতার হচ্ছে 'কল্কি অবতার' । তেমনিভাবে ইসলামী বর্ণনায় হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী-রাসূল হলেন ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) । কল্কি অবতারের পর আর কোন অবতার হবে কি-না এর কোন ইঙ্গিত হিন্দু মিথলজীতে আছে বলে আমাদের জানা নাই । তেমনিভাবে ইসলামী শাস্ত্রগ্রন্হে বহুল প্রমাণিত যে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একমাত্র 'খাতামুন নাবীঈন' বা শেষ নবী । তার পরে আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আগমণ করবেন না । অর্থাৎ আল্লাহ পাক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত রিসালতের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন । পবিত্র কোরআন মজীদ সুষ্পষ্ট ঘোষণা করেছেঃ

" বরং তিনি [মোহাম্মদ (সাঃ)] আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী" [৩৩/৪০]

ফলে 'কল্কি' অবতারই যে, আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তা নির্দ্বিধায় বলা যায় । কেননা, পন্ডিতগণ প্রমাণ করেছেনঃ 'কল্ক' অর্থ 'পাপ' আর 'কল্কি' অর্থ পাপ বিনাশকারী । কলিযুগের শেষে পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হবে তখন কল্কি বা পাপ বিনাশকারী অবতার আগমণ করবেন ।

কলিযুগে কল্কির অবতার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রাবন্ধিক প্রিন্সিপাল মাজেদুর রহমান । তিনি তার 'নবী-রাসূল-অবতার-সন্দেষ্টা-প্রফেট-তীর্থকর' প্রবন্ধে আলোচনা, যুক্তি, পুরাণ এবং বৈদিক শ্লোকাদির উদ্ধৃতিসহকারে প্রমাণ করেছেন যে, কল্কি অবতার-ই শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) । বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্হে কল্কি অবতারের যে গুণ এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তাতে কোথাও রূপকার্থে এবং কোথাও সরাসরিভাবে চিহ্নিত করা যায় বিধায় 'কল্কি' অবতারই যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ কথা নিম্নোক্তভাবে প্রমাণিত । যথাঃ

১. "শম্ভলে বিষ্ঞুযশামে গৃহে প্রার্দুভাবাম্যহম সুমাতাং বিষ্ঞু যশম্য গর্ভ মাধব বৈষ্ঞবম " । (কল্কি পুরাণ; ২/১৯ অংশ শ্লোক)

অর্থাৎ - শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিত গৃহে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম হবে বিষ্ঞুযশম এবং মাতার নাম হবে সুমতী (সোমবর্তী) ।

২. "দ্বাদশ্যাং শুল্লপক্ষস্য মাধবে মনি মাধবম " । ( কল্কি পুরাণ; ২/২৫)

অর্থাৎ- তিনি শুল্কপক্ষের দ্বাদশ তিথিঃ মাধব মাসে (বৈশাখ মাসে) জন্মগ্রহণ করবেন ।

৩. অশ্বমাশুগমারূহ্য দেবদত্তঃ জগৎপতিঃ ।
আমিনা সাধু দমন অইষ্টশ্বর্য গুণান্বিত" (শ্রীমদ্ভাবগত; ১২/২-১৯ শ্লোক)

অর্থাৎ- "অষ্ট ঐশ্বর্য ও গুণে গুণান্বিত জগৎপতি দেবতা কর্তৃক প্রদ্ত্ত বেগবান অশ্ব পৃষ্ঠে আরোহণ করবেন । তিনি অসি বা তরবারী দ্বারা দুষ্কৃতদের দমন করবেন "

৪. "বিচারন্নাশূণ্য ক্ষৌণাৎ হষেণা প্রতিমদ্যুতি নুপলিঙ্গচ্ছেদ্য দস্যূ ন কোটি শোনিহ নিয্য " । (শ্রীমদ্ভাবগত; ১২/২-২০ শ্লোক)

অর্থাৎ- তিনি দ্রুত গমনশীল অশ্বে বিচরণকারী অপ্রতিম কান্তিময়ঃ তার গুপ্তাঙ্গের অগ্রভাগ ছেদিত । রাজা বেশে অসংখ্য গুপ্ত দূস্যকে সংহার করবেন ।

৫. "সাত যয়ং তুবং দেবা সাঃ শাবত রণে রাতাঃ " ( কল্কি পুরাণ; ২/৭)

অর্থাৎ- যুদ্ধক্ষেত্রে দেবতারা তাকে সাহায্য করবেন ।

৬. নরাশংস মিহপ্রিয় মশ্মিনা উপবায় মধুজিহবৎ হবিষ্কতম " । (ঋগ্বেদ;১০ মন্ডল;১৩ যু্ক্ত; ৩ সং)

অর্থাৎ- "নরাশংসের বাক্যালাপ সুমিষ্টযুক্ত " ।

--উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর প্রতি সূক্ষ আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোকপাত করলে সহজেই বোধগম্য হয় যে মূলত কল্কিপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্হে কল্কি অবতার তথা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) -এর আগমণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ।
এসব ভাববাণীসমূহে তার - (ক) জন্মস্হান, বংশ, গোত্র, (খ) পিতা-মাতা, (গ) জন্ম তিথি, (ঘ) বাহনযোগ্য পরিভ্রমণ অথবা বিচরণ (ঙ) গুপ্তাঙ্গের ত্বকচ্ছেদ, (চ) সুমিষ্ট বাক্যালাপ, (ছ) যুদ্ধক্ষেত্রের স্বর্গদূত বা ফেরেশ্তা কর্তৃক সাহায্য প্রাপ্তি, (জ) তার মনোহর রূপ এবং রাজ বেশ ধারণ, (ঝ) এমনকি তার বহু বিবাহ, চার সহচর প্রভৃতি বিষয়ে নিখূঁত বর্ণনা এবং ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে । সুতরাং এ আলোচনাই ক্রমানুসারে করা হল ।

১. কল্কি পুরাণের ২-১৯ শ্লোকে বলা হয়েছে কল্কি শম্ভল শহরস্ত প্রধান পুরোহিত গৃহে জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম 'বিষ্ঞুযশস' এবং মাতার নাম 'সুমতি' ।

পৌরণিক বা হিন্দু শাস্ত্র মতে পৃথিবীকে সাতটি দ্বীপে বিভক্ত করা হয়েছে । এর মধ্যে একটি দ্বীপ হল 'শম্ভল দ্বীপ' । শম্ভল দ্বীপ অংশে পড়ে আরব এবং এশিয়া মাইনর । তাহলে দেখা যাচ্ছে কল্কি অবতার হবেন আরব দেশে । ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন আরব দেশে । উক্ত শ্লোকে আরও বলা হয়েছে , কল্কির পিতার নাম 'বিষ্ঞুযশস' যার অর্থ পন্ডিতগণ করেছেন- 'ঈশ্বরের ধাম' যা আরবী পরিভাষায় হবে 'আবদুল্লাহ' আর মাতার নাম 'সুমতি' , যার অর্থ 'তৃপ্ত অন্তর' যা আরবী পরিভাষায় 'আমিনা' ।

মহানবী (সাঃ) দাদা আব্দুল মুত্তালিব কাবা'র প্রধান পুরোহতি বা সেবক ছিলেন ।

তাহলে প্রমাণিত হয় শম্ভল অর্থাৎ আরবের নবী নিঃসন্দেহে কল্কি অবতার ।

২. কল্কি পুরাণের ২/২৫ শ্লোকে কল্কি অবতারের জন্মমাস 'মাধব বা বৈশাখ মাস' । জন্ম তিথি শুল্ক পক্ষে দ্বাদশ তারিখে বলে উল্লেখ করা হয়েছে । প্রিন্সিপাল মাজেদুর রহমান উল্লেখ করেছেন, 'বিক্রমী ক্যালেন্ডার' মতে বৈশাখ কে বসন্তের মাস বলা হয় । বসন্তের আরবী রূপান্তর রবি । তাহলে দেখা যাচ্ছে , কল্কির জন্ম বৈশাখ মাসের শুল্কপক্ষের ১২ তারিখ হিসেবে চন্দ্রমাসের রবিউল আওয়ালের ১২ তারিখ । এ ক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়, কল্কি অবতার-ই মোহাম্মদ (সাঃ) ।


দাক্ষিণাত্যের হিন্দুদের সর্ববরেণ্য গুরু রুদ্রমুনি স্বামী এবং শ্রোগানমূর্তিও তার গ্রন্হে সুষ্পষ্টভাবে লিখেছেন- 'দশম অবতার জগৎগুরু আর্বিভাব হয়ে গেছে ।' (শরণলীলা অমৃত, রুদ্রমণির বচন) ।

# ৩. শ্রীমদ্ভাগবতের ১২/২-১৯ এবং ২০ শ্লোকে উল্লেখ , কল্কি অবতার অষ্টগুণ সমর্থিত । । এ গুণগুলো হচ্ছে যথাক্রমে-

...(১). প্রজ্ঞা , (২.) কুলীনতা, (৩.) ইন্দ্রিয় দমন, (৪). শ্রুতি জ্ঞান, (৫). পরাক্রম,(৬). বাগ্মিতা, (৭.) দান, (৮.) কৃতজ্ঞতা । এ সমস্ত গুণ সম্পর্কে মহাভারতে উল্লেখ আছেঃ

"অষ্টেগুণাং পুরুষাং দীপযন্তি প্রজ্ঞা চ কৌলাং চ দমঃ শ্রুতং চ পরাক্রম চ বহুভাষিতা দানং যথাশক্তি কৃতজ্ঞাত চ" । [মহাভারত]

উপরোক্ত সকল গুণই যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল, তা সুষ্পষ্ট ।

----*১. প্রজ্ঞাঃ অষ্ট গুণের প্রথম গুণ হচ্ছে প্রজ্ঞা । প্রজ্ঞা হল সমস্ত জ্ঞানের নির্যাস বা সারাংশ । যা মহাগ্রন্হ আল-কোরআনের ভাষায় 'হিকমত' । মহানবী (সাঃ) হিকমাতের আধাররূপে পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ এবং হযরত ঈসমাইল (আঃ) এর দোয়ার ফসল । (কোরআন; ২/১২৯) পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নবীজীর পূর্বপুরুষদ্বয় আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করেছিলেন তাতেও 'হিকমত' শব্দটি বিশেষভাবে সন্নিবেশিত আছে । স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেনঃ

ক.
'যেমন আমি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদেরই কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করে তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেয় । [২/১৫১]

খ.
'তিনিই (আল্লাহ) নিরক্ষরদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকে যে তাদের কাছে আবৃত্তি করে তার (আল্লাহর) আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব এবং হিকমত । ইতিপূর্বে এরাইতো ঘোর বিভ্রান্তিতে ছিল । [৬২/২]

...সুতরাং ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন হিন্দু মিথলজীর অবতাররূপী জ্ঞান (ইলম) ও প্রজ্ঞার (হিকমত) মূর্ত প্রতীক ।

-----*২. কুলীনতাঃ কল্কির দ্বিতীয় গুণ 'কৌলাং অর্থাৎ 'কুলীনতা' বা বংশগত মর্যাদা । কল্কি পুরাণ বা ভবিষ্যপুরাণের মতে কল্কি জন্মগ্রহণ করেন শম্ভল দ্বীপে । আরব দেশের প্রধান পুরোহিতের ঘরে । ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরব দেশের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে এবং পৃথিবীর একমাত্র প্রথম ঘর ও প্রাচীন (ধর্ম মন্দির ) খানায়ে কাবার সেবাকারী বা মুতায়াল্লী আব্দুল মুত্তালিবের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । ফলে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বংশের দিক থেকেও অতি উচ্চ মর্যাদাশীল বা কুলীন ছিলেন ।

-----*৩. ইন্দ্রিয় দমনঃ কল্কি অবতারের তৃতীয় গুণ হচ্ছে 'দম' অর্থাৎ ইন্দ্রীয় দমন । জীব দেহীদের ইন্দ্রীয় মো্ট একাদশ । এ একাদশ ইন্দ্রীয়ের প্রধান হল মন । মন-ই অপরাপর ইন্দ্রীয়গুলোকে পরিচালিত করে থাকে । যা হোক, আঁ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ইন্দ্রিয় আসক্ত ছিলেন না । তিনি ছিলেন ইন্দ্রিয় দমন কারী একজন মহামানব ।

তিনি এমন একজন বিশ্বস্ত ও আমানতদার যে, তার পরম শত্রু তার কাছে কোন কিছূ গচ্ছিত রেখে ঠিক মতো তা ফেরত পেয়েছে । ধৈর্য, সহিষ্ঞুতা ও আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস তার চরিত্রের অন্যতম ভূষণ । শত্রুদের প্রতি মহানবী (সাঃ) এর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত উদার । তায়েফের ময়দানে যারা তার পবিত্র দেহকে ক্ষতবিক্ষত করে তখন তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে যে প্রার্থনা করেছিলেন তার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ।


-----*৪. শ্রুতি জ্ঞানঃ কল্কি অবতারের চতুর্থ গুণ হচ্ছে 'শ্রতং' । অর্থাৎ তিনি শ্রুতির মাধ্যমে বর্ণনা করেন । এ গুণের ব্যাখ্যা হল- তিনি আল্লাহর বাণী তার কাছে কোন মাধ্যমে পৌছলে তিনি তা শ্রবণ করেছেন এরপর অবিকল তা বর্ণনা করেছেন । আল্লাহর দূত হযরত জীবরাঈল (আঃ) আল্লাহর তরফ থেকে পবিত্র কুরআনের সমস্ত আয়াতগুলো ওহীরূপে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) শ্রুত করিয়েছিলেন এবং নবী করীম (সাঃ) তার সাহাবাগণকে তা আবৃত্তি করে শোনাতেন । কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ

' এবং তিনি [মুহাম্মদ (সাঃ] মগড়া কথাও বলেন না, এতো ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়" । [৫৩/৩-৪]

-----*৫.পরাক্রমঃ কল্কি অবতারের পন্চম গুণ হচ্ছে 'পরাক্রম' । এ কথা ইতিহাস খ্যাত যে, নবী করীম (সাঃ) ছিলেন বীর কেশরী এবং অমিততেজী । আরবের এক বিখ্যাত কুস্তীগীরকে তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন । জীবনে অনেক যুদ্ধে তিনি নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন । তিনি ছিলেন যেমন আল্লাহর নবী, তেমনিভাবে সমগ্র মানব জাতির ধর্মীয় গুরু, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মহান নেতা এবং বিশৃংখল আরব বাসীদের জন্য এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ।

-----*৬.বাগ্মিতাঃ মহানবী (সাঃ) একজন বাগ্মী পুরুষ ছিলেন । নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি অহরহই ইসলামের দাওয়াতী কার্যে নিয়োজিত ছিলেন । এ জন্য তিনি যথেষ্ঠ নির্যাতন - অত্যাচার সহ্য করেছেন । যেখানে লোকজন জমায়েত দেখতেন, সেখানে-ই তিনি বক্তৃতা আরম্ভ করতেন । তাছাড়া তিনি সাফা পাহাড়ের শিখরে উঠে মানুষদের আহ্বান করতেন । বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ আজও ইতিহাস এ রয়ে গেছে । ফলতঃ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর বাগ্মিতায় এত বেশি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল যে, পৃথিবীর অন্য কোন নবী বা ধর্ম প্রবর্তকের পক্ষে তা আদৌ সম্ভব হয় নি ।

-----*৭.দানঃ কল্কি অবতারের সপ্তম গুণ হল 'যথা শক্তি দানং' । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানকারী । তার যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়েছিলেন ।
রাসূলে করীম (সাঃ) এর দান খয়রাতের ঘটনা এত বেশি যে, এগুলো পূর্ণরূপে বর্ণনা করার সাধ্য কারও নেই । তার দানশীলতার জন্য কিছু মওজুদ থাকাও জরুরী ছিল না । অভাবগ্রস্তদের জন্য কর্জ করে ব্যয় করা তার সাধারণ নিয়ম ছিল । জনৈক ব্যক্তি হযরত বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, নবী করিম (সাঃ) এর ব্যয় নির্বাহের কি উপায় ছিল ? বেলাল (রাঃ) বললেন, তার কাছে তো কিছুই থাকতো না । এ ব্যাপারে শেষ অবধি আমি-ই ব্যবস্হাপক ছিলাম । তার অভ্যাস ছিল তিনি যখন কেউ মুসলমান হয়ে খেদমতে হাজির হত এবং তিনি তাকে বস্ত্রহীন দেখতেন, তখন আমাকে এর ব্যবস্হা করতে আদেশ দিতেন । আমি কারও কাছ থেকে কর্জ করে তার বস্ত্র তৈরী করতাম এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হা করতাম ।


-----*৮.কৃতজ্ঞতাঃ কল্কি অবতারের অষ্টম গুন হচ্ছে কৃতজ্ঞতা ।

মহানবী (সাঃ) ছিলেন সকল গুণের আধার এবং কৃতজ্ঞতাজাপনকারী মহামানব । এ সম্মন্ধে একটা ঘটনা একবার তিনি মা আয়েশা (রাঃ) এর সাথে থাকাকালীন উনি দেখেন যে, মহানবী (সাঃ) রাত জেগে নামাজ পড়ছেন , দীর্ঘসময় দাড়িয়ে থাকার দরূণ উনার পা মোবারক ফুলে গেছে । আর দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত করছেন , তখন চোখের পানিতে উনার দাড়ি মোবারক ভিজে যাচ্ছে । নামাজ শেষে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! মহান আল্লাহপাক আপনার পূর্বের এবং পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন , তারপরও আপনি কেন এত পরিশ্রম করছেন ? তিনি তখন উত্তর দেন- আমি আল্লাহর একজন শোকরগোজার (কৃতজ্ঞ) বান্দা হব না ?

ফলতঃ এ আলোচনায় প্রমাণিত হয় কলিযুগের শেষ অবতার , (খাতামুন নাবীঈন) হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।
সর্বশেষ প্রত্যাশিত অবতার শেষ নবী (সাঃ) আর্বিভূত হয়েছেন । তিনি-ই পুরাণ শাস্ত্রে উল্লেখিত কল্কি অবতার । কবীর বলেছেন-

'তাকে খোজ কর তবেই মুক্তি মিলবে নতুবা পথভোলা পথিকের মত ঘুরপাক খেতে থাকবে, আর এ ধরনের বেচে থাকা ছেড়ে দাও ।' (শ্রী-সান্ত গাঁথা)


#..৪. শ্রীমদ্ভাগবতের ১২/২; ১৯ এবং ২০ নং শ্লোকের অর্থ হলোঃ-
কল্কি অতি দ্রুত গমনশীল অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণপূর্বক বিচরণকারী । তার দৈহিক গঠন অত্যন্ত কান্তিময় এবং তিনি অসি বা তরবারী ধারণপূর্বক দুষ্টের দমন করবেন ।

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কাবার চত্বর থেকে রাত্রিযোগে আল্লাহপাকের দিদার উদ্দেশ্যে 'বোরাক' নামীয় অতি দ্রুতশীল অশ্ব বাহনে সপ্তাকাশ পরিভ্রমণ করেন । পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন-
"পবিত্র ও মহীমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে (মুহাম্মদ সাঃ) রাত্রিযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন । আল-মসজিদুল হারাম (কাবা) থেকে আল-মসজিদুল আকসা (বাইতুল মোকাদ্দাস) পর্যন্ত । যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্য । তিনি-ই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা " [১৭/১]

ফলে ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মিরাজের রাত্রে স্বর্গীয় বাহন 'বোরাকে' আরোহণ পূর্বক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সপ্তাকাশ পরিভ্রমণ করেছিলেন, এ কথা সর্বজন বিদিত । 'বোরাক' আরবী শব্দ । এর মূল ধাতু 'বারকুন' শব্দের অর্থ 'তড়িৎ' বা বিদ্যুৎ । বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, বিদ্যুৎ বা আলোকের গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ছিয়াশি হাজার মাইল । ফলে সম্পূর্ণ বিদ্যুতের তৈরী বা সৃষ্ট বোরক কত দ্রুতগামী অশ্ব ছিল, তা সহজেই বোধগম্য ।

উপরোল্লিখিত শ্লোকে কল্কি অবতার তরবারী ধারণ পূর্বক দুষ্টদের দমন করবেন । একথাও বর্ণিত আছে । মহানবী (সাঃ) অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধে নিজে স্বয়ং অংশগ্রহণ করেছেন । তিনি তরবারী , তীর ধনুক দ্বারা যুদ্ধ করেছেন ।

এছাড়াও তার দৈহিক গঠন অত্যন্ত কান্তিময় । শামায়েল-তিরমিযীর বর্ণনায় আমরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্দর যে ছুরতে যে বর্ণনা পাই তা হল- অতীব লাবণ্যময়, নূরানী, পূর্ণিমার চাদের মত শুভ্র দুধে ও আলতা মিশ্রণে যে রং হয় প্রিয়নবী (সাঃ) রং ছিল তেমনি । হযরত আলী (রাঃ) মহানবী (সাঃ) এর আকৃতি সম্পর্কে বলেন যে, খুব লম্বাও নয়, খুব বেটেও নয়, মধ্যম আকৃতির ছিলেন তিনি । তার আগে বা পরে কখনো তার মত সুপুরুষ দুনিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন নি । উনার মাথার চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত । কখনো কখনো কোঁকড়ানো ঢেউ খেলানো বাবরী চুল ঘাড় পর্যন্ত থাকতো । মাথা মোবারক আকারে বড় ছিল । তার ললাট ছিল প্রশস্ত । চক্ষুযুগলের মণি খুব কালো ছিল । তার উচ্চ নাসিকা অতীব সুন্দর দেখাতো । উনার দাতগুলো ছিল অতীব সুন্দর রজত-শুভ্র যা ছিল সামান্য ফাঁক এবং হাসির সময় মুক্তার মত চমকাত । দীর্ঘ মনোরম সুঠাম কাধের হাড় অল্প পরিমাণ ছিল । স্কন্ধদ্বয়ের মাঝে ডিম সাদৃশ মোহরে নবুয়ত নামে একটা উচ্চ মাংস ছিল, যেখানে কালিমা তায়্যিবাহ (লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছূলুল্লাহ) খচিত ছিল । মোহরের উপর তিল ও পশম ছিল এবং ঈষৎ লাল ছিল । তার লম্বা ঘন দাড়ি প্রায় বুক পর্যন্ত প্রসারিত ছিল । নবীজীর বক্ষ ছিল বীর বাহাদুরের মত প্রশস্ত ও কিছুটা উচু । বক্ষস্হল হতে নাভি পর্যন্ত চুলের সরু রেখা ছিল । এছাড়া সর্বশরীর পশমে ভরা ছিল । মহানবীর শরীরের চামড়া রেশম থেকেও অধিক মসৃণ ও নরম ছিল । শরীরের ঘামের কণাগুলো মোতির মত থাকত যা ছিল অত্যন্ত সুগন্ধিযুক্ত । মহানবীর শরীর অত্যন্ত স্হূল ও ছিলোনা আবার অতিরিক্ত ক্ষীণও ছিল না । তার পবিত্র দেহে নবুয়তের যাবতীয় লক্ষণ-ই বিদ্যমান ছিল ।

তাছাড়াও উক্ত শ্লোকে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষৌণাং অর্থাৎ খতনাকৃত বা লিঙ্গাগ্র ত্বকচ্ছেদ বিশিষ্ট অবস্হায় থাকবেন । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) খাতনাকৃত অবস্হায় জন্মগ্রহণ করেন । তার ফুফু হযরত সুফিয়া (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, "তিনি ভূমিষ্ঠ সময় খাতনাকৃত অবস্হায় ছিলেন ।"
খোদ মহানবী ইরশাদ করেছেন যে, "আমার পরওয়ার দিগার আমাকে এক বিশেষ সম্মান এ দিয়েছেন যে, আমি খতনাকৃত অবস্হায় ভূমিষ্ঠ হয়েছি । "

অতএব, এসব লক্ষণগুলির মিল থেকে-ও এটা প্রমাণ হয় যে মোহাম্মদ (সাঃ) -ই কল্কি অবতার বা প্রতিশ্রুত শেষ নবী ।


স্বামী জগদিশ্চরানন্দ মহাশয় তাহার কল্কী নামক গ্রন্হে উল্লেখ করিয়াছেন যে, ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দশ অবতারের মূর্তি চিত্রিত বা ক্ষুদিত আছে । তন্মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার নিকটবর্তী আন্নাভরম পাহাড় চূড়ায় বহু প্রাচীন এক বিষ্ঞু মন্দির আছে । উহার দেয়ালে দশ অবতারের মূর্তিসমূহ সুষ্পষ্ট ভাবে ক্ষুদিত আছে । সেখানে কল্কীকে বীর বেশে একটি সাদা ঘোড়ার উপর আরোহিত অবস্হায় দেখান হইয়াছে ।
এখানে একটি বিষয় সবিশেষ প্রনিধান যোগ্য যে, সাদা ঘোড়া পৃথিবীতে খুবই দুষ্প্রাপ্য । ভারতের কোথাও উহা পাওয়া যায় না । ইহা দ্বারা সুষ্পষ্ট নির্দ্দেশিত হয় যে, কল্কী অবতার ভারতবাসী হইবেন না । একমাত্র আরব দেশের শ্বেত অশ্বই পৃথিবী বিখ্যাত ।
প্রণিধানযোগ্য যে, ইন্তিকালের সময় হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সম্বলের মধ্যে ছিল একটি শ্বেত অশ্ব, কিছূ যুদ্ধাস্ব্র এবং এক খন্ড জমি । এই জমিটুকুও ইন্তিকালের পূর্বে দান করিয়া দেওয়া হইয়াছিল । (সংক্ষিপ্ত বিশ্বকোষ, ২য় খন্ড, ৩৩০ পৃঃ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) অধ্যায় )

সুত্রঃ ইন্টারনেট

কোন মন্তব্য নেই: