রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

সবর বা ধৈর্যধারণ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত ও হাদীসের নির্দেশনা

সবর বা ধৈর্যধারণ সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত ও হাদীসের নির্দেশনা

সবর কী? 
সবরের আভিধানিক অর্থ বাধা দেয়া বা বিরত রাখা।
শরীয়তের ভাষায় সবর বলা হয়, অন্তরকে অস্থির হওয়া থেকে, জিহ্বাকে অভিযোগ করা থেকে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গাল চাপড়ানো ও বুকের কাপড় ছেড়া থেকে বিরত রাখা।
কারো কারো মতে, এটি হলো মানুষের ভেতরগত একটি উত্তম স্বভাব, যার মাধ্যমে সে অসুন্দর ও অনুত্তম কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি মানুষের এক আত্মিক শক্তি যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ্য ও সুরক্ষিত রাখতে পারে।
জুনায়েদ বাগদাদী রহ. কে সবর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'হাসি মুখে তিক্ততার ঢোক গেলা।'
জুন্নুন মিসরী রহ. বলেন, 'আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে থাকা, বিপদের সময় শান্ত থাকা এবং জীবনের কুরুক্ষেত্রে দারিদ্রের কষাঘাত সত্ত্বেও অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা।'
কারও মতে, 'সবর হলো সুন্দরভাবে বিপদ মোকাবিলা করা।'
আবার কারও মতে, 'বিপদকালে অভিযোগ-অনুযোগ না করে অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করাই সবর।'
এক বুযুর্গ এক ব্যক্তিকে অন্যের কাছে তার সমস্যা নিয়ে অনুযোগ করতে শুনলেন। তিনি বললেন, 'তুমি ভাই, স্রেফ যে দয়া করে না তার কাছে দয়াকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছো। এর বেশি কিছু করোনি।'
এ সম্পর্কে আরও বলা হয়, 'তুমি যখন মানুষের কাছে অভিযোগ করো, তখন মূলত সদয়ের বিরুদ্ধে নির্দয়ের কাছেই অভিযোগ করো।'
অভিযোগ করাটা দুই ধরনের। একটি হলো, আল্লাহ তা'আলার কাছে অনুযোগ করা। এটি সবর পরিপন্থী নয়। যেমন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বলেন,
قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ
'সে বলল, 'আমি আল্লাহর কাছেই আমার দুঃখ বেদনার অভিযোগ জানাচ্ছি। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।'[17]
অপরটি হলো, নিজের মুখের বা শরীরের ভাষায় মানুষের কাছে অভিযোগ করা। এটি সবরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এটি সবর পরিপন্থী।

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও মর্যাদা

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও মর্যাদা !

জীবনের স্রোতোধারার অনিবার্য সঙ্গী হলো মানবজাতি ৷ 'নর' এবং 'নারী' মানবজাতির এই জীবনধারাকে প্রবাহমান গতি দিয়েছে সেই সৃষ্টির আদি মানব আদমের যুগ থেকে ৷ বর্তমান বিশ্বের ৬১০ কোটি মানুষ যুগ-যুগান্তের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার এখন ৷ মানুষ সম্পর্কে প্রসিদ্ধ একটি বক্তব্য প্রায় সবারই জানা, তাহলো-‘মানুষ হলো বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী' ৷ সত্যিই এই বিচারবোধই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করে তুলেছে ৷ সেজন্যে মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মত জীবন যাপন না করে আল্লাহ প্রদত্ত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে একটি সুশৃঙ্খল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ৷ যুগে যুগে আল্লাহ প্রেরিত রাসূলগণই এই পরিবার গঠনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ৷ সুশৃঙ্খল এই পারিবারিক কাঠামো থেকেই মানুষ পেয়েছে সভ্যতার আলো ৷ পরিবার কাঠামোর সাথে সভ্যতা যেন নিত্যসঙ্গী ৷ যেখানে পরিবার কাঠামো নেই, সেখানে সভ্যতা বলতে যা বোঝায়, তার সাথে অন্যান্য প্রাণীকূলের জীবনযাপন পদ্ধতির খুব বেশী পার্থক্য নেই ৷ নারী এবং পুরুষ উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে পরিবার ৷ এই 'সম্মিলিত' শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে নারী-পুরুষের পারস্পরিক অবদান এবং অধিকারের সূক্ষ্ম বিষয়৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই নারী-পুরুষের অধিকার এবং পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগত মতবাদ বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছে ৷ সেসব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী একমাত্র ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদই নারীকে কখনো ভোগ্যপণ্যে কিংবা কখনো পুরুষ দেবতার সেবাদাসীতে পরিণত করেছে৷ সভ্যতার এই স্বর্ণযুগেও নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার নিয়ে এখনো চলছে বিচিত্র কৌণিক মতামত ৷     পশ্চিমা সমাজে পরিবার কাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় সেখানে বিবাহ-বহির্ভূত লিভিং টুগেদার বা নারী-পুরুষের একত্রবাস প্রথা চালু রয়েছে ৷ এছাড়া বিয়ের প্রচলন সেখানে যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার প্রশ্নে মতবিরোধের জের ধরে ডিভোর্সের মাত্রাই ব্যাপক ৷ যে সমাজে লিভ-টুগেদারের জন্যে বিয়েরই প্রয়োজন নেই, সে সমাজে ডিভোর্স বা তালাক প্রদানের মাত্রা যে কতো মামুলি ও ভয়াবহ, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায় ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে বা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের মানদন্ডে পশ্চিমা জগত আধুনিক সভ্যতার দাবীদার হলেও ক্ষয়িষ্ণু পরিবার কাঠামোর ফলে পাশ্চাত্য সভ্যতা বিশ্বব্যাপী অকল্যাণই বয়ে এনেছে ৷ তাদের ঐ কু-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাবে মুসলিম জাতির মধ্যেও তা এখন সংক্রমিত হচ্ছে ৷ এরফলে পারিবারিক বিশৃঙ্খলা ব্যাপক বেড়ে গেছে ৷ অথচ পরিবারের প্রধান যে দুটি স্তম্ভ অর্থাৎ বাবা-মা বা স্বামী-স্ত্রী-তাদের মধ্যে যদি পারস্পরিক কর্তব্যবোধ স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকতো, তাহলে এই সমস্যা হয়তো দেখাই দিত না ৷ বহু শিক্ষিত পরিবারেও যথার্থ ইসলামী শিক্ষার অভাবে এ ধরণের সমস্যা বিরাজ করছে ৷ শিক্ষিত এইসব পরিবার তাদের পারস্পরিক অধিকার সম্পর্কে চিন্তা করে থাকে পাশ্চাত্যের মানদন্ডে, যেখানে নারী-পুরুষ স্বাধীনভাবে যাপন করছে পশুর মত জীবন ৷ তাই মুসলিম দম্পতিদের উচিৎ তাদের নিজস্ব ধর্মাদর্শ সম্পর্কে সচেতন হয়ে পারস্পরিক কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত হওয়া এবং যথাযথভাবে তা মেনে চলা ৷ তাহলেই দেখা যাবে সংসার হয়ে উঠেছে শান্তির সোনালী নীড়।     একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, স্বামী-স্ত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন এবং পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ স্থাপন করেছে ৷ ইসলাম পূর্বকালে নারীকে মানুষই মনে করা হতো না ৷ গ্রীকরা তাদেরকে মনে করতো শয়তানের চর ৷ জৈবিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনেই তাদের ব্যবহার করা হতো ৷ রোমানদের অবস্থাও ছিল তাই ৷ সেখানে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করা হতো ৷ জাহেলিয়াতের যুগে আরবে কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলার ইতিহাস সর্বজনবিদিত ৷ পারস্য সভ্যতায়ও কন্যাসন্তানকে ভীষণরকম অকল্যাণকর বলে মনে করা হতো ৷ চীনের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কোন পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা দুঃখ ও সহানুভূতি জানাতো ৷ অর্থাৎ নারী ছিল একটা ভোগ্যপণ্য ৷ তাদের ব্যক্তিগত কোন মানবিক সত্ত্বাই স্বীকার হতো না ৷ আর হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা মৃত ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকেও জীবন্ত পুড়ে মারতো ৷ এরকম করুণ একটা ঘটনাকে তারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও ত্যাগের নিদর্শন বলে মনে করতো ৷ কী আশ্চর্য, বিধবাকে সম্পত্তির অধিকার না দিয়ে, দিয়েছিল চিতার আগুনে জীবন্ত পোড়াবার নির্দেশ ! এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিচিত্র উপায়ে নারীদের সত্ত্বাকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল ৷ ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের ফলে নারী পেল তার মৌলিক মানবিক অধিকার । নবী করিম (সাঃ) ঘোষণা করেন, হে মুসলমানেরা! তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তাদের উপরও তোমাদের অধিকার রয়েছে ৷" আল্লাহ রাববুল আলামীন বললেন, নারীরা তোমাদের পোষাক এবং পুরুষরাও নারীদের পোষাকস্বরূপ ৷ যুগান্তকারী এইসব ঘোষণার মাধ্যমে নারী ফিরে পেল তাদের অধিকার, ফিরে পেল মানুষ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তারাও হয়ে উঠলো সভ্যতা সৃষ্টির প্রশংসিত স্রষ্টাদের গর্বিত অংশীদার ৷ কবি নজরুলের ভাষায়-
পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় তাওবা

 আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় তাওবা

আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পছন্দ করেন। আল্লাহ তাআলা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুত পবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরি। তাই নিম্নে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ আলোচনা তুলে ধরা হল।

তাওবা কাকে বলে?

খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাকে তাওবা বলা হয়। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করেন তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং, এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ।
অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না। এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল।
মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী।
যেমন আল্লাহ বলেন:
হে ঈমাদারগণ তোমরা আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা কর নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব হবে।
[সূরা নূর -৩১]
উল্লেখিত আয়াতটি মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা শুধু ঈমানদার নয় বরং তখনকার সময়ের সবচেয়ে উত্তম মাখলুক যারা জিহাদ, সবর, হিজরতসহ যাবতীয় নেক কাজে কিয়ামত পর্যন্তের জন্য ইতিহাস হয়ে থাকবেন, তাদেরকে তাওবা করার নির্দেশ দেন এবং তারপর তিনি তাওবাকে সফলতা ও কামিয়াবী লাভের কারণ নির্ধারণ করেন। সুতরাং, কামিয়াবী বা সফলতা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর নিকট খালেস তাওবা করা। আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ও যাবতীয় গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন ঈমানদারই সফল হতে পারে না।
তাওবার ফলাফল,
ইমাম গাজালী রহ. তার কিতাব মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেন “অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার উপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর । আর তাওবা করবে তুমি দুইটি কারণে,
এক,
তাওবার কারণে আল্লাহ তোমাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং তোমার নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে। গুনাহের পরিণতি হল, গুনাহ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিবাকত্ব করে এবং লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। গুনাহতে আবদ্ধ লোককে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলা ও আল্লাহর দীনের খেদমতে অগ্রসর হতে গুনাহ বারণ করে। গুনাহের বোঝা ভারি হলে সকল প্রকার নেক আমল তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য আর কোন নেক আমল করা সহজ হয় না ইবাদত বন্দেগীতে সে আর কোন উৎসাহ পায় না। আর সব চেয়ে বিপদজনক কথা হল, যারা সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের অন্তর কালো হয়ে যায়, ফলে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। অন্তর ভাল মন্দের বিচার করতে অক্ষম হয়ে যায়, তাদের অন্তর পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন ভাল কাজ তার অন্তর কবুল করে না।
তখন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সে আর কোন মুক্তি বা নাজাতের পথ খুজে পায় না। কোন কিছুতেই তৃপ্তি অনুভব করে না। সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। নিজের জন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না এবং পায় না কোন আশ্রয় কেন্দ্র। পরিণতিতে ধাবিত হয় গভীর অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে। ধীরে ধীরে গুনাহ তাকে ঈমান হারা হওয়া এবং শিরক ও কুফরের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
আরো আশ্চযের্র বিষয় হল, যে ব্যক্তি র্দুভাগা এবং যার অন্তর পাথরের চেয়েও বেশী কঠিন, তাকে কিভাবে আল্লাহর আনুগত্যের তাওফীক দেয়া হবে ? তাকে কিভাবে আহ্বান করা হবে কল্যাণের পথে ? অথচ সে গুনাহের কাজেই অবিচল, তার মধ্যে কোন অনুভূতি নাই। সে যে একজন অপরাধী ও অন্যায়কারী এ বিষয়ে তার মধ্যে কোন চেতনা জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাকে কিভাবে কাছে আনা হবে যে নাপাকী ও র্দূগন্ধময় বস্তুর সাথে সর্বদা মাখামাখি করছে, গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে অহর্নিশ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
 মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে,তার মুখ থেকে র্দূগন্ধ বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে তার কাছ থেকে দুই জন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। তখন আর তার মুখ ও জিহবা আল্লাহর যিকিরের উপযোগী থাকে না
ফলে গুনাহে লিপ্ত থাকে এ ধরনের খুব কম লোকই আছে যারা পরর্বতীতে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে এবং আল্লাহর ইবাদতে কোন স্বাদ আস্বাদন করে। যদি সে কোন দান-সদকা করে তা অনেক কষ্টে, এতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না, আত্মার কোন তৃপ্তি হয় না এগুলো সবই হল গুনাহের পরিণতি এবং তাওবা না করার ফলাফল।
জৈনেক লোক সত্য কথাই বলছেন, যদি আপনি দিনে রোজা এবং রাতে ইবাদত করতে না পারেন, তাহলে মনে রাখবেন আপনি একজন হাতে পায়ে কড়া পরিহিত শিকলাবদ্ধ লোক। আপনার গুনাহই আপনাকে এ পরিণতিতে টেনে এনেছে।

আর দ্বিতীয় বিষয় হল, আপনাকে যে কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে তা হল, যাতে আল্লাহ আপনার ইবাদত বন্দেগীগুলো কবুল করেন। কারণ, পাওনাদার সাধারণত উপঢৌকন গ্রহণ করে না। গুনাহ হতে বিরত থাকা, গুনাহ হতে তাওবা করা এবং প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করা হল ফরজ কাজ। আর অন্যান্য সকল ইবাদত তা সবই নফল। সুতরাং, মূল পাওনা পরিশোধ ছাড়া আল্লাহ তাআলা আপনার থেকে কিভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করবেন? আপনি কীভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈধ ও মুবাহ কাজা গুলি ছেড়ে দিবেন অথচ আপনি এখনো আল্লাহর নাফরমানী এবং নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত। 

তাওবাতুন নাছুহা কি?
মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ, মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে।
জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। মনে রাখতে হবে তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়া জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তাবায়ন ছাড়া তা কবুল হয় না।
এর জন্য চারটি র্শত আছে
(১) পূর্বের কৃত কাজের উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া।
(২) এমন কাজ দ্বিতীয় বার না করার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
(৩) আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করা।
(৪) কবীরা গুনাহের কারণে আপনার উপর যে কর্তব্য বা ঋণের দায়িত্ব বর্তায় তা পরিশোধ করা, যেমন, আপনি কাউকে গালি দিয়েছেন অথবা কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাহলে আপনার কর্তব্য হল, পাওনাদারকে তার পাওনা ফেরত দেয়া এবং তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি আপনি এমন কোন অন্যায় করেন যার মধ্যে অন্যের অধিকারের কোন সম্পর্কে নেই। তাহলে পূর্বের তিনটি শর্ত পূর্ণ করলেই তওবা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর দরাবারে আশা করা যাবে যে তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তওবা যেন তিনি কবুল করেন।
যে কারণে তাওবা করতে হবে
আর মনে রাখতে হবে তোমাকে দুটি কারণে তাওবা করতে হবে। তার একটি কারণ হল, যাতে তোমার আল্লাহর আনুগত্য করা ও বন্দেগী করার সৌভাগ্য লাভ হয়। কারণ, গুনাহের খারাব পরিণতি হল, গুনাহের কারণে বান্দা যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়ে যায় এবং অপমান অপদস্থ হয়। গুনাহ একজন মানুষকে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে দিকে অগ্রসর হওয়া ও তাঁর গোলামীর দিকে অগ্রগামী হওয়া থেকে বাধা দেয়। এ ছাড়া যার গুনাহের বোঝা ভারি হয়ে যায়, তার জন্য নেক কাজ করা এবং কল্যাণকর কাজে তৎপর হওয়া আর সহজ থাকে না। সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকার কারণে মানুষের অন্তরসমূহ কালো হয়ে যায়। ফলে অন্তরসমূহ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় এবং তা পাথরের মত কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে আর কোন ইখলাস থাকে না ইবাদত বন্দেগীতে কোন মজা ও স্বাদ উপভোগ করে না। আল্লাহ তাআলা যদি তার প্রতি অনুগ্রহ না করে তাহলে গুনাহ গুনাহগার ব্যক্তিকে কুফর ও বেঈমানীর দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কী আশ্চর্য! যে গুনাহ ও পাপাচারে লিপ্ত তাকে কীভাবে আল্লাহ তার গোলামীর সুযোগ দিবেন। কীভাকে তাকে তার দীনের খেদমতের জন্য ডাকবে যে সর্বদা তার নাফরমানীতে মশগুল এবং অবাধ্যতায় নিমগ্ন। কীভাবে তাকে মুনাজাতের জন্য কাছে টেনে আনবে যে ময়লা আবর্জনা ও নাপাকীতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যখন কোন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন তার মুখ থেকে যে দূগর্ন্ধ বের হয় তাতে তার থেকে দুইজন ফেরেস্তা দূরে সরে যায়। ফলে এ জিব্হা কীভাবে উপযুক্ত হবে আল্লাহর যিকির করার ? সুতরাং, এতে বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ নাই, যে লোক আল্লাহর নাফরমানী ও তার হুকুমের বিরোধিতার উপর অটল থাকে সে কখনো ভালো কাজের তাওফীক লাভ করতে পারে না এবং তার জন্য নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে আল্লাহর ইবাদতে কাজে লাগানো সহজ হয় না। সে যদি খরচ করে তবে তাকে অনেক কষ্টে খরচ করতে হয়, তাতে কোন মানসিক স্বস্তি ও আন্তরিক তৃপ্তি পায় না এবং কোন স্বাদ উপভোগ করে না। এমন হবার মূল কারণ হচ্ছে, সে সব সময় গুনাহতে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ছেড়ে দেয়া। সুতরাং আপনাকে আল্লাহর দরবারে বার বার তাওবা করতে হবে এবং গুনাহের কাজসমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন।
গুনাহের প্রকার,
গুনাহ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
১. আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর যে সকল ইবাদত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া। যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় নাকরাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাপ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদত ছুটে গিয়াছে তা যথা সম্ভব ক্বাযা আদায় করা। আর যদি ক্বাজা আদায় করা সম্ভব না হয় তার বিকল্প যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে। এবং আল্লাহর নিকট হতে মাপ করিয়ে নিতে হবে।
২. আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সংঘটিত গুনাহসমুহ। যেমন: মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে পত্যয়ী হতে হবে যে এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
৩. গুনাহের সর্ম্পক বান্দার সাথে। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক। এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে,
(ক) ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত, এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটি হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা হালাল করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপুস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে তার উপর রাজি করিয়ে দেয়।
(খ) মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমনÑ হত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব নাহয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
(গ) মানুষের সম্ভ্রম হরণ করা। যেমন গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে। যাতে আল্লাহ তাকে তার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং তার জন্য বেশী বেশী প্রার্থনা করবে।
(ঘ) ইজ্জত হরণ, যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা।
গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকসমূহ:
মনে রাখতে হবে, গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান- অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়- সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর। গুনাহের কয়েকটি ক্ষতিকর দিক ও খারাব পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল। যাতে আমরা এগুলো জেনে গুনাহ হতে বিরত থাকতে সচেষ্ট হই।
১। ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়া। কারণ, ইলম হল নূর যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন কিন্তু গুনাহ-পাপাচার এ নূরকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো ইলম তথা শরিয়তের জ্ঞান লাভে ধন্য হতে পারে না। ইলম হল, আল্লাহর নূর আর গুনাহ হলো অন্ধকার। আর এ কথা স্পষ্ট যে, আলো ও অন্ধাকার কখনো একত্র হতে পারে না।

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

কল্কি অবতার কে ? মহানবী (সাঃ) ?

কল্কি অবতার কে ? মহানবী (সাঃ) ?

হিন্দু ধর্মে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে । এ দশ আবতারের সর্বশেষ অবতার হচ্ছে 'কল্কি অবতার' । তেমনিভাবে ইসলামী বর্ণনায় হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী-রাসূল হলেন ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) । কল্কি অবতারের পর আর কোন অবতার হবে কি-না এর কোন ইঙ্গিত হিন্দু মিথলজীতে আছে বলে আমাদের জানা নাই । তেমনিভাবে ইসলামী শাস্ত্রগ্রন্হে বহুল প্রমাণিত যে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) একমাত্র 'খাতামুন নাবীঈন' বা শেষ নবী । তার পরে আর কোন নবী-রাসূল পৃথিবীতে আগমণ করবেন না । অর্থাৎ আল্লাহ পাক হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত রিসালতের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন । পবিত্র কোরআন মজীদ সুষ্পষ্ট ঘোষণা করেছেঃ

" বরং তিনি [মোহাম্মদ (সাঃ)] আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী" [৩৩/৪০]

ফলে 'কল্কি' অবতারই যে, আখেরী নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তা নির্দ্বিধায় বলা যায় । কেননা, পন্ডিতগণ প্রমাণ করেছেনঃ 'কল্ক' অর্থ 'পাপ' আর 'কল্কি' অর্থ পাপ বিনাশকারী । কলিযুগের শেষে পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হবে তখন কল্কি বা পাপ বিনাশকারী অবতার আগমণ করবেন ।

কলিযুগে কল্কির অবতার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রাবন্ধিক প্রিন্সিপাল মাজেদুর রহমান । তিনি তার 'নবী-রাসূল-অবতার-সন্দেষ্টা-প্রফেট-তীর্থকর' প্রবন্ধে আলোচনা, যুক্তি, পুরাণ এবং বৈদিক শ্লোকাদির উদ্ধৃতিসহকারে প্রমাণ করেছেন যে, কল্কি অবতার-ই শেষনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) । বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্হে কল্কি অবতারের যে গুণ এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে, তাতে কোথাও রূপকার্থে এবং কোথাও সরাসরিভাবে চিহ্নিত করা যায় বিধায় 'কল্কি' অবতারই যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ কথা নিম্নোক্তভাবে প্রমাণিত । যথাঃ

১. "শম্ভলে বিষ্ঞুযশামে গৃহে প্রার্দুভাবাম্যহম সুমাতাং বিষ্ঞু যশম্য গর্ভ মাধব বৈষ্ঞবম " । (কল্কি পুরাণ; ২/১৯ অংশ শ্লোক)

অর্থাৎ - শম্ভল শহরের প্রধান পুরোহিত গৃহে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন । তার পিতার নাম হবে বিষ্ঞুযশম এবং মাতার নাম হবে সুমতী (সোমবর্তী) ।

২. "দ্বাদশ্যাং শুল্লপক্ষস্য মাধবে মনি মাধবম " । ( কল্কি পুরাণ; ২/২৫)

অর্থাৎ- তিনি শুল্কপক্ষের দ্বাদশ তিথিঃ মাধব মাসে (বৈশাখ মাসে) জন্মগ্রহণ করবেন ।

৩. অশ্বমাশুগমারূহ্য দেবদত্তঃ জগৎপতিঃ ।
আমিনা সাধু দমন অইষ্টশ্বর্য গুণান্বিত" (শ্রীমদ্ভাবগত; ১২/২-১৯ শ্লোক)

অর্থাৎ- "অষ্ট ঐশ্বর্য ও গুণে গুণান্বিত জগৎপতি দেবতা কর্তৃক প্রদ্ত্ত বেগবান অশ্ব পৃষ্ঠে আরোহণ করবেন । তিনি অসি বা তরবারী দ্বারা দুষ্কৃতদের দমন করবেন "

৪. "বিচারন্নাশূণ্য ক্ষৌণাৎ হষেণা প্রতিমদ্যুতি নুপলিঙ্গচ্ছেদ্য দস্যূ ন কোটি শোনিহ নিয্য " । (শ্রীমদ্ভাবগত; ১২/২-২০ শ্লোক)

অর্থাৎ- তিনি দ্রুত গমনশীল অশ্বে বিচরণকারী অপ্রতিম কান্তিময়ঃ তার গুপ্তাঙ্গের অগ্রভাগ ছেদিত । রাজা বেশে অসংখ্য গুপ্ত দূস্যকে সংহার করবেন ।

৫. "সাত যয়ং তুবং দেবা সাঃ শাবত রণে রাতাঃ " ( কল্কি পুরাণ; ২/৭)

অর্থাৎ- যুদ্ধক্ষেত্রে দেবতারা তাকে সাহায্য করবেন ।

৬. নরাশংস মিহপ্রিয় মশ্মিনা উপবায় মধুজিহবৎ হবিষ্কতম " । (ঋগ্বেদ;১০ মন্ডল;১৩ যু্ক্ত; ৩ সং)

অর্থাৎ- "নরাশংসের বাক্যালাপ সুমিষ্টযুক্ত " ।

--উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর প্রতি সূক্ষ আলোচনার প্রেক্ষিতে আলোকপাত করলে সহজেই বোধগম্য হয় যে মূলত কল্কিপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্হে কল্কি অবতার তথা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) -এর আগমণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে ।

লোক দেখানো আমলের ভয়াবহ পরিণতি

আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হবে একজন (ধর্মযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী) শহীদ। তাকে আল্লাহ্‌র নিকট উপস্থিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ পাক তাকে (দুনিয়াতে প্রদত্ত) নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে ব্যক্তিও তা স্মরণ করবেন।
এরপর আল্লাহ্‌  তাকে জিজ্ঞেস করবেন,
“দুনিয়াতে তুমি কি আমল করেছ?”
 উত্তরে শহীদ ব্যক্তি বলবেন,
“আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য (কাফেরদের সাথে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি।” তখন আল্লাহ্‌ বলবেন,“ তুমি মিথ্যা বলছ, বরং তোমাকে যেন বীর-বাহাদুর বলা হয়, সেজন্য তুমি লড়াই করেছ। আর (তোমার অভিপ্রায়  অনুযায়ী)  তোমাকে  দুনিয়াতে তা  বলাও  হয়েছে।”
 অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হবে। তখন তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর সে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেছে (এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে)। তাকে আল্লাহ্‌ পাকের দরবারে হাযির করা হবে। অতঃপর তিনি তাকে নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ্‌  তাকে জিজ্ঞেস করবেন,
“ এই সমস্ত নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য তুমি কি আমল করেছ? ”
উত্তরে লোকটি বলবেন, “আমি স্বয়ং দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছি এবং অপরকে  শিক্ষা  দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরআন তেলাওয়াত করেছি।”
 তখন আল্লাহ্‌ বলবেন, “তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তুমি এজন্য ইলম্ শিক্ষা করেছ, যেন তোমাকে ‘বিদ্বান’বলা হয় এবং এজন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছ, যাতে তোমাকে‘ক্বারি’ বলা হয়। আর (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী ) তোমাকে বিদ্বান ও ক্বারীও বলা হয়েছে।”
 অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। সুতরাং তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহ্‌র দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ্  বিপুল ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান করেছিলেন। তাকে আল্লাহ্‌   প্রথমে প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। আর সে তখন সমস্ত নেয়ামতের কথা অকপটে স্বীকার করবে।
অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, “এই সমস্ত নেয়ামতের  শুকরিয়ায় তুমি কি আমল করেছ?” উত্তরে সে বলবে,“ যে সমস্ত ক্ষেত্রে ধন সম্পদ ব্যয় করলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন, আপনার সন্তুষ্টির জন্য সেসব খাতের একটি পথেও ব্যয় করতে ছাড়িনি।”
 আল্লাহ্‌  তাআলা বলবেন, “তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছিলে, যাতে তোমাকে বলা হয় যে, সে একজন ‘দানবীর’। সুতরাং (তোমার অভিপ্রায় অনুসারে দুনিয়াতে) তোমাকে ‘দানবীর’বলা হয়েছে।”
 অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে ।
 [মুসলিম হা/১৯০৫  ‘নেতৃত্ব’অধ্যায়,  অনুচেছদ-৪৩;  মিশকাত-আলবানী  হা/২০৫,  ‘ইলম’অধ্যায় ]

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫

খিযির ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী !

 খিযির ও মূসা (আঃ)-এর কাহিনী !

হযরত ইবনু আব্বাস (রা:) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনু কা‘ব (রা:) রাসূলুল্লাহ (সা:) হ’তে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা (আঃ) একদা বনী ইসরাঈলের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে দাঁড়ালে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হ’ল, কোন ব্যক্তি সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি বললেন, আমিই সর্বাধিক জ্ঞানী।  জ্ঞানকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ না করার কারণে আল্লাহ্‌ তাকে তিরস্কার করে বললেন, বরং দু’সাগরের সঙ্গমস্থলে আমার এক বান্দা আছে, যিনি তোমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী।
হযরত মূসা (আঃ) বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক!  তার নিকট পৌছাতে কে আমাকে সাহায্য্ করবে?  কখনো সুফইয়ান এভাবে বর্ণনা করেছেন, আমি কিভাবে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি? তখন বলা হ’ল, তুমি একটি থলিতে করে একটি মাছ নাও। যেখানে তুমি মাছটি হারাবে, সেখানেই আমার সে বান্দা আছে। অতঃপর হযরত মূসা (আঃ) একটি মাছ ধরলেন এবং থলিতে রাখলেন।অতঃপর মাছ নিয়ে তাঁর সঙ্গী ইউশা বিন নূনকে সাথে নিয়ে চললেন।শেষ পর্যন্ত তারা একটি পাথরের কাছে পৌছলেন এবং তার উপর মাথা রেখে বিশ্রাম নিলেন।মূসা (আঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এ সময় মাছটি থলি থেকে বের হয়ে লাফিয়ে সমুদ্রে চলে গেল।অতঃপর সে সমুদ্রে সুড়ঙ্গের মত পথ করে নিল।আর আল্লাহ্‌ মাছটির চলার পথে পানির প্রবাহ থামিয়ে দিলেন।ফলে তার গমনপথটি সুড়ঙ্গের মত হয়ে গেল।অতঃপর তারা উভয়ে অবশিষ্ট রাত এবং পুরো দিন পথ চললেন।
পরদিন সকালে হযরত মূসা (আঃ) তার সাথীকে বললেন, আমরা তো সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমাদের খাবার নিয়ে এস।হযরত মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ্‌ যে স্থানে যাবার কথা বলেছিলেন, সেই স্থান অতিক্রম করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কোনরূপ ক্লান্তিবোধ করেননি। সাথী ইউশা বিন নুন তখন বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, যে পাথরটির নিকট আমরা বিশ্রাম নিয়েছিলাম সেখানেই মাছটি অদ্ভুতভাবে সমুদ্রের মধ্যে চলে গেছে।কিন্তু আমি মাছটির কথা আপনাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মূলত: শয়তানই আমাকে এ কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, পথটি মাছের জন্য ছিল একটি সুড়ঙ্গের মত আর তাঁদের জন্য ছিল আশ্চর্যজনক  ব্যাপার।
হযরত  মূসা  (আঃ)  বললেন,  আমরা  তো  সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছি।অতঃপর তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললেন এবং ঐ পাথরের নিকটে পৌঁছে দেখলেন, এক ব্যক্তি কাপড় মুড়ি দিয়ে বসে আছেন। মূসা (আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, এখানে সালাম কি করে এলো? তিনি বললেন, আমি মূসা। খিযির জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বনী ইসরাঈল বংশীয় মূসা? মূসা (আঃ) বললেন, হ্যাঁ। আমি এসেছি এজন্য যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হ’তে আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন। খিযির বললেন, হে মূসা! আমার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত কিছু জ্ঞান আছে, যা আপনি জানেন না। আর আপনিও আল্লাহ্‌ প্রদত্ত এমন কিছু জ্ঞানের অধিকারী, যা আমি জানি না। মূসা (আঃ) বললেন, আমি কি আপনার সাথী হ’তে পারি? খিযির বললেন, ‘আপনি কিছুতেই আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। যে বিষয় আপনার জ্ঞানের আওতাধীন নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করবেন কেমন করে?’ মূসা (আঃ) বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ্‌ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না’ (কাহফ ৬৭-৬৯) ।
অতঃপর তাঁরা দু’জনে সাগরের কিনারা ধরে হেঁটে চললেন। তখন একটি নৌকা তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তাদেরকে নৌকায় তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। তারা খিযির-কে চিনতে পেরে বিনা ভাড়ায় তাঁদেরকে নৌকায় তুলে নিলো। যখন তাঁরা দু’জনে নৌকায় চড়লেন, তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকাটির কিনারায় বসল এবং সমুদ্র থেকে এক ফোঁটা বা দুই ফোঁটা পানি পান করল। খিযির বললেন, ‘হে মুসা! আমার ও আপনার জ্ঞানের দ্বারা আল্লাহ্‌ জ্ঞান হ’তে ততটুকুও কমেনি যত টুকু এ পাখিটি তাঁর ঠোটের দ্বারা সাগরের পানি হ্রাস করেছে’।
তখন খিযির একটি কুড়াল নিয়ে নৌকাটির একটা তক্তা খুলে ফেললেন। মূসা (আঃ) অকস্মাৎ  দৃষ্টি দিতেই দেখতে পেলেন যে, তিনি কুড়াল দিয়ে একটি তক্তা খুলে ফেলেছেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, আপনি একি করলেন? এ লোকেরা বিনা ভাড়ায় আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিলো, আর আপনি তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য নৌকা ছিদ্র করে দিলেন? আপনি তো একটি গুরুতর কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার এ ব্যবহারে আমার প্রতি কঠোর হবেন না।মূসা (আঃ)-এর পক্ষ থেকে প্রথম এ কথাটি ছিল ভুলক্রমে।
অতঃপর তাঁরা যখন উভয়ে সমুদ্র পার হলেন, তখন তারা একটি বালকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল।খিযির ছেলেটির মাথা দেহ হ’তে ছিন্ন করে ফেললেন। হযরত মুসা  (আঃ) বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ শিশুকে বিনা অপরাধে হত্যা করলেন? আপনি খুবই খারাপ একটা কাজ করলেন। খিযির বললেন, আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্যধারণ করতে পারবেন না। মূসা (আঃ) বললেন, এরপর যদি আমি আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করি, তাহ’লে আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না।অতঃপর উভয়ে চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তাঁরা একটি জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট কিছু খাবার চাইলেন। কিন্তু জনপদ বাসী তাদের দু’জনের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।সেখানে তারা একটি প্রাচীর দেখতে পেলেন, যা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।হযরত খিযির প্রাচীরটি মেরামত করে সুদৃঢ় করে দিলেন।হযরত মুসা (আঃ) বললেন, এই বসতির লোকদের নিকট এসে আমরা খাবার চাইলাম।তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল।অথচ আপনি এদের দেয়াল সোজা করে দিলেন।আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।হযরত খিযির বললেন, এবার আমার এবং আপনার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেল।এক্ষণে যে বিষয়ে আপনি ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, আমি এর তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।
নৌকাটির ব্যাপার ছিল এই যে, সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির।তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত।আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। কারণ, তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে ভাল নৌকা পেলেই জোরপূর্বক কেড়ে নিত। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসল, তখন ছিদ্রযুক্ত দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো।আর বালকটি সূচনা লগ্নেই ছিল কাফের। আর সে ছিল তার ঈমানদার বাবা- মার বড়ই আদরের সন্তান । আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে বড় হয়ে অবাধ্যতা  ও কুফরি দ্বারা তাদেরকে কষ্ট দিবে। অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম  যে,  তাদের  পালনকর্তা  তাদেরকে  তার  চেয়ে  পবিত্রতায়  ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান  দান করুন।আর  প্রাচীরের  ব্যাপার  এই  যে,  সেটি  ছিল  নগরের  দু’জন  ইয়াতীম বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দয়াপরবেশ হয়ে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করে নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ ইচ্ছায় এসব করিনি। আপনি যে বিষয়গুলোতে ধৈর্যধারণ করতে পারেননি, এই হ’ল  তার ব্যাখ্যা ।

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

হযরত শাহজালাল(র:)


হযরত শাহজালাল (র:) ছিলেন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ওলিদের মধ্যে অন্যতম।তিনি বাংলা ও আসাম অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে আগত আউলিয়াদের পথিকৃত।এ কারণে হযরত শাহজালাল (র)কে বাংলাদেশে আওলিয়াকূল শিরোমনি হিসাবে শ্রদ্ধা করা হয়।তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল এক মুজাহিদ বাহিনী।যাঁরা জীবনভর ত্যাগ ও মেহনতের মাধ্যমে বাংলা ও আসামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামের শাশ্বত বাণী ও তৌহিদের সুমহান পয়গাম পৌঁছে দেন। ফলে আজ বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
 
হযরত শাহজালাল (র:) হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর শেষ দশকে ৫৯৬ হিজরী ১১৯৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তাঁর পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ মাতার নাম সৈয়দা ফাতিমা
শায়খ বা শেখ সাধনাগত উপাধি।।সাধনায় যিনি সিদ্ধি লাভ করেন করেন তিনি শায়খ বা শেখ উপাধি লাভ করেন।শায়ক অর্থ বুজর্গও বুঝায়।শাহ শব্দও একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।ফার্সী শাহ ও আরবী শায়ক বা শেখ শব্দ দুটি একই অর্থ বহন করে।
সিলেট শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একটি মনোরম নাতি উঁচু টিলার উপর হযরত শাহজালাল (র:) এঁর মাজার শরীফ অবস্থিত।অগণিত ফকির দরবেশ আশেকান হৃদয়ে তাপ বিদগ্ধ মানব কূলের কাছে হযরত শাহজালাল (র:) দরগাহ শরীফ পূন্যতীর্থ হিসাবে সর্বজনমান্য।এখানে এসে আশেকান লাভ করেন হৃদয়ে অনাবিল প্রশান্তি।পীর,ফকির,সাধক দরবেশগণ লাভ করেন আধ্যাতিক জ্যেতির সন্ধান।জীবন সংগ্রামে পর্যূদস্তু আর ঘাত প্রতিঘাতে বিপর্যস্ত আদম লাভ করেন জীবনের ক্লেশ মুক্তির ইশারা ।মারেফাতের আবেহায়াত সন্ধানী পীর ফকির সুফি দরবেশ সংসার ত্যাগী মানব সন্তান আলেম ওলামা লাভ করেন বাতেনী ইলমের আবেহায়াত।
সিলেটের পবিত্র ধূলাবালির পরতে পরতে রয়েছে আল্লাহ পাকের অফুরন্ত কুদরতের লীলাখেলা।এখানকার পথ প্রান্তর,হাওর-জঙ্গল আর দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল সবুজ জমিনের চোখ জুড়ানো মন ভোলানো প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে পীর-ফকির,সূফি-দরবেশ,গাউস-কুতুব,বাউল-বৈরাগীর নীরব সাধনার ক্ষেত্র।
হযরত শাহজালাল (র:) এঁর রুহানী শক্তিতে সিলেটের জমিনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে।মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:)।সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) এঁর নেতৃত্বে সিলেট বিজয়ের পর গৌড়গবিন্দের সমসাময়িক রাজা আচাক নারায়নের রাজ্য রাজপুর বা তুঙ্গাচল বা তরপ (হবিগঞ্জ জেলা)বিজিত হয়।সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) এঁর নেতৃত্বে অভিযানে বারোজন আউলিয়া অংশ গ্রহণ করেছিলেন বলে তরপকে(হবিগঞ্জ জেলা) বার আউলিয়ার দেশ বলে অভিহিত করা হয়।
হযরত শাহজালাল (র:) আধ্যাত্মিক শিক্ষা গ্রহণ করার পর সৈয়দ আহমদ (র:) এঁর নিকট হতে খিলাফত লাভ করেন।অত:পর তিনি পীরের অনুমতি নিয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সাতশত অনুচর সহ মাতৃভূমি ত্যাগ করেন।এ সময়ে দুর্ধর্ষ মোঙ্গলরা মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম শাসন ও সংস্কৃতি ধ্বংশ করে চলেছিল।তিনি মনে করলেন মোসলমানদের রক্ষায় আল্লাহর পথে জিহাদ করা তাঁর পবিত্র দায়িত্ব এবং তিনি এই পবিত্র দায়িত্ব পালনে সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন। ইবনে বতুতার মতে,১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে যথন হালাকু খান শেষ আব্বাসীয় খলিফা মুস্তাসিম বিল্লাহকে হত্যা করেন ও তার রাজধানী লুন্ঠন করেন তখন হযরত শাহজালাল(র:)বাগদাদে উপস্থিত ছিলেন।বিদায় কালে হযরত শাহজালাল (র:) এঁর মুর্শিদ আরবের কোন এক স্থানের এক মুটো মাটি দিয়ে বলেছিলেন,-
‘যেখানের মাটির স্বাদ,বর্ণ ও গন্ধ এ মাটির সাথে মিলে যাবে,সেখানে আস্তানা স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’
মাটি পরীক্ষার ভার যে দরবেশের উপর ন্যাস্থ ছিল তাঁর উপাধি দেয়া হয় ‘চাশনীপীর’।
তিনি দিল্লীতে এসে হযরত নিযাম উদ্দীন আউলিয়া (র:)এঁর সাথে মোলাকাত করেন।হযরত নিযাম উদ্দীন আউলিয়া (র:) তাঁকে একজোড়া সুরমা রংয়ের কবুতর উপহার দেন,যা জালালী কবুতর নামে পরিচিত।
অত:পর তিনি সাথীদের নিয়ে বাংলোর দিকে অগ্রসর হন।সেনাপতি সিকান্দর গাজীকে সিলেট বিজয়ে সাহায্য করেন।
সিলেটের অত্যাচারী রাজা  গৌড়গোবিন্দ কর্তৃক জনৈক শায়খ বুরহান উদ্দীন (র:) প্রতি অত্যাচারের প্রতিবিধানার্থে বাংলার সুলতান শামসউদ্দীন ফিরোজ শাহ তাঁর ভাগ্নে সিকান্দর গাজীকে সিলেটে প্রেরণ করেন।চলার পথে সিকান্দর গাজী সোনারগাঁও দখল করেন।কিন্তু গৌড়গোবিন্দের কাছে সফল হতে পারেননি। তিনি গৌড়গোবিন্দের বিরোদ্ধে যুদ্ধে তিনবার বিফল হন।অত:পর দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দীন খিলজি(১২০৬-১৩৮৬ খিষ্টাব্দ)তাঁর সেনাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দিনকে সিকান্দর গাজীর সাহায্যার্থে প্রেরণ করেন।হযরত শাহজালাল (র:) ও তাঁর ৩৬০ জন আউলিয়া সেখানে উপস্থিত হন।সাতগাঁওয়ের নিকট ত্রিবিনীতে সৈন্য দলের মধ্যে হযরত শাহজালাল (র:) ও তাঁর মুজাহিদ বাহিনীর উপস্থিতির ফলে সেনাদল নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠে ।সম্মিলিত সেনাবাহিনী এবার সিলেট বিজয়ে কৃতকার্য হন।
সিলেটের মাটির সাথে মুর্শিদ প্রদত্ত মাটি হুবাহু মিলে যায় ।তিনি সিলেটে আস্তানা স্থাপন করেন এবং ধর্ম প্রচার ও মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।স্থানীয় লোকদের মধ্যে ইসলাম প্রচার নৈতিক শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি বিজিত এলাকার ভার কয়েকজন শিষ্যের উপর ন্যাস্থ করে তাঁর সাথী ৩৬০ আউলিয়ার মাধ্যমে সারা বাংলা ও ভারতের করিমপুরে ইসলামের তৌহিদের শ্বাশত বানী প্রচার করেন।
ইবনে বতুতার  বর্ণনায় তাঁর সংযম,নিষ্ঠা ও সেবাধর্মী জীবনের পরিচয় পাওয়া যায়।এই মুর দেশীয় পরিব্রাজক ইবনে বতুতা যখন তাঁর সাথে স্বাক্ষাত করেন,তখন  তিনি খুবই বৃদ্ধ বয়সে উপনীত ।হযরত শাহজালাল (র:)  ক্ষীণকায় ও লম্বা আকৃতির ছিলেন।তাঁর অল্প দাড়ি ছিল।তিনি প্রায় চল্লিশ বছর একাধারে রোজা রেখেছেন।দশদিন অন্তর রোজা ভাংতেন।তাঁর একটি গাভী ছিল।সেই গাভীর দুধই ছিল তাঁর একমাত্র প্রধাণ খাদ্য ।তিনি সারারাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন।ইবনে বতুতা আরোও বলেন যে,এই মহান  দরবেশ শায়খের মেহনতের ফলেই ঐ অঞ্চলের অধিবাসীরা ইসলামে দীক্ষিত হয় এবং তাঁর জন্য তিনি তাদের মধ্যে বসতি স্থাপন করেন।তিনি একটি খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন ।এই খানকাহ ছিল সুফি-দরবেশ মুসাফির ও দু:স্থ মানুষের আশ্রয় স্থল।হিন্দু-মোসলমান সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করতো।তারা তাঁর জন্য নানা প্রকার থাদ্য সামদ্রী ও নিয়াজ নজর আনতো।এগুলো দিয়েই আস্তানার লোকদের খাওয়ানো হতো।

তাঁর মহত আদর্শ জনগণের মনে এমন গভীর ভাবে রেখাপাত করেছে যে,তারা তাঁকে একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব কামেল বুজর্গ ব্যক্তি মনে করে ভক্তি ভরে ছুটে আসে তাঁর মাজার যিয়ারতে।
১৫০ বছর বয়সে ১৩৩৭ সালে এই দরবেশ ইন্তেকাল করেন ।কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর।তবে ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত জনাব দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী রচিত হযরত শাহজালাল (র:) গ্রন্থে তাঁর জীবন কাল ১৫০ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
 সকল প্রকার শিরক ও বিদআতকে বিনাশ করে দিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল হযরত শাহজালাল (র:) ও তাঁর ৩৬০ জন আউলিয়ার জিন্দেগীর একমাত্র উদ্দেশ্য ।কিন্তু দু:খের বিষয়,শিরক ও বিদআদ সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা থাকার কারণে আমরা এই মহান ওলি আউলিয়াদের কবরকেই প্রায় ক্ষেত্রে শিরক ও বিদআতের আখড়া হিসাবে পরিণত করে ফেলেছি,যদিও আমাদের হৃদয়ে ভক্তি শ্রদ্ধার কোন ক্রুটি নেই।শিরক একটি জঘণ্যতম গুনাহের কাজ।শিরক সমস্ত আমলকে বিনাশ করে দেয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোরআনে বলেছেন,-
‘যদি তারা শিরক করে থাকে তবে তারা যা কিছু আমল করেছে সব কিছুই বরবাদ হয়ে যাবে’।
শিরক বিদআতের গোনাহ হতে  মহান আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
আমিন।।