কাবা শরীফ
(আরবি: الكعبة al-Ka‘bah;আরও যে নামে পরিচিত al-Kaʿbatu l-Mušarrafah (الكعبة المشرًّفة), al-Baytu l-ʿAtīq (البيت العتيق "The Primordial House"), অথবা al-Baytu l-Ḥarām (البيت الحرام "The Sacred House"), একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। আসলে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি।
প্রতি
বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তাওয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর
নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের
সূরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতগাহ রূপে
নিরূপিত হয়েছে, তা ওই ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, চতুর্থ
আকাশে বা দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আকরিক পাথর দ্বারা নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে যার
নাম বাইতুল-ইজ্জত যাকে বাইতুল মামুরও বলা হয়। এটি কাবা শরীফের বরাবরে দুনিয়ার
নিকটবর্তী আকাশে ফেরেশতাদের ইবাদতগাহ। ফেরেশতারা এখানে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মগ্ন থাকে।
মুসলিম তথা মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া
করেন। তখন আল্লাহ্ পাকের হুকুমে ফেরেশতারা বাইতুল মামুরের নকশা পৃথিবীর মধ্যস্থলে
ফেলে দেন। হজরত আদম (আ.)-এর ছেলে হজরত শীষ (আ.) ওই নকশার উপর ভিত্তি করে ওই স্থানে
একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদই আমাদের বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর।
(আরবি: الكعبة al-Ka‘bah;আরও যে নামে পরিচিত al-Kaʿbatu l-Mušarrafah (الكعبة المشرًّفة), al-Baytu l-ʿAtīq (البيت العتيق "The Primordial House"), অথবা al-Baytu l-Ḥarām (البيت الحرام "The Sacred House"), একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত, যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। আসলে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। কাবা, কাবাঘর, কাবা শরীফ কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি।
কাবা শরিফ মহান আল্লাহতালার এক অপূর্ব সৃষ্টি |
ইসলাম ধর্ম মতে কাবা কে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে মনে করা
হয়। এটি মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পরে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর
যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ পরেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ করেন।
অবস্থান এবং বাস্তবিক কাঠামো
কাবা একটি বড় পাথরের কাজ করা কাঠামো
যার আকৃতি প্রায় একটি ঘনক এর মত। কাবা শব্দটি এসেছে
আরবি শব্দ মুকা'আব অর্থ ঘন থেকে। এটি কাছের পাহাড়ের গ্রানাইট দ্বারা তৈরি যা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২৫সেঃমিঃ (১০ ইঞ্চি)
মার্বেল পাথরের ভিত্তির উপর যা বাইরের দিকে ৩০সেঃমিঃ (১ ফুট) বাড়িয়ে
আছে। কাঠামোতে জায়গার পরিমাণ প্রায় ১৩.১০ মিঃ (৪৩ ফুট) উচ্চতা, পাশাপাশি ১১.০৩ মিঃ
X ১২.৬২ মিঃ চারটি কোন কম্পাসের প্রায় চার বিন্দু বরাবর মুখ করা। কাবার পূর্ব কোনা
হচ্ছে রুকন-আল- আসওয়াদ" (কাল পাথর অথবা "আল-হাজারুল-আসওয়াদ"),
একটি উল্কাপিন্ডের অবশেষ; উত্তর কোনা হল "রুকন-আল-ইরাকী" (ইরাকী কোণ); পশ্চিমে
রয়েছে "রুকন-আল-সামী" (পূর্ব-ভূমধ্য সাগরীয় কোণ) এবং দক্ষিণে "রুকন-আল-ইয়ামানী"
('ইয়েমেনী কোণ')।
অজানা সালের কাবা শরীফের নকশা
|
কাবা শরীফের গিলাফ একটি বস্ত্রখণ্ড যদ্দ্বারা কাবাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমী কাপড় নির্মিত,
যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ",
"আল্লাহু জাল্লে জালালুহু", "সুবহানাল্লাহু ওয়া বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল
আযিম" এবং "ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান"। ১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৯৫ সেমি
প্রস্থ ৪১ খণ্ড বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে গিলাফ তৈরি করা হয়। চার কোণায় সুরা ইখলাস স্বর্ণসূত্রে বৃত্তাকারে উৎকীর্ণ করা হয়। রেশমী
কাপড়টির নিচে মোটা সাধারণ কাপড়রের লাইনিং থকে।[ একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমী
কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম এবং স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম। বর্তমানে এটি তৈরীতে ১৭
মিলিয়ন সৌদী রিয়াল ব্যয় হয়।
কাবা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সে
সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্রানুযায়ী নবী হযরত ইসমাঈল (আ.) প্রথম পবিত্র
কারা শরীফকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করেন। ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে যে শেষ নবী হযরত
মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ব পুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবা শরীফকে প্রথম গিলাফ দিয়ে
আচ্ছাদিত করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর
আসাদই সম্ভবতঃ পবিত্র কাবা শরীফ গিলাফ আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।
প্রাচীণ কাবার ছবি
|
ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইয়াসরিব শহরে (অর্থাৎ,
মদীনা শহর) হিজরতের ২২০ বৎসর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ এই শহরটিতে
(ইয়াসরিব) আক্রমণ করেছিলেন।তুব্বা আবু কবর আসাদ ইয়াসরিব ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করত: মাথা মুণ্ডন করেন। অত:পর তিনি এই শহরে কয়েকদিন অবস্থান
করেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ঘুমের মধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি কাবা শরীফ
গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদন করছেন। এ স্বপ্ন দ্বারা প্রাণিত হয়ে অবিলম্বে "খাসাপ"
দ্বারা কাবাঘরটি আচ্ছাদিত করেন। "খাসাপ" হচ্ছে তালগাছ জাতীয় গাছের পাতা ও আঁশের তৈরি এক
ধরনের মোটা কাপড়। অনন্তর তিনি আবার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তিনি আরো উন্নতমানের কাপড়
দ্বারা কাবা শরীফ আচ্ছাদন করছেন। অত:পর তিনি খাসাপের পরিবর্তে মামিজিয়ান, পাপিরাস
(মিশর দেশীয় নলখাগড়া বিশেষ পাতা) দ্বারা কাবা ঘর আচ্ছাদন করেন। ইয়েমেনের মামিজ নামক একটি উপজাতীয় গোত্র এই কাপড় তৈরি করতো।
এরপরও তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বপ্নে আরো উন্নত মানের কাপড় দ্বারা কাবা আচ্ছাদনের স্বপ্ন
দেখেছিলেন। তৃতীয় দফা স্বপ্নটির পর তিনি ইয়েমেনের লাল ডোরাকাটা কাপড় দিয়ে পবিত্র
কাবা ঢেকে দিয়েছিলেন।
অজানা সালের কাবা শরীফ |
সুন্দর কাপড়ের গিলাফ
তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার
স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আচ্ছাদন করতে থাকেন এবং তা
নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত
ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীব আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টি কিসওয়াহ
নামে আখ্যায়িত। আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদী ১৬০ হিজরীতে পবিত্র হজ্ব পালনকালে
পবিত্র কাবা থেকে একটি গিলাফ ছাড়া সবগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনো এই ধারাই
অব্যাহত রয়েছে। ৭ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের আগে মুহম্মদ (সা:) গিলাফ পরানো শুরু করেননি।
মক্কা বিজয়ের পর গিলাফ পরানোর সংস্কৃতি অব্যবাহত থাকে। বাদশাহ বাইবার্স হচ্ছেন পবিত্র কাবায়
গিলাফ পরিয়ে দেয়া প্রথম মিশরীয় শাসক। তারপর ইয়েমেনের বাদশা আল মুদাফ্ফার ৬৫৯ হিঃ
কাবা শরীফে গিলাফ পরান। পরবর্তীতে মিসরের শাসকরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ অব্যাহত রাখেন।
বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার
দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ
তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন। একই বৎসর মাঝামাঝি সময়ে
প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে তা সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত
করে কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরী পর্যন্ত এই কারখানাটি গিলাফ বা "কিসওয়াহ"
তৈরি অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে ১৩৮১ হিজরীতে সৌদি হজ্জ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগর দ্বারা
রেশমী ও সোনালী সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়।
১৩৮২ হিজরীতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ
নতুন ডিক্রিজারির মাধ্যমে নতুন করে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ
দেন। খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমী রং এর সাথে কালো রং-এর কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ
তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালী আভায় উদ্ভাসিত।
গিলাফ পরিবর্তন
প্রতি বৎসর হজ্জের ঠিক আগে কাবা শরীফের গিলাফ সরিয়ে তা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে
দেয়া হয়। হাজীদের ইহরামের শ্বেতশুভ্রতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই সাদা গিলাফ পরানো হয়।
হজ্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ্জ তারিখে নতুন গিলাফ পরানো হয়। প্রতিস্থাপতি গিলাফটি
খণ্ড খণ্ড করে বিলিয়ে দেয়া হয়।
হযরত নূহ (আঃ) এর সময় কা'বা শরীফের কিছূ
অংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় । অতঃপর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও উনার ছেলে হযরত ইসমাঈল
(আঃ) আল্লাহর হুকুমে কাবা শরীফ পুনঃনির্মান করেন এবং এই জনহীন বিরান ভূমি আবাদের জন্য
আল্লাহর নিকট দোয়া করেন । এই কা'বা শরীফ পৃথিবীর প্রথম মসজিদ । আল-কুরআনে আল্লাহপাক
বলেন, -মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ নির্মিত হয়, তা মক্কায় অবস্হিত এবং এ গৃহ বিশ্ববাসীর
জন্য হেদায়াত ও বরকতের উৎস ।
১৭০০ সালের কাবা শরীফের ছবি
|
৩টি মন্তব্য:
এত সুন্দর অজানা কথা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ 🌼
একটি তথ্যবহুল আলোচনা। ইতিহাস সম্বৃদ্ধ তথ্য আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।
nice...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন