রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৫

ইনকা সভ্যতা Inca civilization



কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে অনেক সভ্যতা কিন্তু তাদের অস্তিত্ব আজো আছে ইতিহাসের পাতায় আর কোন সভ্যতার নিদর্শন আজো পৃথিবীর বুকে টিকে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে পৃথিবীতে অনেক জাতির উত্থান হয়েছে ।নিশ্চিহ্ন হয়েছে অনেক সভ্যতা।কিন্তু তাদের গড়ে তোলা নগর এখনো রয়ে গেছে পৃথিবীতে।তাদের গড়ে তোলা সে অস্তিত্ব আমাদের বিষ্মিত করে। ভীষন ভাবে নাড়া দেয় আমাদের চিন্তা চেতনাকে ।সে রকম একটি জাতি একটি সভ্যতা ইনকা।তারি কথা বলবো আজ ।

রেড ইন্ডিয়ান
রেড ইন্ডিয়ান বলে আমরা যাদের চিনি তাদের নেটিভ আমেরিকান বলাই শ্রেয় ইওরোপিয়দের দখলদারির পূর্বে নেটিভ আমেরিকানদের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে বসবাস করত তাদের বেশিরভাগ জাতিগোষ্ঠী এখন প্রায় বিলুপ্ত এবং ইতিহাসের আড়ালে চলে গেলেও দুটি শক্তিশালী মেধাবী জাতি তাদের শৌর্য বীর্যের কথা আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয় তারা হল প্রাচীন ইনকা মায়া সভ্যতার রূপক।এর মধ্যে ইনকা সভ্যতা বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয় ।
প্রাচীন ইনকা  সভ্যতা
যুগের
পর যুগ ধরে প্রত্নতাত্তি্বকরা নানা প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ করছেন এর মধ্যে কোনোটি সমৃদ্ধ কোনোটিবা একেবারে অগোছাল কোনোটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আবার কোনোটি এখনো রয়ে গেছে অদ্ভুত রহস্যময়তার বেড়াজালে বন্দী নেটিভ আমেরিকানদের ইনকা সভ্যতা এমনই এক রহস্যময় সাম্রাজ্য তাদের সম্বন্ধে লিখিত কোনো তথ্য আজো আবিষ্কৃত হয়নি তবে নানা প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন থেকে সভ্যতা সম্পর্কে অনুমান করা হয় তাদের স্থাপত্যশৈলী ছিল অসাধারণ মিসরের পিরামিডের নির্মাণশৈলী যেমন আধুনিক মানুষকে বিস্মিত করে, ঠিক তেমনি নান্দনিক ছিল ইনকাদের স্থাপত্যশৈলী ইনকা সাম্রাজ্যকেচুয়ানামক নেটিভ আমেরিকানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর ধরে রাজত্ব করে গেছে কেচুয়া জাতির শাসকদের মর্যাদা দেবতাতুল্য বলে তাদের ইনকা বলা হতো তারা ইনতি বলে ডাকত এবং সেই নামের প্রতিনিধিত্ব করত ইনকা শাসকরা একটি উপজাতি হিসেবে বর্তমান পেরুর কোস্কো এলাকায় সুপ্রাচীন ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়েছিল ইনকা সাম্রাজ্য একসময় বিস্তৃত ছিল বর্তমান পেরুর কস্কো ভ্যালি থেকে উত্তরে ইকোয়েডর এবং সুদূর দক্ষিণে বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা পর্যন্ত পেরুর কুস্কো ভ্যালিকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হচ্ছে বর্তমান প্রত্নতাত্তি্বক অনুসন্ধানকে ভিত্তি করে ইনকাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেট অব দ্য আর্ট নিদর্শন যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত  তা হলো মাচুপিচু সমতল থেকে প্রায় হাজার ৮০০ ফুট উপরে এক দুর্গ শহর
মাচুপিচু
মাচুপিচু হলো পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্থানগুলোর একটি পেরুর মাচুপিচু অনেক সময় স্থানটিকে ডাকা হয় ইনকা সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া শহর হিসেবে প্রায় ১৫০টি দালানের এই শহরটিকে ঠিক কেন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিলো এর উত্তর জানা নেই কারো ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে মাচু পিচুকে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এটি বর্তমান বিশ্বের সাতটি নতুন বিস্ময়েরও একটি

১৯১১ সালের ২৪শে জুলাই ইতিহাসবিদ হিরাম বিংহ্যাম জায়গাটি আবিষ্কারের পর এটি এখন বেশ জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রায় ১২ লাখ দর্শনার্থী স্থানটি পরিদর্শনে আসেন
পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার পেরু নামে একটি দেশ এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ,৫০০ মাইল!
ইনকা সাম্রাজ্য
সেই কুজকো নগর ঘিরেই সূত্রপাত হয়েছিল কুজকো রাজ্যের (কিংডম অভ কুজকো) যা পরে হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম পরাক্রমশালী ইনকা সাম্রাজ্য ইনকা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিল পেরু, বলিভিয়া, উত্তর আর্জেন্টিনা, চিলি ইকিউডোরে
 
ইনকাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা :
ইনকা ট্রেইল
এত বিশাল সাম্রাজ্য সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষা করত ইনকারা এই উদ্দেশ্যে ইনকারা নির্মান করেছিল বিস্ময়কর সড়ক; যাকে বলে, ‘ইনকা ট্রেইল কৃৎকৌশলের দিক থেকে যা ছিল সে সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর
ইনকা ট্রেইল
মনোরম উপত্যকা দুর্গম গিরির ভিতর দিয়ে চলে গেছে ইনকা ট্রেইল আজও ধ্বংসাবশেষ দেখে চেনা যায় মূল ২টি পথ ছিল- উত্তর-দক্ষিণে  কোনও কোনও পথ ১৬০০০ ফুট উপরে ৪০, ০০০ কিলোমিটার
সামরিক বেসামরিক উভয়শ্রেনির লোকই চলাচল করত আর চলত লামা ক্যারাভান সাধারণ লোকের সে পথে চলতে হলে ইনকা সম্রাটের অনুমতি লাগত পথের মাঝে ছিল সেতু সেতুতে টোলব্যবস্থা ছিল ইনকা সাম্রাজ্য নেটিভ আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্য ছিল মায়া জাতি অপেক্ষাকৃত ছোট্ট পরিসরে বসবাস করলেও তাদের গাণিতিক বৈজ্ঞানিক প্রভাব তাদেরকে তখনকার সবচেয়ে উঁচুদরের জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মায়াদের সংস্কৃতি এতটাই সমৃদ্ধ ছিল যে তারা প্রাচীন মিশরীয়দের মত পিরামিড দেবমুর্তি নির্মাণ করতে জানত, তারা হায়ারোগ্লিফিকস লিখন পদ্ধতি গণিত জোত্যির্বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিল মায়া জাতির ঐতিহ্য প্রায় দু'হাজার বছরের ঐতিহ্য
ইনকা সাম্রাজ্যের গড়ে তোলা সড়কব্যবস্থা



ইনকা সাম্রাজ্যের গড়ে তোলা সড়কব্যবস্থাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ইনকা সাম্রাজ্যের গড়ে তোলা কুহাপাগ নান নামের এই সড়কটি দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি দেশের মধ্য দিয়ে গেছে এই সড়কটিতেই সম্মিলন হয়েছে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ভূখন্ডের আন্দিজ পর্বতমালা থেকে শুরু করে উর্বর উপত্যকা, রেইন ফরেস্ট মরুভূমি অঞ্চলে বাস করা সমপ্রদায়ের মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছিল এই সড়ক প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই সড়কটি উত্তরে আধুনিক কলম্বিয়া থেকে দক্ষিণে আর্জেন্টিনা চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল
ইনকা শাসক :
ইনকা শাসকরা ছিলেন অভিজাত রাজকীয় বংশের সম্রাটকে বলা হত ইনকা পরে অবশ্য সভ্যতার নামই হয়ে যায় ইনকা সম্রাটের অন্য নাম সাপা ইনকা সাম্রাজ্য পরিচালনতা করত রাজকীয় পরামর্শসভা পুরোহিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা সেনাপতির সমন্বয়েই গড়ে উঠত রাজকীয় পরামর্শসভা এরা সর্ম্পকে আত্মীয় সম্রাটগন বিয়ে করতেন আপন বোনকে পুত্রগনের মধ্যে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করতেন সাধারণত বড় ছেলেই সম্রাট হত ইনকা অভিজাতদেরও কাউন্সিল ছিল তারা সাম্রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত সমস্যা হলে সম্রাট প্রধান পুরোহিত এর যিনি সাধারনত সম্রাটের আত্বীয় ছিলেন এই চাচা কি বা অন্যকোন আত্মীয় যুদ্ধ পরিকল্পনায়
সেনাপতিরা সেনাপতিও বন্ধু কি আত্মীয়ই হত সম্রাটের ইনকা যোদ্ধারা অন্য নগর আক্রমন করে জয় করলেও স্থানীয় শাসনকর্তাকে হত্যা করত না যদি সে শাসনকর্তা ইনকা আইন মেনে চলত, বিদ্রোহ না করত, কর দিত আর শষ্য ভান্ডার মজুদ রাখত

ইনকাদের পোষাক:
মানতাস
ইনকারা পোশাক তৈরি করত লামার উল দিয়ে সুতির কাপড়ও পড়ত অভিজাতরা ধাতু ঝুলিয়ে রাখত মেয়েরা একধরনের শাল পরত-নাম মানতাস নারীপুরুষ উভয়ই পরত স্যান্ডেল
ইনকাদের পোষাক
বসত বাড়ী:
সাধারন ইনকাদের বাড়ি
সাধারন ইনকাদের বাড়িগুলো হত ছোট সবাই একসঙ্গে থাকত যৌথপরিবার আর কি বাড়ি তৈরি করত পাথর মাটির ইট দিয়ে আর মেশাত ঘাসকাদা ধনীরা অবশ্য বড়সরো পাথরের সুন্দর প্রাসাদে বাস করত তাই তো হয়! এরাই ছিল উপত্যকার জমির মালিক
ধনী ইনকাদের বাড়ি


ইনকাদের বিয়ে সাদি :
বিয়েটাও ইনকাদের ভারি অদ্ভূত ২০ বছরের আগেই ছেলেদের মেয়ে চয়েস করতে হত নইলে তার জন্যই মেয়ে দেখত গার্জেনরা কোনও কোনও মেয়েকে ছোট থাকতেই বাগদত্তা হতে হতবিয়ের দিন বর কনের হাত ধরে চন্দন বিনিময় করত এরপর ভোজ নতুন দম্পতিকে অন্যরাই ঘরদোর তুলে দেয় যতক্ষন না তারা নিজের পায়ে না দাড়াচ্ছে
ইনকাদের বিয়ে সাদি

ইনকাদের ধর্ম :
বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল ইনকারা ভিরাকোকা ছিলেন প্রধান দেবতা তিনিই ছিলেন ইনকাদের স্রষ্টা
ভিরাকোকা  প্রধান দেবতা
দেবতার নাম ছিল ইনতি ইনি ছিলেন সূর্যদেব ইনকাদের বলা হয়: "সূর্যের সন্তান" ইনকা শব্দটি এসেছে এই ইন্তি শব্দ থেকেই ইনকারা সূর্যপূজক বলেই উচুঁ পাহাড়ের ওপর তৈরি করত পাথরের মঞ্চ ইনতিহুয়াটানা
পাহাড়ের ওপর তৈরি করত পাথরের মঞ্চ ইনতিহুয়াটানা
  ইনকারা ছিল ধর্মপ্রাণ তারা ভাবত যেকোনও মুহূর্তেই অমঙ্গল হতে পারে কাজেই পুরোহিতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল ইনকা সমাজে ইনকা সমাজে নারীপুরোহিতও ছিল মেয়েরা ঋতুমতী হলে নারীপুরোহিতরা চুল আচড়ানো উৎসব করত মেয়েটি তখন নতুন নাম নিত সবচে সুন্দরী মেয়েটিকে পাঠানো হত কুজকোতে মেয়েটি রাজকন্যা বা সম্রাটের স্ত্রী হবে!
সবচে সুন্দরী মেয়েটিকে পাঠানো হত কুজকোতে



ইনকা সাম্রাজ্য
'কেচুয়া' নামক নেটিভ আমেরিকানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইনকা সাম্রাজ্য যা ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় তিনশ' বছর ধরে রাজত্ব করে গেছে ইনকা মূলত রহস্যময় সাম্রাজ্য তাদের কোন লিখিত তথ্য আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি বলে তাদের সম্বন্ধে আর্কেওলজিক্যাল নিদর্শন থেকে অনুমান করা হয় তাদের স্থাপত্যশৈলী আধুনিক মানুষকে ততটাই বিস্মিত করে যেমনটা করে মিশরের পিরামিড নির্মানশৈলী কেচুয়া জাতির শাসকদের মর্যাদা দেবতাতুল্য বলে তাদেরকে ইনকা বলা হত সূর্যদেবকে তারা ইনতি বলে ডাকত এবং সেই নামের প্রতিনিধিত্ব করত ইনকা শাসকগণ ইনকা সাম্রাজ্য একসময় বিস্তৃত ছিল বর্তমান পেরুর কুসকো ভ্যালি থেকে উত্তরে ইকোয়েডর এবং সুদূর দক্ষিণে বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা পর্যন্ত পেরুর কুসকো ভ্যালিকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হচ্ছে বর্তমান প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানকে ভিত্তি করে ইনকাদের সবচেয়ে স্টেট অব দ্য আর্ট নিদর্শন যা আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে তা হল মাচু পিচু - সমতল থেকে প্রায় একহাজার আটশ ফুট উপরে এক দুর্গ শহর ইনকাসাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল না সাম্রাজ্যের সময়কাল ১২০০ থেকে ১৫৩৩ ১৫৩৩ সালেই তো স্প্যানিশ লুটেরারা এল ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম মানকো কাপাক তিনি তার বংশধরের সময়েই ইনকা জাতি রচেছিল দক্ষিণ আমেরিকার বিস্ময়কর সভ্যতা ইনকারা ওদের রাজ্যকে বলত তাহুয়ানতিনসুইউ মানে চতুস্কোন ভূমি



মানচিত
পেরুর কুসকো ভ্যালি



ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম মানকো কাপাক



ইনকাদের নির্মাণশৈলী
ইনকাদের নির্মাণশৈলী খুবই নিখুঁত এবং সাদামাটা মিশরীয় ফিরাউনদের মত তাদের সম্রাটগণও ডেমিগড মর্যাদার অধিকারী ছিল ক্ষমতাধর ইনকা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় স্প্যনিয় দখলদারিদের আক্রমণে ১৫৩২ সালে এবং অনেক পরে তাদের ধ্বংসস্তুপ থেকে ইতিহাসের পাতায় তুলে আনেন একজন উত্তর আমেরিকান এক্সপ্লোরার হায়ারযাম বিংগাম (Hiram Bingham) ১৯১১ সালে হায়ারযাম বিংগাম তার ব্যক্তিগত ভ্রমন অনুসন্ধিৎসা থেকে চলতে চলতে মাচু পিচু দূর্গ নগরী  ইনকাদের শেষ আশ্চর্য নিদর্শন আবিস্কার করেন 
উত্তর আমেরিকান এক্সপ্লোরার হায়ারযাম বিংগাম
যখন তিনি প্রথম সে জায়গা খুঁজে পান তখন তিনি অনুমান করতে পারেননি যে তিনি একটা মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন কিন্তু তার সহজাত অনুসন্ধিৎসা তাকে আবার সেখানে ফিরে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে পেশাদার প্রত্নতাত্ত্বিকদের সহায়তায় তিনি ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া এই সভ্যতাকে আবিস্কার করেন ইনকা ভাল নির্মাতা গোষ্ঠী ছিল দূর্গ শহরের পাশাপাশি তারা প্রায় ১৪ হাজার মাইল রাস্তা নির্মাণ করেছিল পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে তাদের স্থাপত্যশৈলীও অসাধারণ মিশরীয়দের মত আজও কেউ বলতে পারে না তারা কীভাবে পাথর কেটে কেটে দেয়াল নির্মাণ করেছিল যা ভূমিকম্প সুরক্ষিত
দেয়াল
দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে পাথর কাটতে গিয়ে তারা আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি এমনকি এত সুবিশাল পাথর এত উঁচুতে তোলার জন্যই বা তারা কী পন্থা ব্যবহার করেছে তাও এক রহস্য পাথর নিখুঁতভাবে কেটে একের পর এক গেঁথে দেয়া হয়েছে কোনরকম মর্টারমিক্স তথা সিমেন্ট বা মাটি বা চুনের সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নির্মাণ প্রক্রিয়া তাই কিছু বিশেষজ্ঞের অনুমানভিত্তিক তত্ত্ব ছাড়া এক রহস্যই রয়ে গেছে
সুবিশাল পাথর গেঁথে দেয়াল নির্মাণ
ফ্রানসিসকো পিজারো
ইনকা সভ্যতার আলোচনায় স্প্যানিশ Conquistadores ফ্রানসিসকো পিজারোর নাম অনিবার্য লোকটার জন্ম ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের ত্রজিললোতে গরিব ঘরেই জন্ম লিখতে পড়তেও শিখেনি না শিখুক! তাই বলে এত খারাপ মানুষ হয় বিশ্বের খারাপ মানুষের তালিকা করলে প্রথম দশে থাকবে!যাক ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে স্পেন ত্যাগ করে হিসপানিওয়ালা (বর্তমানকালে হাইতি ডোমেনিকান রিপাবলিক) দ্বীপে বাস করে এরপর ১৫০৯ সালে কলোম্বিয়া অভিযানে অংশ নেয় আলোনসো দ্য ওদেজার অধীনে এরপর নানা ঘটনার পর লোকটা পৌঁছে পানামা এখানেই সে প্রথম দক্ষিণের স্বর্ণসমৃদ্ধ ভূখন্ডের কথা জানতে পারে ১৫২০ তে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পরপর দুটো অভিযান চালায় সময় সে ইনকাদের দেখতে পায় যাদের অনেকে পরনে সোনার অলঙ্কার সে লোভার্ত বোধ করে
ফ্রানসিসকো পিজারো

পিজারো ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র করে জাহাজ ভর্তি করে সোনাদানা, লামা স্থানীয় ইনকা বন্দি করে নিয়ে স্পেনে ফিরে আসে পিজারো স্পেনের রাজা তখন পঞ্চম চার্লস পিজারো স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লস কে সব খুলে বলে এবং পেরু জয় করে পেরুর শাসক হওয়ার অনুমতি চায় অনুমতি মিলল রাজা পঞ্চম চার্লস বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে অনুদানও দিলেনপিজারো সৈন্যসামন্ত যোগার করে ১৫৩২ পেরু ফিরে আসে ১৭৭ জন সৈন্য ৬২টি ঘোড়া নিয়ে পুবের কাজামারকা শহরে যাত্রা করেন কেননা, ইনকা সম্রাট তখন আটাহুয়ালপা তিনি ছিলেন কাজামারকা শহরে ইনকা সম্রাট আটাহুয়ালপা জানলেও স্বাধীনভাবে ঘোরা অনুমতি দেন সম্ভবত তিনি পিজারো ঈশ্বর ভেবেছিল সূর্যের সন্তান
ইনকা সম্রাট  আটাহুয়ালপ

যা হোক ১৫৩২ সালের ১৫ নভেম্বর পিজারো শহরে পৌঁছে সে খোলা চত্তরে আটাহুয়ালপা ইনকা অভিজাতদের ভোজে নিমন্ত্রন করে পরের দিন অর্থাৎ ১৬ তারিখ প্রায় নিরস্ত্র আটাহুয়ালপা ইনকা অভিজাতদের এলেন স্পেনিয়রা পিজারোর নির্দেশে বর্শা, তরোয়াল, ক্রশবো অ্যারাবেক্স নিয়ে বিস্মিত অতিথিদের ঘিরে ফেলে তারপর. আধ ঘন্টার ভিতর সবাইকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে
ক্রশবো
  পিজারো ইনকা সম্রাট আটাহুয়ালপাকে জীবিত রাখে উদ্দেশ্য? মুক্তিপন আদায়
সম্রাট আটাহুয়ালপা জীবনের বিনিময়ে এক বড় ঘর ভর্তি স্বর্ণ আর দুটো ছোট ছোট ঘর ভর্তি রুপা দিতে রাজি হলেন সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজাতরা এসে সেসব ঘর সোনাদানায় পূর্ন করলসে সম্পদের পরিমান নাকি আজকের দিনে ১০০ মিলিয়ন দক্ষিন আমেরিকাজুড়ে তারা সংগঠিত করে অবাধ লুন্ঠন- সে লুন্ঠনকৃত মালামালের পরিমান এতই অধিক পরিমানে ছিল যে- ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই নাকি গিয়েছিল বদলে! সে অপরিমেয় ধনসম্পদ ছিল ইনকাদের  সম্পদ পেয়ে পিজারো সম্রাট আটাহুয়ালপা কে খুন করে! পিজারো এরপর পেরুর আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী কুজকো করতলগত করে কেউই বাধা দেয়নি পিজারো কুজকো লুন্ঠন শেষে ইনকাদের দাসে পরিনত করে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিমা নামে নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করে পিজারো সেখান থেকেই পেরু শাসন করে লিমা শহরের প্রতিষ্ঠা করে এর পর স্পেনিয়দের মধ্য শুরু হয় তীব্র বিরোধ অর্ন্তদ্বন্দ এরই পরিনামে ১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে পিজারো ৬৬ বছর বয়েসে লিমায় নিজ প্রাসাদে খুন হয়
পেরু , লিমা শহর

কিপু
মাচু পিচু দূর্গ নগরী ইনকাদের অন্যতম প্রধান বসতি
মাচু পিচু দূর্গ নগরী মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত ছিল বলে তা একসময় হারিয়ে যায় মানুষের মন থেকে সুবিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্য কয়েকজন ইনকা সম্রাটের অধীন ছিল তারা হলেন টুপাক, ওয়াইনা কাপাক পাচাকুটেক আবিস্কৃত প্রাচীন মাচু পিচু নগরী যা বর্তমানে পেরুর আন্ডিজ পর্বতমালায় অবস্থিত তা মূলত পাচাকুটেক সম্রাটের দূর্গ শীতকালিন নগরী ছিল বলে অনুমান করা হয় আন্ডিজ হিমালয়, আল্পস্ রকির মত দক্ষিণ আমেরিকার পর্বতমালা (mountain range)
মাচু পিচু
ইনকা সভ্যতা সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে তার সবটুকুই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা তাই মাচু পিচু নগরী এখনও এক রহস্যময় নগরী ইনকাদের কোন লিখিত দলিলাদি পাওয়া যায়নি তারা তাদের ধনসম্পদের হিসেব রাখত মূলত এক সারি দড়িতে গিট পাকিয়ে এই এক সারি দড়ির প্রান্তগুলো আবার একটা দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় এগুলোকে কিপু বলা হত এভাবে গণনা করার জন্য দড়ির বিভিন্ন গিটের বিভিন্ন অর্থ ছিল বলে মনে করা হত যার অর্থ ইনকা জাতির সাথেই হারিয়ে গেছে একটা গিট থেকে অপর গিটের দূরত্ব এবং দড়ির রঙ ভিন্ন অর্থবোধক ছিল বলে অনুমান করা হয়
কিপু


ইনকাদের স্বর্ণ রৌপ্যের ব্যবহার
স্বর্ণ রৌপ্যের ব্যবহার
ইনকাদের স্মৃতি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রহস্য হয়ে থাকার কারণ তাদের অধিক পরিমানে স্বর্ণ রৌপ্যের ব্যবহার
স্বর্ণ রৌপ্যের ব্যবহার 2
স্প্যানীয় দখলদাররা নেটিভ আমেরিকানদের আক্রমণ তাদের দেশ দখল করার কারণ স্বর্ণ রৌপ্যের লোভ
স্বর্ণ রৌপ্যের ব্যবহার 3
সেজন্য মনে করা হয় ইনকাদের স্বর্ণ রৌপ্যের ঐতিহ্যই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল একই কারণে তাদের বিভিন্ন নিদর্শন স্প্যানীয়দের দ্বারা লুট হয়ে যাওয়া সেগুলোর স্বর্ণ রৌপ্য গলিয়ে ফেলার কারণে ইনকাদের সম্বন্ধে অনুমান করা আরও দূরূহ হয়ে পড়ে স্বর্ণের প্রতি ইনকাদের আগ্রহের আরেকটি কারণ ছিল তারা স্বর্ণকে সূর্য দেবের প্রতীক ভাবত তাদের মন্দিরগুলোতে তাই স্বর্ণের ব্যাপক ব্যবহার ছিল ইনকারা ছিল আদ্যপান্ত রোম্যানটিক যারা বিশ্বাস করত রুপা হল চাঁদের কান্না আর স্বর্ণ হল সূর্যের ঘাম ।
পিজারোর আগমনের কিছু আগে থেকেই এই পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের অশনি সংকেত বেজে ওঠে যখন নিকটবর্তী প্যারাগুয়ে থেকে চিরিউয়ানো গোষ্ঠীর সৈন্যরা পর্তুগীজ দখলদার আলিক্সো গার্সিয়াকে নিয়ে প্রথম তাদের আক্রমণ করে আনুমানিক ১৫২৫ সালের দিকে সেই আক্রমণ তারা প্রতিহত করেছিল তখন তখন থেকে স্প্যানিশ সৈনিকদের দ্বারা সিফিলিস, বসন্ত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে


সম্রাট টপা
মহামতি সম্রাট টপা ইনকা শাসন করেছেন ১৪৯৩ সাল পর্যন্ত তার পরে সিংহাসনে আসীন হন তার উত্তরসূরী সম্রাট ওয়াইনা কাপাক যিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে বেশ মনযোগী ছিলেন এর কিছুকালের মধ্যে ওয়াইনা কাপাক এবং তার নিয়োজিত উত্তরাধিকার মারা যান অজানা কারণে ধারনা করা হয় ইওরোপীয়দের আমদানীকৃত কোন সংক্রামক ব্যধিতে তাদের মৃত্যু হয় ওয়াইনা কাপাকের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে উয়াসকার আতাউয়ালপা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং ১৫৩২ সালে আতাউয়ালপা জয়ী হয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয় তাদের নিজেদের অন্তর্কলহের কারণে তারা ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল ইনকা সম্রাট পরাজিত হবার পর থেকেই সেখানে বস্তুত স্প্যানীয় শাসন শুরু হয় পরবর্তী বছরগুলোতে স্প্যানীয়রা তাদের উপর জোর জুলুম সহ ইনকা সভ্যতার বড় বড় স্থাপত্য, মন্দির বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয় ইনকা সভ্যতার নিদর্শনসমূহ যা মূলত মূল্যবান ধাতুতে গড়া ছিল তা তারা গলিয়ে ফেলে স্বর্ণ-রৌপ্যের লোভে
সম্রাট 



ইনকা সম্রাট

 
বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা
ইওরোপীয়দের দখলদারীর প্রায় একইরকম সংস্কৃতি লক্ষ করা যায় এখানেও বাঙলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত হত্যা করার পর ইংরেজরাও যেমন পুতুল শাসক দিয়ে দেশ চালানোর মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে তেমনি ফ্রান্সিসকো পিজারো ইনকা সাম্রাজ্যের ধারাবাহিকতা বজায় আছে এমনটা দেখাতে আতাউয়ালপাকে হত্যা করার পর তার আরেক ভাই মানকো কাপাককে সিংহাসনে বসায় ইতিমধ্যে লুটেরা স্প্যানিশদের মধ্যে স্বর্ণরৌপ্যের ভাগাভাগি নিয়ে হাঙ্গামা বাধে মানকো তাদের এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভিলকা বাম্বায় আশ্রয় নেয় এবং নতুন রাজধানী পত্তন করে, ভিলকা বাম্বা 
বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা

ভিলকা বাম্বা : 
ভিলকা বাম্বা  থেকে মানকো স্প্যানিশ রেজিমের বিরুদ্ধে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করত এভাবে কয়েক দশক স্প্যানীয়দের সাথে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করার পর প্রায় চল্লিশ বছর পর ১৫৭২ সালে স্প্যানীয়রা ভিলকা বাম্বার অবস্থান খুজেঁ পায় এবং ভিলকা বাম্বাও তারা ধ্বংস করে দেয় মানকোর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ইনকা সম্রাট তার শহরের পতন ঘটে
পিজারোর সৈন্যরা ভিলকা বাম্বা ধ্বংস করলেও মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের উপত্যকায় নির্মিত মাচু পিচু তারা খুজেঁ পায়নি তাই মাচু পিচু অধরা অক্ষত থেকে যায় কিন্তু এর রহস্যের কোন কিনারা হয়নি আজও হয়তো ইনকাদের অস্তিত্বকে জানান দিতেই এই দূর্গ নগরী অক্ষত রয়ে গিয়েছিল কারণ পিজারো ভিলকা বাম্বার মন্দির থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ পাথুরে নগরী ধ্বংস করে ফেলেছিল তারা বেছে বেছে স্থানীয় লোকদের সকল ধর্মীয় তীর্থস্থানকে ধ্বংস করে যেহেতু ইনকা সভ্যতা বহু দেবদেবীর পূজা করত যে ধারনা ইওরোপীয়দের খ্রিস্ট ধর্মের একেশ্বরবাদের সাথে বেমানান ছিল বলে অনেকের অনুমান চারশ বছর পর ইনকাদের শেষ রাজধানী ভিলকা বাম্বা নগরীর খোঁজ করতে গিয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রভাষক হায়ারযাম বিংগাম ব্যক্তিগত অনুসন্ধিৎসার এক পর্যায়ে দুর্গম পর্বত শৃঙ্গের সরু উপত্যকায় মাচু পিচু নগরী খুজেঁ পান ১৯১১ সালে আবিস্কৃত মাচু পিচু মেঘের দেশের নগরী কী কারণে মাচু পিচু স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বা পরিত্যক্ত হয়েছিল তার কোন সঠিক তথ্য আজও অজানা রয়ে গেছে ইনকাদের কোন লিখন পদ্ধতি বা লিখিত দলিলাদি পাওয়া না যাওয়া এই রহস্যের অন্যতম কারণ
মাচু পিচু

 
হাইরাম বিংগাম :
হায়ারযাম বিংগাম মাচু পিচু আবিস্কারের আগে ১৯০৯ সালে ভিল্কা বাম্বা তথা এসপিরিতু পাম্পা খুঁজে পান তবে যেহেতু সম্রাট মানকো কাপাকের পতনের সাথে সাথে স্প্যানীয়রা রাজধানী ভিলকা বাম্বা জ্বেলেপুড়ে ছাই করে দেয় তাই বিংগাম রাজধানী বলে ধরে নেননি এসপিরিতু পাম্পাকে হায়ারযাম বিংগাম তার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখেন এবং ১৯১১ সালে মাচু পিচু আবিস্কার করেন এবং মাচু পিচুকে ভিলকা বম্বা বলে ভুল করেন তিনি
ভিনসেন্ট লি :
১৯৮০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক জিন সেভয় ভিনসেন্ট লি জন হেমিং এর গবেষণা থেকে অনুমান করা হয় ইনকাদের এসপিরিতু পাম্পা ছিল শেষ মুক্তিযোদ্ধা মানকো কাপাকের রাজধানী ভিলকা বাম্বা মাচু পিচু থেকে এসপিরিতু পাম্পা তথা ভিলকা বাম্বার দূরত্ব আনুমানিক আরও ৫০ মাইল (যাতায়াতের রাস্তার দূরত্ব নয়) পশ্চিমে সুউচ্চ বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত পার্বত্য উপত্যকায়
কেউ কেউ মনে করেন মাচু পিচু কোন সম্রাটের নিজস্ব এস্টেট ছিল, কারও মতে এটা জেলখানা ছিল বা পবিত্র নারীদের স্যাংচুয়ারি ছিল মাচু পিচু ছিল জোতির্বৈজ্ঞানিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কেউ বলেন এটা ছিল যুদ্ধের জন্য স্ট্র্যাটেজিক্যালি ইমপর্ট্যান্ট গ্যারিসন যা ব্যবহৃত হত সম্রাটের গোপন রিট্রিট বা পিছু হটে পালিয়ে থাকার জায়গা হিসিবে এক্ষেত্রে মনে করা হত পরাক্রমশালী সম্রাট পাচাকুটি তার রিট্রিট হিসেবে মাচু পিচু নির্মাণ করেছিলেন আনুমানিক ১৪৫০ সালের দিকে মহামতি পাচাকুটি ১৪৩৮ সালে ক্ষমতায় আসীন হন পাচাকুটি ছিলেন ইনকাদের সবচেয়ে পরাক্রমশালী সম্রাট Quechua জনগণ মনে করত পাচাকুটির জন্ম হয়েছিল ইনকা সাম্রাজ্য শাসন করার জন্য পাচাকুটি সম্রাট ছিলেন, উপরন্তু জনগণের আধ্যাত্মিক গুরু বা গডফাদারও ছিলেন তিনি
মাচু পিচু কোন সম্রাটের নিজস্ব এস্টেট ছিল
নির্মাণশৈলী  অ্যাসলার

মাচু পিচুর নির্মাণশৈলী  অ্যাসলার :
মাচু পিচু নগরকে বর্ণনা করতে প্রথমত দুভাগে ভাগ করে নেয়া যায় কৃষি প্রান্ত নগর প্রান্ত
মাচু পিচুর বেশির ভাগ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে আয়তকার পাথরের খণ্ড কোন প্রকার চুন, সিমেন্ট বা মাটির গাঁথুনি ছাড়াই পর পর গেঁথে এভাবে স্বাধীনভাবে পাথর গেঁথে নির্মাণশৈলীকে অ্যাসলার(ashlar)  বলে অ্যাসলার ছাড়াও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে মাচু পিচুতে যা মাটির গাঁথুনি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে অ্যাসলার তৈরিতে ইনকা জনগণ ছিল ওস্তাদ কারিগর এটা তাদের নির্মাণ শিল্পের বিশেষত্ব
নির্মাণশৈলী  অ্যাসলার 1
দেয়ালগুলো ভিত্তি থেকে উপরের দিকে কিছুটা সরু হয়ে উঠেছে ফলে দেয়ালগুলো সোজা খাড়াভাবে তৈরি না হয়ে একটু হেলানোভাবে তৈরি হয়েছে প্রক্রিয়ায় পাথরের ব্লকগুলোর বাইরের দিকটা মসৃণ করা থাকে ভেতরের দিকটা বেশির ভাগ অমসৃণ হয় একটা পাথরের সাথে আরেকটা পাথর এমনভাবে খাপ খাওয়ানো হয়েছে যে একটা চিকন ছুরিও দুটো পাথরের মাঝখানে প্রবেশ করানো সম্ভব না পেরু খুবই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা স্থাপনাগুলোই বরং ভূমিকম্পে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কোন মর্টার ছাড়া তৈরি পাথরের ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী পেরুর কুসকো শহরে ইনকা আমলের কিছু স্থাপনা এখনও টিকে আছে যেগুলো অ্যাসলার ব্যবহার করে তৈরি দরজা জানালাগুলো ঘরের ভেতরের দিকে খানিকটা হেলানো দেয়ালো বাইরের কোনগুলোয় রোমান L অক্ষরের মত কাটা পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে ভেতরের কোনাগুলো ততটা তীক্ষ্ণ নয় পাথর কাটায় লোহার যন্ত্রপাতি বা পাথর ওঠানামায় দড়ি, চাকা, কপিকলের ব্যবহারের কোন চিহ্ন না পাওয়ায় তাদের নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে রহস্য ঘণীভূত হয়েছে
নির্মাণশৈলী

মাচু পিচু নগরীতে ১৪০ টি পাথরের স্থাপনা রয়েছে বাসস্থান, মন্দির, স্যাংচুয়ারি (ধর্মীয় পবিত্র উপকরণ রাখার জন্য), পার্ক ইত্যাদি এসব স্থাপনার অন্তর্গত একশ'টার মত সিঁড়ি আছে এখানে, যার কোন কোনটা সবগুলো ধাপসহ একটামাত্র গ্র্যানাইট কেটে বানানো ১৬ টি পানির ঝরণা দিয়ে সম্পূর্ণ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে যেগুলো তৈরি করতে পাথর ছিদ্র করে পানির পথ করতে হয়েছে
পানির ব্যবস্থা
১৬ টি পানির ঝরণা দিয়ে সম্পূর্ণ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে যেগুলো তৈরি করতে পাথর ছিদ্র করে পানির পথ করতে হয়েছে

 
পানির ঝরণা

প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে মাচু পিচুর নগর প্রান্তে তিনটি ভাগ ছিল সেগুলো হল
পবিত্র এলাকা
বসতি এলাকা
উচ্চপদস্থ পাদ্রীদের এলাকা
ট্রেনে যাওয়া যায় মাচু পিচু :
সময় বদলেছে অনেক কিছুই বদলেছে এখন কুসকো থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় মাচু পিচু এই টেন লাইনটি পৃথিবীর উচ্চতম ট্রেন লাইন কুসকোর সান পেদ্রো ট্রেন স্টেশন থেকে (৭০ মাইল) ট্রেনে প্রায় চার ঘন্টার ভ্রমন
ট্রেনে যাওয়া যায় মাচু পিচু



ইনকা মেয়ের দেহ বরফের আস্তরণে ৫০০ বছর :

১৯৯৯ সালে আর্জেন্টিনার আগ্নেয়গিরি ইলুলায়লানোর চূড়ায় এক ইনকা মেয়ের দেহ পাওয়া যায় বিজ্ঞানীরা মেয়েটির নাম দেনকুমারি আগ্নেয়গিরিটির ৬৭৩৯ মিটার উচু চুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযান চলার সময় মেয়েটির দেহ পাওয়া যায় বরফের আস্তর দিয়ে মেয়েটির দেহ পুরোপুরি সংরক্ষণ করা ছিল উদ্ধারের পরে দেখে মনে হচ্ছিল, মেয়েটি যেন এখনই মারা গেছে কিন্তু সত্য হলো মেয়েটি ৫০০ বছর আগেই মারা গেছে বেঁচে থাকলে সময় কুমারির বয়স হতো ৫৩১ বছর ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটিকে ইনকা দেবতাদের সাথে থাকতে নির্বাচিত করা হয়েছিল আসলে দেবতাদের উদ্দেশ্যে ইনকারা এই মেয়েটিকে বলি দিয়েছিল

ইনকা মেয়ের দেহ বরফের আস্তরণে ৫০০ বছর


৫০০ বছর ধরে সংরক্ষিত চুলের প্রোটিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা মেয়েটির খাদ্যাভাস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন পরীক্ষায় তারা আরো জানতে পারেন, বলি দেওয়ার আগে মেয়েটিকে মাসাধিক কাল কিংবা বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচুর খাবার খাওয়ানো হতো ফলে মেয়েটি বেশ স্বাস্থ্যবতী ছিল
ইনকারা তাদের কোনো বিশেষ পার্বণের পর শিশুবলি দিত এটা তাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ ছিল ইনকা দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা শিশুদের কোনো উচু পাহাড়ের চুড়ায় নিয়ে যাওয়া হতো পাহাড়ের চুড়ায় যাওয়ার পথে তাদের কোকো গাছের পাতা খাওয়ানো হতো আর বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের কোনো মাদকরস পান করানো হতো মাদকে শিশুটি আচ্ছন্ন হয়ে গেলে, ইনকা পুরোহিত শ্বাসরোধ করে কিংবা মাথায় আঘাত করে শিশুটিকে হত্যা করতো কখনো কখনো তারা শিশুটিকে শীতলমৃত্যুর জন্য বরফের আস্তরের ওপর ফেলে রেখে যেত আমাদের এই লেখারকুমারি ভাগ্যেও সম্ভবত এমন কিছুই ঘটেছিল
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, বলি দেওয়ার সময়কুমারি শরীর ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ছিল তারা বলছেন, মেয়েটি যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিল তার ঠোঁট থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, এবং এখনখার রোগাক্রান্ত মানুষের সাথে এই নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার নতুন ধরণের কোনো রোগ-বালাইয়ের ওষুধ তৈরিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সমূহ সহায়তা করবে
সুতরাং আমরা এখন বলতেই পারি, ৫০০ বছর পূর্বে কুমারি বলি দেওয়া একেবারে উচ্ছন্নে যায়নি মৃত্যুর অর্ধ-সহস্রাব্দ পর মানুষের মঙ্গলে কুমারি সংরক্ষিত কাজে লাগছে


ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপার সমাধি :
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বনে পাওয়া গেছে এক প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ধারণা করা হচ্ছে এটি ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপা সমাধিকে ঘিরে নির্মিত ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে শত শত বছর ধরে আড়ালে থাকা রহস্যের দ্বার উন্মোচন হবে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা
সম্রাট আতাহুয়ালপার ছিলেন ইনকাদের শেষ সম্রাট স্বর্ণের লোভে তাকে স্প্যানিশ উপনিবেশকারীরা হত্যা করে নতুন এই আবিষ্কারকে মিশরের ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি, রোজেটা স্টোন কিংবা চীনের টেরাকোটা আর্মির মতো আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে
ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপার সমাধি
স্বর্ণের ব্যবহার মজুদের জন্য প্রাচীনকাল থেকে ইনকা সভ্যতা উপনিবেশকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো সম্রাট আতাহুয়ালপা শাসনকালে স্প্যানিশরা ইনকাদের দেশ দখল করে নেয় স্থানীয় অধিবাসীরা স্বীকার হয় নির্মম অত্যাচারের নতুন এই আবিষ্কার হয়তো সেসব কথাও বলবে
স্থাপনাটি ইকুয়েডরের বানোস ডি আগুয়া সান্তা শহর থেকে ২০ মাইল দূরে আন্দিজ পর্বতমালার ল্যাংগানেটস ন্যাশনাল পার্কের কাছে অবস্থিত ধারণা করা হচ্ছে স্থাপনাটি ১৫৫৩ সালে নির্মিত স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ উচ্চতায় সমান ভারসাম্য রাখা হয়েছে সবদিক থেকে এটি ২৬০ ফুট, ব্যবহার করা হয়েছে টন ওজনের শত শত পাথর
ইতোমধ্যেই ওই স্থানে ৩০টির মতো শিল্পনিদর্শন পাওয়া গিয়েছে যারা এই খননকাজের সাথে সম্পৃক্ত তাদের অধিকাংশের ধারণা এটা সম্রাট আতাহুয়ালপা অন্তিম শয়ানের স্থান সাধারণত ধরনের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে থাকে ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার
ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপার সমাধি
হাতে বানানো স্থাপনাটি বেশ বড় জায়গা জুড়ে বিস্তৃত খুব সম্ভবত স্থাপনাটি ইনকাদের কোনো নগর চত্ত্বরে অবস্থিত এর দেয়াল ৬০ ডিগ্রি কোণে বেঁকে উপরে উঠেছে আর ছাদের অংশটি ছিল সমতল খুব সম্ভবত এটা ব্যবহার করা হতো শিরশ্ছেদের জন্য, যেখানে মানুষের মাথা কেটে ফেলা হলে সেটা এই স্থাপনার ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যেত
এর আগে গবেষকরা হন্য হয়ে খুঁজছিলেন সম্রাট আতাহুয়ালপা সমাধি নতুন এই আবিষ্কারে ফ্রেঞ্চ-আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদের কণ্ঠে তাই ঝরে পড়ছে উত্তেজনা, ‘হয়তো এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইকুয়েডর ইংল্যান্ডের প্রত্নতত্ত্ববিদদের নিয়ে গঠিত দলের বিশ্বাস, সম্ভবত ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব সালে সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল যদিও ইনকাদের সময়কালের ইতিহাস এখনো আঁধারে ঢাকা জায়গাটি এখনো অনেক দুর্গম ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বিপদজনক ইকুয়েডরের সরকার খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে
(তথ্যসূত্র ইন্টারনেট)




 



কোন মন্তব্য নেই: